ভারতের স্বাধীনতা আন্দলনে মুসলিমদের অবদান ও ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মুসলিমদের কোন অবদান ছিল না
কিছু জায়গা থেকে এমনই প্রশ্ন ভেসে আসছে তাই এই বিষয়টি ভালোভাবে আমাদের জানা জরুরী ।

ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বহু সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারত বর্ষ স্বাধীন হয় । এই স্বাধীনতা সংগ্রামে, অন্যান্যদের মতই দেশের জন্য অগণিত মুসলিম জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, মুসলমানদের অবদান না থাকলে হয়তো ভারত স্বাধীনতা বপেতনা, কিন্তু বর্তমানে সঠিক ইতিহাসকে চাপা দিয়ে মুসলমানদের অবদানের কথা মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের যেকোন শ্রেণীর ইতিহাস পড়লে এমনটাই বোঝা যায়, যেন মুসলমানদের তেমন কোনো অবদানই ছিলনা ।
আর এই ইতিহাস পড়ে বহু অমুসলিম প্রশ্ন তোলে যে মুসলমানদের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশেষ কোনো অবদান নেই । ইত্যাদি।

ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান কতটা ছিল তা আমরা আজ জানার চেষ্টা করব । স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য মুসলমান হাসতে হাসতে জীবন দিয়েছে কিন্তু তাদের নামগুলো চেপে দেওয়া হয়েছে । সেই চেপে যাওয়া ইতিহাসের মুছে যাওয়া কিছু নাম আপনাদের জানা দরকার।

ভারতের ইতিহাসের পাতা ওল্টালে যাদের নাম অবশ্যই পাওয়া যায় তারা হলেন–মহাত্মা গান্ধী, সুভাষ চন্দ্র বস, অরবিন্দ, জোহরলাল, মতিলাল, প্রমুখ। কিন্তু এদের সমতুল্য নেতা আতাউল্লাহ বুখারী, মাওলানা হুসেন আহমাদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা গোলাম হোসেন প্রমুখ (এনারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠোর বিরোধিতা করার জন্য বহু বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন) কিন্তু তাদের নাম আজ ভারতের ইতিহাসে খোঁজে পাওয়া যায় না।

কলকাতা হাইকোর্টের ইংরেজ বিচারপতি নরম্যান যে একের পর এক অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিষ্ঠুরভাবে ফাসির আদেশ দিয়েছিল। মহম্মদ আব্দুল্লাহ তাঁকে একাই কোর্টের সিড়িতে সাহসের সাথে, ইংরেজদের দমন করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেন । তার নাম ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায় না ।

ইংরেজ বিরোধী কর্যকলাপের জন্য যার নামে সর্বদা ওয়ারেন্ট থাকতো। সেই তাবারক হোসেন, তার নামও ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না।

হাকিম আজমল খাঁ- তৎকালিন সময়ে সারা হিন্দুস্থানের কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। যার সংস্পর্শে আসলে হিন্দু-মুসলিম নব প্রান খুজে পেত, তার অবদানের কথা লেখক বোধ হয় লেখতে ভূলে গিয়েছেন ।

মহাত্মা গান্ধী, জহরলাল যার সাহায্য ছাড়া চলতে পারতেন না। যিনি না থাকলে গান্ধী উপাধিটুকু হয়তো পেতেন না। তিনি হলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, যার বক্তৃতায় মানুষদের মধ্যে ভাতৃত্ববোধ তৈরি হত, তার অবদান ভোলার মতো নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের পাতা থেকে তার নামটাও প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ।

মাওলানা মুহম্মদ আলি ও শওকত আলি।‘কমরেড’ ও ‘হামদর্দ’ নামক দুটি ইংরেজ বিরোধী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন । দুজনে ইংরেজ বিরোধী খবর ছড়ানোর জন্য ৫ বার দীর্ঘ মেয়াদী জেল খেটেছেন। কিন্তু আজ তাদের নাম ভারতের ইতিহাসের ছেড়া পাতাতেও জায়গা পায় নি ।

ব্যারিস্টার খাজা আব্দুল মজীদ
বিপ্লবী মীর কাশেম, মজনু শা, ইউসুফ প্রমুখ এরা ব্রিটিশদের বুলেটের আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলাও ইতিহাসের পাতা থেকে নিশ্চিহ্ন হলো কিভাবে?

সুভাষ চন্দ্র বসুর ডান হাত আর বাম হাত যারা ছিলেন। ইতিহাসে তাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা হলেন আবিদ হাসান শাহনাওয়াজ খান, আজিজ আহমাদ, ডি এম খান, আব্দুল করিম গনি,জেট কিলানি, কর্নেল জ্বিলানী প্রমুখ। এদের অবদান লেখকগণ কিভাবে লেখতে ভুলে গেলেন?

বিদ্রোহী গোলাম রব্বানী, সর্দ্দার ও হয়দার, মাওলানা আক্রম খাঁ, সৈয়দ গিয়াসুদ্দিন আনসার। এদের খুন আর নির্মম মৃত্যু কি ভারতের স্বাধীনতায় কাজে লাগেনি?

জেলে মরে পচে গেলেন মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, তার নাম কি ইতিহাসে ওঠার মতো নয়?

হাফেজ নিশার আলি যিনি তিতুমীর নামে খ্যাত । ব্রিটিশরা তার বাঁশেরকেল্লা সহ তাকে ধংব্বস করে দেয়। তার সেনাপতি গোলাম মাসুমকে কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হয়। এভাবে সেই সময় বহু মুসলিম দেশের জন্য নিজেকে কুরবানি দিয়েছে, এগুলি কি অবদান নয় ?
এছাড়া বিখ্যাত নেতা আসফাকুল্লা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বীর আব্দুস সুকুর ও আব্দুল্লাহ মীর এদের অবদান কি ঐতিহাসিকরা ভূলে গেছেন ?

কিংসফোর্ড কে হত্যা করতে ব্যার্থ হয়েও ক্ষুদিরাম সবার কাছে পরিচিত, কিন্তু কিংসফোর্ডকে শের আলী হত্যা করতে সফল হওয়ার পরেও সেই বিপ্লবীকে আমরা জানিনা।

এ ছাড়াও অসংখ্য নাম আছে যেগুলি চেপে দেওয়া হয়েছে একটি ভিডিওতে সব আলোচনা করা সম্ভব নয় ।
তবে কিছু মুসলিম সংগ্রামী নারীর নাম আপনাদের জানা দরকার যারা স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।

জুবাইদা দাউদীঃ- মাওলানা সাফি দাউদির স্ত্রী ছিলেন। তিনি প্রাণপণে ব্রিটিশদের বিরোধীতা করেছিলেন এবং অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। তিনি তার স্বামী, আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে সমস্ত বিদেশি জামাকাপড় সংগ্রহ করে আগুনে দ্বারা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন মহিলা জনসমাবেশে অংশগ্রহণ করতেন এবং মহিলাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে উৎসাহ দিতেন ।

এছাড়াও আসগারি বেগম, মাজিরা খাতুন, রাজিয়া খাতুন, জামিরা, খাদিমা বেগম, বেগম হাবিবুল্লা প্রমূখ মুসলিম নারী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। ইতিহাসের পাতায় এইসব সংগ্রামে নারীদের নাম না থাকলেও, বিভিন্ন মাধ্যমে এদের নাম জীবিত রয়েছে । কারণ সত্য কোনোদিন চাপা থাকে না।

তাই ঐতিহাসিকদের উচিত ছিল নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সকল ধর্মের সংগ্রামী বীরপুরুষ ও নারীদের নাম ও তাদের অবদান সংরক্ষণ করা । তাহলে সকলে খুব ভালো করে জানতো ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যান্যদের মত মুসলমানদের কতটা অবদান ছিল । এতে সকলের মাঝে আরও ভাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পেত । বর্তমানে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য যে সমস্ত নেতারা জাতি বিদ্বেষ করতে তৎপর তারা ব্যর্থ হত । কিন্তু ঐতিহাসিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলি চেপে রেখেছে ।
কথায় আছে সত্য চাপা থাকে না । তাই যেসব ইতিহাস চেপে রাখা হয়েছে তা সংগ্রহ করে বর্তমানের ঐতিহাসিকগণ সত্য প্রকাশ করছেন ।
শেষ কথা আপনারা কখনই ভাববেন না যে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানদের কোন অবদান ছিল না । এটা অবশ্যই ভাববেন যে মুসলমান না থাকলে ভারত এত তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা পেত না । ফলে যার যে অবদান আছে সবি প্রশংসনীয় কোন জাতির প্রতি বিশেষ করে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানো উচিত হবে না ।

Spread the love

Leave a Comment