অমুসলিমদের প্রতি ইসলামের উদারতা
আসসালামু আলাইকুম, আজকের এই পোষ্টটি সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ,নিজে পড়ুন ও শিয়ার করে ছড়িয়ে দিন । আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তরে অমুসলিম ভায়েরা বলে থাকে ,ইসলাম হল সন্ত্রাসের ধর্ম , কুসলমানদের কুরানে অমুলিমদের হত্যা করার কথা বলা হয়েছে । এই যাতীয় বিভিন্ন উসকানী মূলক কথা বলে সাধারণ অমুসলিম ভায়েদেরকে মুসলিম বিরোধী করে তুলছে । তাই সেই ভুল ব্যাখ্যার জবাব দেওয়ার জন্য এই পোষ্টটি আপনাদে খিদমতে পেশ করা হল । নিজে পড়ুন ও বেশি বেশি শিয়ার করে হক বার্তা ছড়িয়ে দিন ।
“হে মানবগোষ্ঠী! আমি তোমাদেরকে একজন পরুষ এবং একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক মুত্তাকী।” (সূরা হুজরাতঃ১৩)
দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৬)
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ নিষেধ করেন না ওই লোকদের সঙ্গে সদাচার ও ইনসাফপূর্ণ ব্যবহার করতে যারা তোমাদের সঙ্গে ধর্মকেন্দ্রিক
যুদ্ধ করে নি এবং তোমাদের আবাসভূমি হতে তোমাদের বের করে দেয় নি। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন। {সূরা আল-মুমতাহিনা, আয়াত : ৮}
”আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম”।
(সূরা মুমতাহিনা, আয়াত-৯)
“যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার কার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ্ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কতই না উত্তম।” (সুরা নিসাঃ ৫৮)
অন্য আয়াতে ইয়াহুদীদের প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (ﷺ) কে নির্দেশ দিয়েছেন এই বলে যেঃ “যদি ফয়সালা করেন তবে ন্যায়ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্ সুবিচারকারীকে ভালবাসেন।” (মায়িদাঃ ৪২)
অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তোমার কর্তব্য তো কেবল সুস্পষ্ট বাণী পৌঁছে দেয়া মাত্র। বানী পৌঁছে দিয়ে শক্তি-প্রয়োগ চলে না।আমাদের এর বেশি কাজ নেই , শক্তি প্রয়োগ পরের কথা। তবে কেউ আক্রমণ করলে প্রতিহত করা ইসলামে দায়িত্ব। (সূরা নাহল, আয়াত-৮২)
তোমার পালনকর্তার পথের দিকে আহবান কর প্রাজ্ঞতা, বিচক্ষণতা ও ভাল উপদেশ শুনিয়ে এবং তাদের সাথে আলোচনা কর উত্তম পন্থায়। (সূরা নাহল, আয়াত-১২৫)
আল্লাহ তাআলা বলেন:“আর তোমরা উত্তমপন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম করেছে।” [সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৬]
আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে। অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে।” [সূরা তওবা, আয়াত: ৬]
“তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম
তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোন বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত:১৫]
আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তারা আল্লাহ তা‘আলার বদলে যাদের ডাকে, তাদের তোমরা কখনো গালি দিয়ো না, নইলে তারাও শত্রুতার কারণে না জেনে আল্লাহ তা‘আলাকেও গালি দেবে, আমি প্রত্যেক জাতির কাছেই তাদের কার্যকলাপ সুশোভনীয় করে রেখেছি, অতঃপর সবাইকে একদিন তার মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারপর তিনি তাদের বলে দেবেন, তারা দুনিয়ার জীবনে কে কী কাজ করে এসেছে’। {সূরা আল আন‘আম, আয়াত : ১০৮}
♦ইসলাম কেবল সেই সমস্ত কাফির মুশরিকের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করতে বলে যারা মুসলমান ও ইসলামের ক্ষতি করতে চায় । যুদ্ধ করে নিরিহ অমুসলিমকে মারতে বলে নি। যেমন আয়াতের ভাষ্য হলো – ‘অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না, ওরা মুসলমানদের অমঙ্গল কামনা করে ।’ [৩/১১৮] এ ধরণের একই কথা বলা হয়েছে এই আয়াতগুলিতেও – ৪/১৪৪; ৫/৫১,৫৭; ৬০/১ ।
যারা মুসলিমদের প্রকাশ্যে শত্রুতা করে এবং ইসলামের নামে অপপ্রচার চালায় ,মুসলিমদে ক্ষতি করার চেষ্টা করে তাদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে – ‘ … নিশ্চয় কাফেরগণ তোমাদের শত্রু।’ [৪/১০১]
‘যে আল্লাহর, ফিরিস্তাদের, রাসূলদের, জিব্রাইলের ও মিকাঈলের শত্রু হয়, [সে জেনে রাখুক ] আল্লাহ কাফিরদের শত্রু ।’ [২/৯৮]
হাবীব ইবন অলীদ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সৈন্যদল প্রেরণকালে বলতেন – ‘তোমরা আল্লাহ ও আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যাত্রা কর। তোমরা আল্লাহর প্রতি কুফরকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। আমি তোমাদের কয়েকটি উপদেশ দিয়ে প্রেরণ করছি- (যুদ্ধক্ষেত্রে) তোমরা বাড়াবাড়ি করবে না, ভীরুতা দেখাবে না, (শত্রুপক্ষের) কারো চেহারা বিকৃতি ঘটাবে না, কোনো শিশুকে হত্যা করবে না, কোনো গির্জা জ্বালিয়ে দেবে না এবং কোন গাছউৎপাটন করবে না।’ [আবদুর রাযযাক, মুসান্নাফ : ৯৪৩০]
এদিকে মু’তার যুদ্ধে রওনার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বাহিনীকে নির্দেশ দেন : ‘তোমরা কোনো নারীকে হত্যা করবে না, অসহায় কোনো শিশুকেও না; আর না অক্ষম বৃদ্ধকে। আর কোনো গাছ উপড়াবে না, কোনো খেজুর গাছ জ্বালিয়ে দেবে না। আর কোনো গৃহও ধ্বংস করবে না।’ [মুসলিম : ১৭৩১]
আরেক হাদীসে আছে, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« ﻛَﺎﻥَ ﺇﺫَﺍ ﺑَﻌَﺚَ ﺟُﻴُﻮﺷَﻪُ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏَ ﺍﻟﺼَّﻮَﺍﻣِﻊِ ».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের কোনো বাহিনী প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা গির্জার অধিবাসীদের হত্যা করবে না।’
[ইবন আবী শাইবা, মুসান্নাফ : ৩৩৮০৪; কিতাবুল জিহাদ, যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের হত্যা করা নিষেধ অধ্যায়]
আবূ বকর রাদিআল্লাহু আনহুও একই পথে হাঁটেন। আপন খিলাফতকালে প্রথম যুদ্ধের বাহিনী প্রেরণ করতে গিয়ে তিনি এর
সেনাপতি উসামা ইবন যায়েদ রাদিআল্লাহু আনহুর উদ্দেশে বলেন, ‘হে লোক সকল, দাঁড়াও আমি তোমাদেরদশটি বিষয়ে উপদেশ দেব। আমার পক্ষহিসেবে কথাগুলো তোমরা মনে রাখবে।কোনো খেয়ানত করবে না, বাড়াবাড়ি করবে না,বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, (শত্রুদের) অনুরূপকরবে না, ছোট বাচ্চাকে হত্যা করবে না,বয়োবৃদ্ধকেও না আর নারীকেও না। খেজুরগাছ কাটবে না কিংবা তা জ্বালিয়েও দেবে না। কোনো ফলবতী গাছ কাটবে না। আহারের প্রয়োজন ছাড়া কোনো ছাগল, গরু বা উট জবাই করবে না। আর তোমরা এমন কিছু লোকের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে যারা গির্জাগুলোয় নিজেদের ছেড়ে দিয়েছে। তোমরাও তাদেরকে তাদের এবং তারা যা ছেড়ে নিজেদের জন্য তাতে ছেড়ে দেবে। [মুখতাসারু তারীখি দিমাশক : ১/৫২; তারীখুত তাবারী]
কোনো মুসলিম যদি কোনো অমুসলিমের প্রতি অন্যায় করেন, তবে রোজ কিয়ামতে নবী (ﷺ) তার বিপক্ষে লড়বেন বলে হাদীসে এসেছে। একাধিক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﺃَﻟَﺎ ﻣَﻦْ ﻇَﻠَﻢَ ﻣُﻌَﺎﻫِﺪًﺍ، ﺃَﻭِ ﺍﻧْﺘَﻘَﺼَﻪُ، ﺃَﻭْ ﻛَﻠَّﻔَﻪُ ﻓَﻮْﻕَ ﻃَﺎﻗَﺘِﻪِ، ﺃَﻭْ ﺃَﺧَﺬَ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻃِﻴﺐِ ﻧَﻔْﺲٍ، ﻓَﺄَﻧَﺎ ﺣَﺠِﻴﺠُﻪُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ
‘সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার
কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ [আবূ দাঊদ : ৩০৫২]
অপর এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« ﻣَﻦْ ﻗَﺘَﻞَ ﻣُﻌَﺎﻫَﺪًﺍ ﻟَﻢْ ﻳَﺮِﺡْ ﺭَﺍﺋِﺤَﺔَ ﺍﻟﺠَﻨَّﺔِ، ﻭَﺇِﻥَّ ﺭِﻳﺤَﻬَﺎ ﺗُﻮﺟَﺪُ ﻣِﻦْ ﻣَﺴِﻴﺮَﺓِ ﺃَﺭْﺑَﻌِﻴﻦَ ﻋَﺎﻣًﺎ»
‘যে মুসলিম কর্তৃক নিরাপত্তা প্রাপ্ত কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ পাওয়া যায় চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব থেকে’। [বুখারী : ৩১৬৬] —
আপনারা পোষ্টটি পড়ার পর স্পষ্ট বুঝতে পারলেন , যে ইসলাম অমুসলিমদের প্রতি জুলুম করতে বারন করেছে । কিন্তু য়ারা অত্যাচারী হবে তাদের মুকাবিলা করতে বলেছে । ফলে সঠিক না বুঝে যারা অপব্যাখ্যা করে সবসময় মুসলিম ও অমুসলিদের মাঝে দন্ধ লাগানোর চেষ্টা করে তারা এক ধরনের মূর্খ – মানবজাতীর প্রকাশ্য শত্রু । তাদের চক্রান্ত থেকে বেঁচে থাকা আমাদে কর্তব্য ।
বিঃ দ্রঃ – এই যাতীয় বিভিন্ন উসকানী মূলক কথা বলে সাধারণ অমুসলিম ভায়েদেরকে মুসলিম বিরোধী করে তুলছে । তাই সেই ভুল ব্যাখ্যার জবাব দেওয়ার জন্য এই পোষ্টটি আপনাদে খিদমতে পেশ করা হয়েছে । নিজে পড়ুন ও বেশি বেশি শিয়ার করে হক বার্তা ছড়িয়ে দিন ।