বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন- ১- ইসলামে জন্মদিন পালন করা কি জায়েজ? এটাতো ইহুদিদের কর্ম আর ইহুদি নাসারাদের বিপরীত করার হুকুম রয়েছে হাদিসে ,ফলে জন্মদিন পালন করা বিদআত।
উত্তর :- ইসলামে জন্মদিন পালন শরীয়ত সম্মত হলে জায়েজ । ইহুদী নাসারাদের মত জন্মদিন পালন করা জায়েজ না।
(ক) আল্লাহ পাক পবিত্র কুরানে বলেন, “তার (অর্থাৎ ইয়াহিয়া আঃ এর) প্রতি শান্তি-যেদিন সে জন্মগ্রহণ করেছে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে। (সুরা মারইয়ম ১৫)
(খ) হযরত ইসা (আঃ) ওনার নিজের জন্মদিন পালনকে, আল্লাহ পাক কুরআনে বর্ননা করেছেন এই ভাবে, ”আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব। (সুরা মারইয়ম ৩৩)
যা কুরআন হাদিসে থাকে তাকে বিদআত বলা মানে মুর্খতা। সুতরাং System টাকে বিদআত বলা যেতে পারে তখন এটা-
A) ভাল System হলে বিদআতে হাসানাহ।
B) খারাপ System হলে বিদআতে সাইয়্যা।
তাই বলে জন্মদিন পালনকে বিদআত বলা যায় না। বলতে হবে ইহুদীদের মত পালন করলে বিদআত।
তাহলে আপনারা জন্মের পর আকিকা কেন করেন? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয় কি? প্রত্যেক মুসলমান জীবনে একবার আকিকা করে থাকে কিন্তু রাসুল (ﷺ) ২ বার করেছিলেন। যাই হোক এটা গেল একবার জন্মদিন পালন (যা হাদিস সম্মত)
তারপর ধরুন আপনি নিজের জন্মদিনে আল্লাহর শুক্রিয়া আদায় করে রোজা রাখলেন (এটা রাসুল (ﷺ) করেছেন তাই এটাও সুন্নাত) অথবা নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এটা কি গুনাহ হবে? অবশ্যই না।
↓
প্রশ্ন ২ :- কুরআনে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালনের কোন প্রমান আছে কি?
উত্তর :- আল-কুরআনে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর বৈধ্যতার প্রমান
”তোমরা রসূল (ﷺ) এর উপর ঈমান আনো, রাসুলকে সম্মান করো ও রাসুলের মাহাত্ম্য বর্ননা করো এবং সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষনা করো !”
★ আলা হযরত আহমদ রেজা খান বেরলভী (রহ) প্রনীত তফসীরে কাঞ্জুল ইমান, সূরা ফাতহ ৯
”হে হাবীব (ﷺ) ! আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি”।
( সুরা আম্বিয়া: ১০৭)
→ আপনার রব এর অনুগ্রহের কথা আপনি প্রকাশ করুন !”
( সূরা আদ্ব দোহা ১১)
[হে রাসুল (ﷺ) আপনি] বলে দিন , মহান আল্লাহ পাক যে ফজল (অনুগ্রহ) ও রহমত প্রেরণ করেছেন , সেজন্য তারা যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আর এটা সবচাইতে উত্তম যা তারা সঞ্চয় করে রাখে !”
(সূরা ইউনূছ ৫৮)
প্রশ্ন ৩ :- এই সব আয়াতে মিলাদুন্নবী (ﷺ) কথা কোথায় আছে?
উত্তর :-কোন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি খুশির দিন কোনটি?
সবচেয়ে বড় নিয়ামতের দিন কোনটি?
তার জন্য এর চেয়ে উত্তম জবাব আর কি হতে পারে, যেদিন রহমতাল্লিল আল-আমিন দুনিয়ায় তশরিফ নিয়েছেন। উপরোক্ত আয়াত গুলোতে বিরোধীরা কিছু বুঝে না কিন্তু তাই বলে কি ইমামগন, মুফাসসির গনও কিছু বুঝবেন না? সেজন্যই দেখুন তারা শ্রেষ্ট নিয়ামত হিসেবে কি ব্যাক্ষ্যা দিয়েছেন?
↓
তফসির
১-ইমাম ইবনুল জাওযী নিজ ‘তাফসীর’গ্রন্থে সূরা ইউনূসের উক্ত ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আদ্ দাহাক হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: এই আয়াতে ‘ফযল’ বলতে জ্ঞান (অর্থাৎ, আল-কুরআন ও তাওহীদ)-কে বুঝিয়েছে; আর ‘রহমত’ বলতে মহানবী(ﷺ) -কে বোঝানো হয়েছে।” [ইবনে জাওযী কৃত ‘যা’দ আল-মাসীর ফী এলম আত্ তাফসীর’, ৪:৪০]
২- ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহ:) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ(ﷺসা) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
৩- ইমাম আবু হাইয়ান আন্দালুসী এ সম্পর্কে বলেন, “ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।” [তাফসীর আল-বাহর আল-মুহীত, ৫:১৭১]
৪- আল্লামা আলূসী ব্যাখ্যা করেন যে এমন কি ‘ফযল’ (অনুগ্রহ) বলতেও হযূর পাক (দ:)-কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে, যেমনিভাবে বর্ণিত হয়েছে আল-খতীব ও ইবনে আসাকির থেকে যে আয়াতোক্ত ‘ফযল’ হলেন মহানবী(ﷺসা) । [আলূসী রচিত রূহুল মাআনী, ১১:১৪১]
প্রশ্ন 4:- হাদিসে মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর কোন প্রমান আছে কি?
উত্তর :- মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর উতকৃষ্ট প্রমান সম্পর্কে এর চাইতে উত্তম আর কোন হাদিসে নেই। এখানে স্পষ্ট যে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খুশি হলে কাফির লাহাবও যদি ১টা দিন (সোমবার) আজাব থেকে মুক্তি পেয়ে থাকে যার বিরোদ্ধে কিনা স্বয়ং সুরা লাহাব নাজিল হয়েছে তাহলে চিন্তার বিষয় ইমানদারদের জন্য কত বড় পুরষ্কার থাকতে পারে আল্লাহই ভাল জানেন । যদিও কাফিরদের সমস্ত কাজ বৃথা যায় (যদি সে নামাজও পড়ে সেটাও) কিন্তু এই কাজটি বৃথা যায় নি। – সুবাহানাল্লাহ
বুখারী শরীফে উল্লেখিত ঘটনাটি না বললেই নয়,
হযরত অরওয়া ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেন,
সুহাইবাহ আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর বেলাদাতের (অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর ) সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে (মিলাদুন্নবীর খুশিতে) সুহাইবাহ কে আযাদ করে দিয়েছিল।যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ (হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশে বলেন, “তোমার অবস্থা কেমন?” আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি,কেবল যে দিন (রাসুলুল্লাহ (দ.) জন্ম হওয়ার খুশিতে অর্থাৎ মিলাদুন্নবীর খুশিতে ) সুহাইবাকে (তর্জনী ও মধ্যমা দু’টি আঙ্গুলের ইশারায়) আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে (প্রতি সোমবার) আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি (চুষে) পান করে থাকি ও প্রতি সোমবার (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
Reference :-
♦Masnad Ahmed : Hadith 25953 under the heading of لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن and again in Hadith 26865 with matan of
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
♦Al-Sunnan Al Kubra (li Nisai): Hadith 5394/5395
♦Al Nisai’ al-Sughra : Hadith Nob 3287/3284/3285/3286
♦Sunnan Ibne Majah: Hadith 1939 Under the heading of ( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
♦Sahih Muslim: Hadith Nob.1451(2634), 1451(2635) under the same matan
♦Sahih ibne Hibban: Hadith Nob, 4110 (4199), 4111(4200), the matan of hadith is إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
প্রশ্ন ৫ : ইমামগন কি মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন?
উত্তর:- সমস্ত ইমামগনই কোন না কোন ভাবে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পালন করেছেন। যেমন,
মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে ৩ লক্ষ হাদিসের হাফিজ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানীর ভাষ্য, সাবধান!
যারা মিলাদুন্নবী (ﷺ) কে মন্দ বিদআত বলে তারাই আসলে প্রকৃত বিদআতী। দেখুন ইমামগন কি বলে আর ওহাবী সালাফীরা কি বলে?
↓
♥ হুজ্জাতুল ইসলাম, শায়খুল ইসলাম ও বিখ্যাত মুহাদ্দীস ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:):-
এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ:)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা স্পস্ট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় নামায, রোযা, দান-সদকাহ বা কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺসা)-এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ:) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (সাﷺ) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ সারা বছরের যে কোনো সময় (দিন/ক্ষণ) তা উদযাপনকে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।[প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]।
♥ তিনি আরো বলেন:-
”আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ:) হযরত আনাস (রা:) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (ﷺসা)নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (সাﷺ) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (সাﷺ) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই, মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (সাﷺ) -এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।” [প্রাগুক্ত ‘হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]