এমন অনেক লাশ কবরে শায়িত আছে
এমন অনেক লাশ কবরে শায়িত আছে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, ‘কাল থেকে নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করবো’। আফসোস! সে সুযোগ তারা পায় নি। আগামিকাল আর তাদের জীবনে আসে নি। এরপরও আপনি আগামিকালের অপেক্ষায় থাকবেন? এখন, এই মুহুর্তে অজু করে দুই রাকাত তাহিয়াতুল অজুর নামাজ আদায় করে পরবর্তী ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, অজু করার পর যদি কেউ দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে তবে তার জীবনের পূর্বেকার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। হজরত ওসমান ইবনে আফফান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার অজুর মতো অজু করে (একাগ্রতার সহিত) দুই রাকাআত নামাজ পড়বে এবং এ সময় অন্তরে অন্য কোনো ধারনা উদয় হবে না বা কোনো কথা বলবে না। তাহলে তার পূর্বেকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, নাসাঈ, বাইহাকি, ইবনে হিব্বান)। হযরত ওকবা ইবনে আমের জুহানী রদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত আছে নবী করীম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি ওজু করার পর একাগ্রতা ও আল্লাহর দিকে মনকে ধাবিত করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব করে দেবেন। (নাসায়ী শরীফ)। আবু হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন ফজরের নামাযের পর বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণের পর তোমার এমন কি আমল আছে যার বিনিময়ে তুমি পুরস্কৃত হওয়ার আশা রাখ? কেননা আজ রাতে আমি জান্নাতে আমার সামনে তোমার চলার শব্দ পেয়েছি। বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি এর চেয়ে অধিক কোন আমল তো দেখছি না যে, দিনে বা রাতে যখনই আমি অজু করি তখনই যতটুকু আল্লাহ তাওফিক দেন ততটুকু নফল সালাত আমি আদায় করি (বুখারি ও মুসলিম) । কে জানে এ দু’রাকাত নামাজের কারণে কিংবা জামায়াতের সাথে নামাজ আদায়ের কারণে মহান আল্লাহ আপনার ওপর খুশি হয়ে আপনার সকল গুণাহ ক্ষমা করে আপনাকে জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত করে দিবেন না? আল্লাহ ক্ষমাশীল। তিনি ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন। তিনি বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর যুলুম করেছো তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (সূরা যুমার : ৫৩) । বনী ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)। পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ অসংখ্যবার বলেছেন “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করে দেন”। আবূ হুরাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: একটি গাছ মুসলমানদেরকে কষ্ট দিতেছিল। তখন একব্যক্তি এসে তা কেটে দিলো। এর বিনিময়ে সে জান্নাত লাভ করলো’ (মুসলিম)। অন্য হাদিসে আছে, রাসূল(সাঃ) বলেন, ‘আমি জান্নাতে একজন পুরুষকে খুশিতে গড়াগড়ি খেতে দেখেছি, কারণ সে চলার পথের একটা গাছ কেটে ফেলেছিল যা মুসলিমদের কষ্ট দিত’। একটি কুকুরকে পানি পান করানোর কারনে আল্লাহ একজনকে জান্নাত দিলেন। আবূ হুরায়রারদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (পূর্ব যুগে) জনৈক ব্যক্তি একটি কুকুরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ভিজা মাটি চাটতে দেখতে পেয়ে তার মোজা নিল এবং কুকুরটির জন্য কুয়া হতে পানি এনে দিতে লাগল যতক্ষণ না সে ওর তৃষ্ণা মিটাল। আল্লাহ এর বিনিময় দিলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন’ (বুখারী)।
বিশ্বাস রাখবেন মহান আল্লাহর দয়া-ক্ষমার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। পৃথিবী হতে যত মানুষ বিদায় হয়েছে, যত মানুষ এখন আছে এবং কিয়ামত অবধি যত মানুষ আসবে তাদের সকলের অন্তর আর কল্পনা শক্তি একত্রিত করা হলেও মহান রব এর দয়া ও ক্ষমার বিন্দুমাত্র তারা অনুমান করতে সক্ষম হবে না। আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, তুমি যা-ই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দিবো, আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ্ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিবো। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ্ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে (আখিরাতে) সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো’ (তিরমিযী) । আল্লাহর ক্ষমাকে কেউ যদি সীমিত করার চেষ্টা করে তার বিষয়ে মহান রব ফয়সালার বয়ান শুনুন। মযম বিন জাওস আল-ইয়ামামী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) আমাকে বললেন, হে ইয়ামামী! তুমি অবশ্যই কোন লোককে বলবে না যে, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না বা আল্লাহ তোমাকে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! যখন আমাদের কেউ রাগান্বিত হয়, তখন সে তার ভাই বা সাথীকে এরূপ কথা বলে থাকে। আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, তুমি এমন কথা বলবে না। কারণ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলে দু’জন লোক ছিল। তাদের একজন অত্যন্ত ইবাদতগুযার ছিল। অন্যজন ছিল নিজের প্রতি যুলুম করে পাপে লিপ্ত। কিন্তু তাদের একে অপরের মধে গভীর সম্পর্ক ছিল। ইবাদতগুযার ব্যক্তি তার অপর সাথীকে সর্বদা অপকর্মে লিপ্ত থাকতে দেখে বলত, তুমি পাপ কাজ থেকে বিরত থাকো। উত্তরে সে বলত, আমাকে আমার প্রভুর উপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার হিসাবে পাঠানো হয়েছে? ইবাদতগুযার ব্যক্তি একদিন তাকে এমন গুনাহে লিপ্ত হতে দেখল যা তার কাছে বড় গুনাহ মনে হল। তখন সে তাকে বলল, তোমার জন্য আফসোস! তুমি পাপ কাজ থেকে বিরত থাকো। উত্তরে সে বলল, আমাকে আমার প্রভুর উপর ছেড়ে দাও। তোমাকে কি আমার উপর পাহারাদার হিসাবে পাঠানো হয়েছে? তখন সে বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তোমাকে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাদের উভয়ের নিকটে ফেরেশতা পাঠিয়ে তাদের জান কবয করার ব্যবস্থা করলেন। এরপর তাঁর নিকট তাদের একত্রিত করে ইবাদতগুযার ব্যক্তিকে বললেন, তুমি কি আমার রহমত সম্পর্কে জানতে? কিংবা তুমি কি জানতে আমার হাতে কি পরিমাণ ক্ষমতা রয়েছে? এরপর ফেরেশতাদের সম্বোধন করে বললেন, একে তোমরা জাহান্নামে নিয়ে যাও। আর পাপীকে বললেন, তুমি যাও এবং আমার রহমতের বরকতে জান্নাতে প্রবেশ কর। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, সে এমন কিছু উক্তি করেছে, যার মাধ্যমে সে তার দুনিয়া ও আখিরাত উভয় বরবাদ করেছে’ (আহমাদ, আবুদাঊদ হা/৪৯৭৫; ছহীহুল জামে)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদিসে বলেনে, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত বিজয়ী হয়েছে’ (বুখারী, মুসলিম)। আল্লাহ তাঁর রহমতের বারিধারায় কাকে সিক্ত করবেন এবং কার আমল তাঁর নিকট গৃহীত হবে তা তিনিই ভালো জানেন। আল্লাহর রহমত ব্যতীত কেবল স্বীয় আমল দ্বারা কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। এজন্য সর্বাস্থায় আল্লাহর রহমতের আশা নিয়ে সৎকর্ম করে যেতে হবে। কাল নয় এখন থেকেই তা শুরু করতে হবে।