চল্লিশা,বার্ষিকী,কোরআন খানীর হুকুম কি?
আমল অর্থ কাজ (Activity)। আমল দু’ প্রকার।
০১. ভাল আমল বা নেক আমল, যাকে আমলে সালেহ্ও বলা হয়।
০২. মন্দ আমল বা বদ আমল, যাকে আমলে সাইয়্যিয়াহ্ও বলা হয়।
যেমনঃ পাক কালামে ইরশাদ হয়েছে,
مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزَىٰ إِلَّا مِثْلَهَا ۖ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ
চলুন একটু আগে বাড়ি…………………………………………………………
সুপ্রিয় পাঠক, ইসলামী শরীয়তের মৌলিক নীতিমালার আলোকে প্রমাণিত হয় যে, যদি লোক দেখানো উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে ফী সাবিলিল্লাহ্ যেকোন আমলে সালেহ সম্পাদনের জন্যে কর্মসূচি নির্ধারণ করে যে কোন প্রকার বা প্রকারে উক্ত আমলে সালেহ বা ফী সাবিলিল্লাহ্ আল্লাহর সন্তুষ্টির অভিপ্রায়ে উক্ত কাজ করা যায়।
ফী সাবিলিল্লাহ্ আমলে সালেহ্ যেমন প্রচলিত নগদ অর্থদান, কিংবা যেকোন প্রকারে দান অনুদান, কিংবা যেকোন প্রকার হালাল খাবার দান করা জায়েয আছে।
অনুরুপে নিজের কাছে বিশেষ কোন দিন, কিংবা শবে মেরাজ, শবে বরাত, শবে কদর, কিংবা সাপ্তাহিক ঈদগুলো বা আইয়াদে, কিংবা বাৎসরিক দু’ই ঈদ উপলক্ষে নগদ অর্থ সাহায্য, পোশাক-পরিচ্ছদ দান, উপাদেয় খাবার যেমন হালুয়া রুটি, কিংবা গোস্ত রুটি বিতরণ করা হলে উহাতে পূণ্য অর্জন হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। যেকেউ সাধ্যমত এরুপ বিবিধ পূণ্যের কাজে ব্রতী হতে পারেন।
বড়রা এ ধরণের পূণ্যের কাজ হাতে রাখলে, কিংবা তাদের দ্বারা ঐরুপ পূণ্যের কাজ হতে দেখলে পরবর্তী মানুষরা ঐরুপ পূণ্যের কাজে উৎসাহ পেয়ে থাকে, আর তাছাড়া তাতে পূণ্যময় কাজের মাধ্যমে আল্লাহর যিকিরের কথাও স্মরণে আসে। তাই ঐসকল পূণ্যের কাজকে “মুযাক্কীর” (যা স্মরণ করিয়ে দেয়)’-ও বলা যায়।
কাজেই, এ উদ্দেশ্যে যদি কেউ বিশেষ দিনের বিশেষত্বের কারণে বিশেষ দিনের বরকত লাভের উদ্দেশ্যে নগদ অর্থ সাহায্য, হালুয়া রুটি, গোস্ত রুটি ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে পরিবারের ছোটদের এরুপ কাজের শিক্ষা দানের অভিপ্রায় করে কর্মসূচির প্রচলন করে তবে তা কখনই বিদাআত হবে না; বরং তা হবে ফী সাবিলিল্লাহ্ আমলে সালেহর চর্চা বা উৎসাহ প্রদান।
কোন কিছু কারো জন্যে মুবাহ বা বৈধতার সাধারণ নিয়ম হচ্ছে উহা দ্বীনের আদেশ ও নিষেধ সূচক কাজের বিরোধী হবে না, দ্বীনের উৎসাহমূলক কর্মকাণ্ডের আওতার মধ্যে হবে।
সুপ্রিয় পাঠক! ধরুন, আপনি আপনার পিতাকে ও মাতাকে দেখেছেন আপনাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে মৃতদেরকে স্মরণ করে সময়ে সময়ে তো বটেই মৃত্যুর স্মরণীয় দিনটিতে, শবে কদরে, কিংবা শবে বরাতে, কিংবা শবে মেরাজে, কিংবা সাপ্তাহিক ঈদগুলোতে, কিংবা ব্যক্তি জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ কোন দিনে পূণ্যময় কাজের মাধ্যমে আপনার পূর্বপুরুষদের প্রতি ঈসালে সাওয়াব (ফী সাবিলিল্লাহ্ আমলে সালেহের মাধ্যমে কারো জন্যে দুঅা’ করা) করতে।
তাঁরা আপনাকে সাথে সাথে বললেন যে তাঁরা আপনার দাদা-নানার পরিবারেও অনুরুপ পূণ্যময় সুন্নাতান হাসানা তথা খুবই সুন্দর প্রথার চর্চার মাধ্যমে বেড়ে উঠেছেন এবং ঐ সকল পূণ্যময় কাজ করে তাঁরা মৃত আত্মীয় স্বজনদের প্রতি ঈসালে সাওয়াবের দুআ করতেন। তাঁরা আপনাকেও অনুরুপ পূণ্যময় চর্চার প্রশিক্ষণ দিলেন।
এই যে পূণ্যময় চর্চা পরিবারে পরিবারে সুন্নাতান হাসানা হিসেবে প্রচলিত রয়েছে তাকে দ্বীন বহির্ভূত বলা দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার প্রকাশ।
সুপ্রিয় পাঠক, মন্দ চর্চা প্রচলন (সুন্নাতান সাইয়্যিআহ্) হচ্ছে মন্দের সুচনা, যা চর্চা না করার জন্যে দ্বীন শিক্ষা দিয়েছে।
আর ভাল চর্চা প্রচলন (সুন্নাতান হাসানাহ্) হচ্ছে দ্বীন যা চর্চা করার জন্যে আদেশ, কিংবা উৎসাহ দিয়েছে।
যেমন, ধরুন, ব্যক্তি জীবনে, কিংবা কোন বিশেষ দিনে, কিংবা তা হতে পারে ঈদের দিনে, আপনি আপনার পরিবারে মদ্যপানের চর্চা প্রচলন করলেন, আপনার পরিবর্তীতে আপনার সন্তান বা আপনার অনূসরণকারীরা সে মন্দ প্রচলনকে অব্যাহত বা জারী রাখল, সে মন্দ চর্চা পরিবারে পরিবারে, যুগ যুগ ধরে ছড়িয়ে পড়ল, তখন তা সকলের সাথে সাথে আপনার জন্যে আপনার মৃত্যুর পরেও গুনাহ্ পৌঁছার পথ হলো।
ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র, আল্লামা হাফিজ ইবনূল কাইয়্যূম রহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় আর্ রুহ্ কিতাবের ষোড়শ অধ্যায়, “মৃতদের রুহ জীবিতদের নেক আমল দ্বারা উপকৃত হয় কিনা বা মৃত ব্যক্তি নিজের নেক আমল দ্বারা উপকৃত হয় কিনা” শিরোনামে লিখেন,
“ফকীহ্, মুহাদ্দিছ ও মুফাসসিরগণের মতে জীবিতদের নেক আমল দ্বারা মৃতদের রুহ্ দু’ভাবে উপকৃত হয়।
এক/ একজন মৃত ব্যক্তি তার জীবনকালের নেক আমলের দ্বারা পরকালের উপকার লাভের পথ সুগম করে যেতে পারেন।
দুই/ যখন কোন মুমিন বান্দা কোন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দু’আ, ইসতিগফার, সাদকাহ্, হজ্জ ইত্যাদি আদায় করেন , তখন এসবের সওয়াব মৃতদের রুহে পৌঁছে যায়।”
তিনি আরো বলেন,
“এক শ্রেণীর ভ্রান্ত যুক্তিবাদীদের মতে মৃতদের কাছে জীবিতদের নেক আমলের সওয়াব পৌঁছে না। তবে প্রথম অবস্থায় অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি যখন জীবিত থাকে, তখন সে যে আমল করে, তার সওয়াব মৃত্যুর পরও তার কাছে পৌঁছাতে থাকে।
এ সম্বন্ধে সহীহ্ মুসলিমে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বীয়াল্লহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তার তিন রকমের আমল অবশিষ্ট থাকে।
আর তা হলো,
এক- সাদকা-ই-জারিয়াহ,
দুই- ইলম্, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে।
তিন- নেক সন্তান, যারা তাদের মাতাপিতার জন্যে দুআ করে।
এখানে যে তিনটি আমলের উল্লেখ করা হলো, তা আসলে, মৃত ব্যক্তির অর্জিত নেক আমল, যার দ্বারা সে মৃত্যুর পরও সওয়াব লাভ করে।
সুনানে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, একজন মুমিন ব্যক্তির মৃত্যুর পর যেসব নেক আমলের সওয়াব তার কাছে পৌঁছে, তাহলো,
এক- ঐসব ইলম্ যা তিনি অন্যদেরকে শিখিয়েছেন ও তা মানুষের মধ্যে প্রচারও করে গেছেন।
দুই- ঐ নেক সন্তান , যাকে তিনি দুনিয়ায় রেখে গেছেন এবং যে তার জন্যে দুআ করে।
তিন- লোকদের জন্যে যিনি কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করে গেছেন।
চার- যিনি কোন মসজিদ নির্মাণ করে গিয়ে থাকেন।
ছয়- তিনি যদি পানির কোন সুব্যবস্থা করে গিয়ে থাকেন।
সাত- তাঁর ঐসব সাদকাহ্-খায়রাত যা তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় করে গেছেন। এই সমস্ত নেক আমলের সওয়াব মৃত্যুর পরও তাঁর কাছে পৌঁছতে থাকে।
সহীহ্ মুসলিমে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক একটি হাদিস বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে কেউ ইসলামের মধ্যে সুন্নাতে হাসানাহ্ অর্থাৎ নেক নিয়মনীতি প্রচলন করে গেছেন, তবে তার সওয়াব তিনি পাবেন। ঐসব লোকের সমপরিমাণ সওয়াবও তিনি পাবেন, যাঁরা ঐসব সুন্নাতের অনুসরণ করেন। এতে আমলকারীদের সওয়াব হ্রাস পাবে না।
অপরপক্ষে, যে ব্যক্তি ইসলামে কোন কুপ্রথা প্রচলন করবে, সে তার ঐ পাপের বোঝা বহন করবে। কিন্তু এতে আমলকারীদের পাপের বোঝা হ্রাস পাবে না। এরুপ অনেক সহীহ্ ও হাসান হাদীস রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে।
মুসনাদ গ্রন্থে হযরত হুযাইফা রাদ্বিয়াল্লাহু কর্তৃক বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন সুন্দর প্রথা (সুন্নাতান হাসানাহ্) চালু করে আর অন্যরাও তাকে অনুসরণ করে, সে ব্যক্তি নিজের আমলের সওয়াবতো পাবেই, ঐ সমস্ত লোকদের সমপরিমাণ সওয়াবও সে পাবে, যারা তাকে অনুসরণ করে কিন্তু এতে অনুসরণকারীদের আমলের কোন হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি কুপ্রথা (সুন্নাতান সাইয়্যিআহ্) চালু করে এবং অন্যরাও তাকে অনুসরণ করে, সে তার পাপের বোঝা তো বহন করবেই, যারা তাকে অনুসরণ করবে ঐ সমস্ত লোকদের সমপরিমাণ পাপের বোঝাও সে বহন করবে, এতে অনুসরণকারীদের পাপের বোঝা মোটেই হ্রাস পাবে না।”
তিনি সুন্দর চর্চা প্রচলনের বর্ণনা উল্লেখ করার পর মন্দ চর্চা (সুন্নাতান সাইয়্যিআহ্)-র বর্ণনায় লিখেন,
“রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের ঐ পবিত্র বাণীর দ্বারাও একথা প্রমাণিত, যাতে বলা হয়েছে, কিয়ামত পর্যন্ত যতো লোককে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, সে হত্যার পাপের একটি অংশ হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর পুত্র কাবীলকেও বহন করতে হবে। কেননা সে-ই প্রথম ব্যক্তি, যে হত্যাজনিত পাপের প্রথম প্রচলন (কুপ্রথা প্রচলন বা সুন্নাতান সাইয়্যিআহ) করেছিলো। অতএব আযাব ও আরাম সম্পর্কে যে নিয়ম-নীতি প্রযোজ্য, সওয়াব ও মাহাত্ম্যের ক্ষেত্রে একই নিয়ম-নীতি প্রযোজ্য।”
[সূত্রঃ আল্লামা হাফিজ ইবনূল কাইয়্যূম রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আর্ রুহ্ (কিতাবুর রুহ্), ষোড়শ অধ্যায়]।
ঈসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে মুসলমানগণ বিভিন্ন আমলে সালেহ্ বা ভাল কাজ তথা হাদিসে পাকের ভাষায় সুন্নাতান হাসানাহ্’র চর্চা করে থাকে।
আরব সহ সমগ্র বিশ্বে হালুয়া খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। হালুয়া আরবি শব্দ। অর্থ হলো এক প্রকার মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম) মিষ্টি পছন্দ করতেন এ কথা সুবিদিত; তিনি গোশতও পছন্দ করতেন তাও অবিদিত নয়।
যা-ই হোক দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো এক প্রকার ইবাদত।
তবে দিন ও রাতে এ জাতীয় ইবাদাতকে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে পরিণত করে ইবাদতের আসল উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তেমনি হালুয়া-রুটি, পাউরুটি-কলা, গোস্ত-রুটি, ও নগদ অর্থদান-খায়রাতের ওপর বিরুপ ফতোয়া প্রদান করাও উচিত নয়।
আলহামদুলিল্লাহ্, মুসলমানগণকে মহান আল্লাহ্ পাক বিশেষ দিনে বিশেষ দিনের বিশেষত্বের কারণে পূণ্যের কাজ করার তৌফিক দিয়ে আসছেন।
আখেরী যামানার ফিত্না সৃষ্টিকারীদের থেকে মহান আল্লাহ্ পাক মুসলিম উম্মাহকে হিফাজাত করুন, আমীন।
_________
প্রতিটি আমলে সালেহ্ বা ভালো কাজই ঈমানের অঙ্গ।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদে আমলে সালেহর তালিকা প্রদান করেননি। আল্লাহর রসূল সা. মানুষকে কুরআন বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সামগ্রিক কর্ম ও বাণীতে আমলে সালেহর পরিচয় পেশ করেছেন। নিজেকে আমলে সালেহ’র মডেল (নমুনা) হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সাহাবায়ে কিরামকে গড়ে তুলেছেন সেই মডেলের আদলে। তিনি আমলে সালেহ’র ধারাবাহিক কোনো তালিকা আমাদের দিয়ে যান নি। তবে তাঁর বাণীতে ব্যাপকভাবে আমলে সালেহ’র রুপরেখা উল্লেখ আছে।
তিনি আমলে সালেহর চিরকালীন দিক নির্দেশনা দেখিয়েছেন যাতে করে মানুষ স্বীয় সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে সর্বকালেই আমলে সালেহর চর্চার উৎকর্ষ সাধন করতে পারে।
অকৃত্রিমভাবে কৃত সৎকর্ম কখনো বিফল হয় না; কাজেই আমলে সালেহর নিয়মিত চর্চাকারী প্রকৃত প্রজ্ঞাবান।
আশ্রাফুল আম্বিয়া, সাহেবে লাওলাক, প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
ﻗﺎﻝ ﺭﺟﻞ ﻷﺗﺼﺪﻗﻦ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺑﺼﺪﻗﺔ، ﻓﺨﺮﺝ ﺑﺼﺪﻗﺘﻪ ﻓﻮﺿﻌﻬﺎ ﻓﻲ ﻳﺪ ﺯﺍﻧﻴﺔ، ﻓﺄﺻﺒﺤﻮﺍ ﻳﺘﺤﺪﺛﻮﻥ : ﺗﺼﺪﻕ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﻋﻠﻰ ﺯﺍﻧﻴﺔ، ﻗﺎﻝ ﺃﻟﻠﻬﻢ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺯﺍﻧﻴﺔ، ﻷﺗﺼﺪﻗﻦ ﺑﺼﺪﻗﺔ ﻓﺨﺮﺝ ﺑﺼﺪﻗﺘﻪ ﻓﻮﺿﻌﻬﺎ ﻓﻲ ﻳﺪ ﻏﻨﻲ ﻓﺄﺻﺒﺤﻮﺍ ﻳﺘﺤﺪﺛﻮﻥ : ﺗﺼﺪﻕ ﻋﻠﻰ ﻏﻨﻲ، ﻗﺎﻝ : ﺃﻟﻠﻬﻢ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﻏﻨﻲ، ﻷﺗﺼﺪﻗﻦ ﺑﺼﺪﻗﺔ، ﻓﺨﺮﺝ ﺑﺼﺪﻗﺘﻪ ﻓﻮﺿﻌﻬﺎ ﻓﻲ ﻳﺪ ﺳﺎﺭﻕ، ﻓﺄﺻﺒﺤﻮﺍ ﻳﺘﺤﺪﺛﻮﻥ : ﺗﺼﺪﻕ ﻋﻠﻰ ﺳﺎﺭﻕ، ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻟﻠﻬﻢ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻋﻠﻰ ﺯﺍﻧﻴﺔ ﻭﻋﻠﻰ ﻏﻨﻲ ﻭﻋﻠﻰ ﺳﺎﺭﻕ ﻓﺄﺗﻲ، ﻓﻘﻴﻞ ﻟﻪ : ﺃﻣﺎ ﺻﺪﻗﺘﻚ ﻓﻘﺪ ﻗﺒﻠﺖ، ﺃﻣﺎ ﺍﻟﺰﺍﻧﻴﺔ ﻓﻠﻌﻠﻬﺎ ﺗﺴﺘﻌﻒ ﺑﻬﺎ ﻋﻦ ﺯﻧﺎﻫﺎ، ﻭﻟﻌﻞ ﺍﻟﻐﻨﻲ ﻳﻌﺘﺒﺮ ﻓﻴﻨﻔﻖ ﻣﻤﺎ ﺃﻋﻄﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻟﻌﻞ ﺍﻟﺴﺎﺭﻕ ﻳﺴﺘﻌﻒ ﺑﻬﺎ ﻋﻦ ﺳﺮﻗﺘﻪ . ﺃﺧﺮﺟﻪ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ :1421 ﻭﻣﺴﻠﻢ : 1022
[গ্রন্থ সূত্র: বুখারী, হা/ ১৪২১; মুসলিম, হা/ ১০২২]।
দেখুন, এ ব্যক্তি তার আমলে সালেহ বা ছদকা বা দান করার ব্যাপারে এতটাই ইখলাছ (আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়্যত) গ্রহণ করেছিল যে, ছদকা প্রদানে তার অতি গোপনীয়তা কাউকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে দেয়নি। এ গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বার বার এ ছদকা অনাকাঙ্খিত হাতে পরলেও সে তার ইখলাছ থেকে সরে আসেনি। ইখলাছ অবলম্বনে ছিল অটল। ফলে তার কোন দান ব্যর্থ হয়নি।
ইবনে হাজার রহ. বলেন, এ হাদীস দ্বারা বুঝে আসে দানকারীর মনের স্থিরতা (নিয়্যাত) বিশুদ্ধ থাকলে তার দান অনাকাঙ্খিত স্থানে পরলেও তার দান বা ছদকা বা আমলে সালেহ আল্লাহর কাছে কবুল হবে।
[গ্রন্থ সূত্র : ফাতহুল বারী : ইবনে হাজার আসকালানী রহ.]।
যেকোন আমলে সালেহ করায় উৎসাহ হারাবেন না।
আলেম বেশধারী ইসলামের দুষমনদের “বেদাত বেদাত” উচ্চারণে বিভ্রান্ত হবেন না।