শুক্রবার রাতে ও দিনে দরুদ পড়ার ফজিলত
শুক্রবারের দিন হল সাপ্তাহিক ঈদের দিন । তাইতো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুক্রবার এর রাত্রে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে) ও শুক্রবারের দিনে বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করতে বলেছেন ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ শরীফ পাঠ করা উত্তম ইবাদত । যত বেশি সম্ভাব দরুদ পাঠ করতে হবে ।
উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ হে মানবগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে স্মরণ কর, তোমরা আল্লাহ্ তা’আলাকে স্মরণ কর। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙ্গাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। মৃত্যু, তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু, তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।
উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি তো খুব অধিক হারে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরুদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করবো?
তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইছা কর।
আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে।
আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর।
আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল।
আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার দরুদ পাঠে কাটিয়ে দিব? তিনি বললেনঃ তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে।
(জামে’ আত-তিরমিজি,২৪৫৭)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদ পড়ার জন্য তাকিদ করেছেন।
সেজন্য প্রতিদিনই যতটা সম্ভব বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে, তবে শুক্রবারের রাতে ও দিনে অধিক পরিমাণে খুব বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করা অতি উত্তম । কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুক্রবারের রাতে ও দিনে বেশী বেশী দরুদ পাঠ করতে বলেছেন ।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَكْثِرُوا الصَّلَاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَلَيْلَةَ الْجُمُعَةِ؛ فَمَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ عَشْرًا
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জুমা’র দিন ও জুমা’র রাত্রে (বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রিতে) আমার উপর বেশী বেশী দরুদ পাঠ করো । যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন ।
(বাইহাকী ৫৯৯৪, মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ৮৪৯৯)
এছাড়া অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, একবার দরূদ পাঠ করলে, আল্লাহতালা ১০বার রহমত বর্ষণ করেন এবং ১০টি গুনাহ ক্ষমা করে দেন, এবং ১০দিক হইতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন ।
যেকোনো দিন বা যে কোন সময় পবিত্র অবস্থায় দরুদ শরীফ পাঠ করলে উক্ত ফজিলত পাওয়া যাবে ।
এবার প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে জুমা’র দিনে ও রাতে এর থেকে কি বেশি ফজিলত পাওয়া যাবে ?
এর উত্তর হলো জি অবশ্যই ।
আবূ-দারদা’ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা জুমা’র দিন আমার উপর অধিক পরিমাণে দুরূদ পাঠ কর। কেননা তা আমার নিকট পৌঁছানো হয়, ফেরেশতাগন তা সম্মানের সহিত পৌঁছে দেন। যে ব্যক্তিই আমার উপর দুরূদ পাঠ করে তা থেকে সে বিরত না হওয়া পর্যন্ত তা আমার নিকট পৌঁছতে থাকে। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার ইনতিকালের পরেও?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হাঁ, ইনতিকালের পরেও।
إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ فَنَبِيُّ اللهِ حَيٌّ يُرْزَقُ
আল্লাহ তা’আলা নবী গণের দেহ মোবারক যমীনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তাই আল্লাহ্র নবীগণ জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত।
(ইবনে মাজা ১৬৩৭)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমা’র দিনে ও রাতে বেশি পরিমাণে দরুদ পড়তে হবে । কারণ এই দিনের ফজিলত অনেক বেশি, ফেরেশতাগণ অতি সম্মানের সহিত সেই দরুদ নিয়ে গিয়ে সোনার মদিনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছে দেন । তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনে ও রাতে দরুদ পড়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন । তার মানে বুঝতে হবে অবশ্যই এই দিন ও রাতের ফজিলত অধিক রয়েছে । কতটা বেশি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালো জানেন ।
হাদিসের মধ্যে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা গেল যে, নবীগণ কবরে শরীফের মধ্যে জীবিত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনাদের কে রিজিক দেওয়া হয় । তাই যারা হায়াতুন্নবীর রাখে অবশ্যই তা শুদ্ধ আকিদা , নবীগণ ইন্তেকালের পরে কবরে জীবিত অবস্থায় রয়েছেন ।
তাই যতটা সম্ভব প্রতিদিনই দরুদ শরীফ বেশি বেশি পড়ার চেষ্টা করতে হবে তবে জুম্মার দিন তুলনামূলক আরো বেশী দরুদ পড়তে হবে । আর যারা দরুদ পড়া বোঝেনা তাদের কাছে অনুরোধ করবো জুমার দিনে ও রাত্রে একবার হলেও পড়ুন । ইনশাল্লাহ আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেলে,প্রতিদিন পড়তে ইচ্ছা করবে এবং জুম্মার দিন আরো বেশি বেশি পড়তে পারবেন ।
এখন প্রশ্ন হল দরুদ তো অনেক রকম আছে কোন দরুদ পড়তে হবে?
হাদীস শরীফে একাধিক দরুদের কথা বর্ণিত হয়েছে । ছোট-বড় অনেক দরুদ আছে, যেটা ইচ্ছা পড়তে পারেন ।
দরুদে ইব্রাহিম পড়বেন ও অন্যান্য দরুদও পড়তে পারেন, তবে অল্প সময় সংখ্যায় বেশি বার পড়তে চাইলে ।
এই ২টো দরুদ পড়তে পারেন
(১) صَلَّى اللّهُ عَلَى النَّبِيِّ
সাল্লাল্লাহু আলান-নবী (বুলুগুল মারাম ৩০৮,আবু দাউদ ১৪২৫, তিরমিযী ৪৬৪, নাসায়ী ১৭৪৫)
(২) صلى الله عليه وسلم
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এই দারুদটি পৃথিবীর বুকে সবথেকে বেশি পড়া হয় ।
সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদিস লিপিবদ্ধ করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নামের পরেই এই দরুদ লিখেছেন ।
পড়া হলে শেয়ার করুন