অন্তর নরম করার ১২ উপায়
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আমাদের অন্তর সমূহে মনের পাষণ্ডতা ও কাঠিন্যকে দূর করে এবং মনকে নরম-কোমল ও দয়ালু হতে সাহায্য করে:
✅১) মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং তাঁর বিশাল ক্ষমতা, অগণিত নেয়ামতরাজি, অফুরন্ত দয়া, ভয়াবহ শাস্তি ইত্যাদি স্মরণ করে সকাল-সন্ধ্যা ও জীবনের প্রতি মুহূর্তে তার জিকির করা এবং তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
✅২) কুরআন তিলাওয়াত করা, বুঝে পড়া এবং কুরআনের হুকুম-আহকাম, নিদর্শনাবলী নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা এবং তদনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।
✅৩) আখিরাতের কথা চিন্তা করা: জান্নাতের সুখ-সম্ভার, হাশরের ময়দান ও জাহান্নামের ভয়াবহ চিত্র মনের ক্যানভাসে জাগ্রত করা এবং মৃত্যু ও কবরের শাস্তি নিয়ে ভাবা।
✅৪) রোগ-শোক ও দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত, নানা কষ্টে নিপতিত এবং বিভিন্ন বিপদগ্রস্ত মানুষদেরকে দেখা এবং নিজের অবস্থা বিবেচনা করে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা পোষণ করা।
✅৫) অধিক পরিমাণে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা: মৃত্যুর স্মরণ পাপীকে পাপাচার থেকে নিবৃত করে এবং কঠিন অন্তরের মানুষের অন্তর নরম করে দেয়।
📚আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:⤵
أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَادِمِ اللَّذَّاتِ يَعْنِي الْمَوْتِ
“তোমরা অধিক পরিমাণে আনন্দ বিধ্বংসী বিষয় তথা মৃত্যুর কথা স্মরণ কর।” (সুনান তিরমিযী, সহীহুল জামে, হাদিস নং ১২১০)
✅৬) কবর যিয়ারত করা: মৃত্যুর কথা স্মরণ করাতে সবচেয়ে বেশী কার্যকর উপায় হল, কবর যিয়ারত করা। এতে এক দিকে যেমন নিজের মৃত্যু ও আখিরাতের কথা সরণ হয় অন্য দিকে নিজের দুর্বলতা, অন্তিম পরিস্থিতি ও পরিণতির কথা মনে জাগ্রত হয়। এতে অন্তর বিগলিত হয়।
✅৭) মারাত্মকভাবে আহত, দুরারোগ্য ব্যাধিতে পতিত, শয্যাশায়ী ও বিভিন্ন বিপদাপদে পড়ে সর্বস্বান্ত মানুষগুলোকে দেখতে যাওয়া।
✅৮) এতিম ও অসহায় মানুষের সাহায্যে কাজ করা।
✅৯) আমলদার ও তাকওয়াবান আলেমদের সাথে সংশ্রব রাখা এবং খারাপ ও পাপী লোকদের সংশ্রব এড়িয়ে চলা।
✅১০) অতিরিক্ত খাওয়া, ঘুম ও কথা এবং মাত্রাতিরিক্ত লোকজনের সাথে সংশ্রব থেকে দূরে থাকা।
✅১১) অন্তর নরম করে এমন বই-পুস্তক পড়া, পড়া বা বড় আলেমদের বক্তৃতা শ্রবণ করা। যেমন: কবরের আযাব, হাশরের ময়দানের বিভিষিকাময় চিত্র, জাহান্নামের বিবরণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের দ্বীনের জন্য অবর্ণনীয় ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং তাদের যুহুদ বা অনাড়ম্বর জীবন কাহিনী ইত্যাদি।
✅১২) সর্বোপরি মহান আল্লাহর কাছে অন্তরের কাঠিন্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা।
📚রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্তরের নিষ্ঠুরতা থেকে আল্লাহ নিকট আশ্রয় চাইতেন এভাবে:⤵
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَالْهَرَمِ وَالْقَسْوَةِ وَالْغَفْلَةِ وَالْعَيْلَةِ وَالذِّلَّةِ وَالْمَسْكَنَةِ
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য, নিষ্ঠুরতা, গাফিলতি, অভাব-অনটন, হীনতা, নিঃস্বতা থেকে আশ্রয় চাই।” (সহীহ জামিউস সগীর)
📚তিনি আরও বলতেন:⤵
لَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই এমন ‘জ্ঞান থেকে যা উপকার দেয় না, এমন হৃদয় থেকে যা বিনম্র হয় না, এমন আত্মা থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই যা কবুল হয় না।”(মুসলিম ২৭২২)
পরিশেষে দুআ করি, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের অন্তরকে কঠিন হওয়া থেকে হেফাজত করেন এবং অন্তরকে এমন নরম করেন যার মাধ্যমে আমরা তাঁর আনুগত্যের উপর পরিচালিত হতে পারি। আমীন।(collected)