বিবাহিত পুরুষদের প্রতি নবী (ﷺ) এর উপদেশ
প্রিয় দর্শক বিবাহিত জীবনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ এবং তিনার দেওয়া উপদেশ মেনে চলা প্রত্যেকটা পুরুষের জন্য অত্যান্ত জরুরী । এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গভীর ভালোবাসা তৈরি হবে এবং সংসার জীবন সুখে ভরে যাবে ।
বিবাহিত পুরুষদের জন্য নবী ﷺ র দেওয়া কিছু উপদেশ ।
(১) স্ত্রীর নিকট উত্তম হওয়াঃ-
হযরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি”। [ইবন মাযাহ: হাদীস নং ১৯৭৭, তিরমিযী: হাদীস নং ৩৮৯৫।]
হাদিস দ্বারা বুঝা গেল স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে উত্তম স্বামী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে ।
(২) স্ত্রীকে ঘৃনা না করাঃ-
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন: “কোন মুমিন স্বামী যেন মুমিন স্ত্রীকে ঘৃণা না করে। যদি তার কোন একটি আচরণ অপছন্দনীয় হয় অন্য আরেকটি আচরণ সন্তোষজনক হবে।”
সহিহ মুসলিমে (১৪৬৯)
স্ত্রীর কোনো আচারণ যদি অপছন্দনীয় হয় তাহলে, তার ভালো গুণগুলির দিকে লক্ষ্য করে নিজেকে শান্ত রাখতে হবে, ঘৃণা করা যাবে না । সংসারের ছোটখাটো বিষয় গুলি নিয়ে সব সময় ঘৃণার চোখে দেখা যাবে না । তবে স্ত্রী যদি ইসলামবিরোধী কাজ করে তাহলে স্বামী শাসন করতে পারবে ।
(৩) স্ত্রীর কাজে সাহায্য সহযোগিতা করাঃ-
হজরত আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলো রাসূল (ﷺ) ঘরে তার স্ত্রীদের সাথে কী কী করতেন । তিনি বললেন, “তিনি স্ত্রীদের কাজে সহযোগিতা করতেন, আর যখন নামাযের সময় হতো তখন তিনি নামাযে যেতেন”। [বুখারী, ৬০৩৯।]
এ হাদীস দ্বারা তিনি উম্মতকে এ শিক্ষা দিয়েছেন যে, স্ত্রীদের বাড়ির কাজে সাহায্য করতে হবে এবং তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে ।
(৪) নিজের কাজ নিজে করাঃ-
এক লোক হযরত আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঘরে কি কোন কাজ করতেন?
উত্তরে আয়েশা (রাঃ) বলেন, “হ্যাঁ, রাসূল (ﷺ) নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে তিনি তা করতেন”।
[মুসনাদে আহমদ ২৪৭৪৯]
আপনার স্ত্রী বাড়িতে সন্তান লালন পালন, সাংসারিক কাজ ইত্যাদি ঝামেলায় সব সময় ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনেক সময় আপনাকে সময় দিতে পারে না। তাতে আপনি তার উপর রাগ না করে আপনার ছোট খাট কাজ আপনি নিজেই সেরে ফেলতে পারেন।
(৫) একসঙ্গে খাওয়া ও একই পাত্রে পানি পান করাঃ-
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি পানি পান করে সে পাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে দিতাম। আমার মুখ লাগানো স্থানে তিনি তাঁর মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আমি হাড়ের টুকরা চুষে তা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে দিতাম। তিনি আমার মুখ লাগানো স্থানে তার মুখ লাগাতেন। [মুসলিম, হাদীস নং ৩০০।]
হাদিস দ্বারা বুঝা গেল স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে খাওয়া এবং একই পাত্রে দুজনে পান করা এবং একে অপরের খাবার খাওয়া সুন্নত, এতে দুজনের মধ্যে গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
(৬) রোমান্টিকতাঃ-
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “একবার আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু (ﷺ)র সাথে এক অভিযানে বের হলাম, তখন আমি অল্প বয়সী ছিলাম, শরীর তেমন মোটা ছিল না। তিনি তার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করি, প্রতিযোগিতায় আমি এগিয়ে গেলাম।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, এরপরে আমার শরীরে মেদ বেড়ে গেল, একটু মোটা হলাম। অতঃপর একদা এক সফরে রাসূল (ﷺ) আবার সাথীদেরকে বললেন, তোমরা আগে চল, ফলে তারা এগিয়ে গেল। রাসূল (ﷺ), আমাকে বললেন, এসো আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি, প্রতিযোগিতায় তিনি এবার এগিয়ে গেলেন। তিনি হেসে বললেন, এটা তোমার পূর্বের প্রতিযোগিতার উত্তর (অর্থাৎ তুমি আগে প্রথম হয়েছিলে, এবার আমি প্রথম হলাম, তাই মন খারাপ করোনা)। [নাসায়ী, হাদীস নং ৮৮৯৪, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৪১১৯।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম স্ত্রীগণকে বিভিন্ন ভাবে আনন্দ দিতেন , তাদের মনে খুশি দিতেন এবং স্ত্রীদের খুব ভালোবাসতেন ।
স্ত্রীদের সঙ্গে মাঝেমাঝে আনন্দ-ফূর্তি করাটাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত । এই থেকে প্রত্যেকটা বিবাহিত পুরুষদের উপদেশ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি ।
আনন্দ-ফূর্তি দেওয়ার জন্য এমন কিছু করবেন না যা শরীয়ত পরিপন্থী হবে যেমন বেপর্দায় স্ত্রীকে বাজার ঘাট,পার্ক, এমনকি শপিং করতে নিয়ে যাওয়া । তাই স্ত্রীকে কোথায় নিয়ে গেলে পর্দার দিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে ।
সবকিছু শরীয়তের সীমার মধ্যে করতে হবে।
এই ছিল বিবাহিত পুরুষদের জন্য নবী(ﷺ)র দেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ । তিনি নিজে এইগুলো করেছেন প্রত্যেক বিবাহিত পুরুষের জন্য এগুলি পালণ করা সুন্নত ।
👉🏼ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে উঠার পর দু’আ (দোয়া)