আল্লাহ্ তা‘আলা কোরআনে পাকে এরশাদ ফরমান–
وَاِذَا اَخَذَ اللّٰہُ مِیْثَاقَ النَّبِیِّیْنَ لَمَا اٰتَیْتُکُمْ مِنْ کِتٰبٍ وَّحِکْمَۃٍ ثُمَّ جَآءَ کُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَکُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِہٖ وَلَتَنْصُرَنَّہٗ ط قَالَ اَاَقْرَرْتُمْ وَاَخَذْتُمْ عَلٰی ذٰلِکُمْ اِصْرِیْ ط قَالُوْا اَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْہَدُوْا وَاَنَا مَعَکُمْ مِّنَ الشَّاہِدِیْنَ o فَمَنْ تَوَلّٰی بَعْدَ ذٰلِکَ فَاُولٓءِکَ ہُمُ الْفَاسِقُوْنَ o
অর্থাৎ ‘‘হে প্রিয় রাসূল! আপনি স্মরণ করুন ওই দিনের কথা, যখন আল্লাহ্ তা‘আলা সমস্ত নবী থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন এ কথার উপর যে, যখন আমি তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করবো, অতঃপর তোমাদের কাছে আমার মহান রসূল তাশরীফ নিয়ে যাবেন এবং তোমাদের নুবূয়ত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য প্রদান করবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনবে এবং অবশ্যই তাঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা কি এসব কথার উপর অঙ্গিকার করছো এবং এ শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ?’ (তখন) তাঁরা সকলেই সমস্বরে বলেছিলেন, ‘আমরা অঙ্গিকার করছি।’ আল্লাহ্ বলেন, ‘তাহলে তোমরা পরস্পর সাক্ষী হয়ে থাকো। আর আমিও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী রইলাম। অতঃপর যে কোন লোক এ অঙ্গিকার থেকে ফিরে যাবে, সে হবে ফাসিক্ব (কাফির)।’ [সূরা আল-ই ইমরান: আয়াত: ৮১-৮২]
উপরিউক্ত দু’টি আয়াতের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে-
১. রূহানী জগতে মীলাদুন্নবীর আলোচনার জন্য নবীগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে; কারণ তিনি ওই সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
২. আল্লাহ্ তা‘আলা অন্যান্য নবীগণ থেকে নবী করীমের শানে অঙ্গিকার আদায় করেছেন।
৩. নবী করীমকে সর্বাবস্থায় পূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায় করা হয়েছে, এমনকি জীবনের বিনিময়ে ওই সাহায্য হতে হবে নিঃশর্তভাবে।
৪. তাঁর আগমন হবে অন্যান্য নবীগণের সত্যতার দলীল স্বরূপ।
৫. নবী করীমের পবিত্র জীবদ্দশায় কোন নবী জীবদ্দশায় থাকলে তাঁকে তাঁর শরীয়ত স্থগিত রেখে নবী করীমের উপর ঈমান আনতে হবে ও তাঁর উম্মতের মধ্যে শামিল হতে হবে।
৬. নবীগণের জীবদ্দশায় এ মহান নবীর আগমন হলে তাঁদেরকে তাঁর উপর ঈমান আনতে হবে।
৭. নবীগণও স্বীকারুক্তি প্রদান করেছেন।
৮. তাঁরা পরস্পর সাক্ষী হয়েছেন।
৯. সকলের উপর মহা সাক্ষী হয়েছেন খোদ্ মহান আল্লাহ্।
১০. এ ওয়াদা ভঙ্গকারীকে ফাসিক্ব তথা কাফির সাব্যস্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এতে নবীগণের উম্মত তথা ইহুদী ও খ্রিস্টানদের পরিণতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কেননা, নবীগণের অঙ্গিকার ভঙ্গের প্রশ্নই উঠে না।
বস্তুতঃ অস্বীকার ও অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছে ইহুদী ও খ্রিস্টানগণ। সুতরাং তারাই ফাসিক্ব ও কাফির।
এখানে আরো লক্ষণীয় যে, উপরিউক্ত আয়াত দু’টিতে রাসূলে পাকের রিসালতের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা‘আলা অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করেছেন, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে; কিন্তু আল্লাহ্র তাওহীদের ব্যাপারে মাত্র একবার ওয়াদা নিয়েছিলেন রোজে আযলে। সেখানে কোন তাকিদমূলক অঙ্গিকারও ছি بَلٰیলোনা এবং সাক্ষীও করা হয়নি। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-اَلَسْتُ بِرَبِّکُمْ আমি কি তোমাদের রব নই? সমস্ত বনী আদম তখন উত্তরে বলেছে- بَلٰی হ্যাঁ অবশ্যই। কেন নন?
তাওহীদের ক্ষেত্রে একবার অঙ্গিকার গ্রহণ আর রিসালতের ক্ষেত্রে বার বার অঙ্গিকার একথারই ইঙ্গিত বহন করে যে, তাওহীদের ক্ষেত্রে তেমন বিরোধ সৃষ্টি হবে না; কিন্তু রিসালতের ক্ষেত্রে বিরাট মতবিরোধ দেখা দেবে। কেউ মানবে, কেউ মানবে না। কারণ, নবী তো মানবীয় সূরতে যাবেন। তাঁর খাওয়া-দাওয়া চলাফেরা, উঠা-বসা, জাগতিক লেন-দেন মানুষের মতই হবে। এগুলো দেখে তাঁর নুবূয়ত ও রিসালত এবং তাঁর বিশেষ মর্যাদার কথা খুব কম মানুষই অনুধাবন করতে পারবে। তাই তাঁর সাথে অশালীন আচরণ করবে। এজন্যই নবী করীমের নুবূয়ত ও রিসালত সম্পর্কে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও তাঁর সমর্থন উল্লেখ করে আল্লাহ্ তা‘আলা দুনিয়াবাসীকে নবী করীমের শান-মান ও আগমনের গুরুত্ব উপলব্ধি করার প্রতি তাকিদ দিয়েছেন। মীলাদুন্নবীর মূল আলোচ্য বিষয় উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ পাক নিজেই বর্ণনা করে দিয়েছেন। আল্লাহর রবূবিয়াত অস্বীকারকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ্ এখানে নিজে কোন ফাতওয়া দেননি; কিন্তু নবী করীমের রিসালত ও শান-মান অস্বীকারকারীকে কাফির বলেছেন।