আসসালামু আলাইকু ,আজ আমরা অযু ও বিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা করব, মুসলিম সম্প্রদায় নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে অজু করে থাকেন ,পাশা পাশি বিজ্ঞান মত অনুযায়ী নিয়মিত অজু করলে অষুধ ছাড়া অনেক অসুখ ভালো হয়ে যায় । নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হল ।
পশ্চিম জার্মানীর সেমিনার
পশ্চিমা দেশ সমূহে হতাশা (DEPRESSION) রোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মস্তিস্ক অকেজো হয়ে যাচ্ছে। পাগলখানার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞদের নিকট রোগীদের ভীড় সবসময় লেগেই থাকে। পশ্চিম জার্মানীর ডিপ্লোমা হোল্ডার একজন পাকিস্তানী ফিজিওথেরাপিষ্ট এর বক্তব্য: “পশ্চিম জার্মানীতে একটি সেমিনার হয়েছে যার আলোচ্য বিষয় ছিল: “মানসিক (DEPRESSION) রোগের চিকিৎসা ই আর কোন কোন উপায়ে হতে পারে।”
একজন ডাক্তার তার প্রবন্ধে এই বিষ্ময়কর তথ্য খুলে বলেছেন যে, আমি ডিপ্রেশন (মানসিক রোগে) আক্রান্ত কতিপয় রোগীকে দৈনিক পাঁচবার মুখ ধৌত করিয়েছি। কিছুদিন পর তাদের রোগ কমে যায়। অতঃপর এইভাবে রোগীদের অপর দলকে দৈনিক পাঁচবার হাত, মুখ ও পা ধৌত করার ব্যবস্থা করেছি। এতে রোগ অনেকটা ভাল হয়ে যায়। এই ডাক্তার তার প্রবন্ধের উপসংহারে (শেষে) স্বীকার করেছেন;“মুসলমানদের মধ্যে মানসিক রোগ কম দেখা যায়। কেননা তারা দিনে কয়েকবার হাত, মুখ ও পা ধৌত করে (অর্থাৎ অযু করে) ।”
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
অযু ও উচ্চ রক্তচাপ
এক হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার খুবই জোর দিয়ে বলেছেন; “উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে অযু করান, তারপর ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করুন, অবশ্যই অবশ্যই তা কমে যাবে। এক মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মুসলিম ডাক্তার বলেন: “মানসিক রোগের উত্তম চিকিৎসা হলো অযু।” পশ্চিমা দেশের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞগণ রোগীদের শরীরে অযুর ন্যায় দৈনিক কয়েকবার পানি ঢেলে দেন।
অযু ও অর্ধাঙ্গ
অযুতে ধারাবাহিকভাবে যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা হয়, তাও রহস্য শূন্য নয়। প্রথমে উভয় হাতে পানি ঢালাতে শরীরে শিরার কার্যক্রম সচল হয়ে উঠে। অতঃপর ধীরে ধীরে চেহারা ও মস্তিষ্কের রগগুলোর দিকে তার প্রভাব পৌঁছতে থাকে। অযুর মধ্যে প্রথমে হাত ধোয়া তারপর কুলি করা তারপর নাকে পানি দেয়া তারপর চেহারা ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার ধারাবাহিকতা অর্ধাংগ রোগ প্রতিরোধের জন্য উপকারী। অযু যদি মুখমন্ডল ধৌত করা ও মাথা মাসেহ্ করা দ্বারা শুরু করা হতো তাহলে শরীর অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো।
মিসওয়াকের মূল্যায়ন
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! অযুর মধ্যে অনেক সুন্নাত রয়েছে এবং প্রত্যেকটা সুন্নাত অসংখ্য গুপ্ত রহস্যের ভান্ডার। যেমন-মিসওয়াকের কথাই ধরে নিন। শিশুরাও জানে যে, অযুর মধ্যে মিসওয়াক করা সুন্নাত। এই সুন্নাতের বরকত সমূহ কি চমৎকার! এক ব্যবসায়ির বক্তব্য: “সুইজারল্যান্ডে এক নও মুসলিমের সাথে আমার সাক্ষাত হয়। আমি তাকে তোহ্ফা হিসেবে একটা মিসওয়াক দিলাম। তিনি খুশী হয়ে তা গ্রহণ করলেন এবং চুম্বন করে চোখে লাগালেন। হঠাৎ তার দু’চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। তিনি পকেট থেকে একটি রুমাল বের করে এবং তার ভাজ খুললেন। দেখলাম, ওখান থেকে আনুমানিক দু’ইঞ্চি লম্বা একটা ছোট্ট মিসওয়াকের টুকরা বের হলো। তিনি বললেন: আমার ইসলাম গ্রহণের সময় মুসলমানগণ এই তোহফা আমাকে দিয়েছিল। আমি খুব যত্ন সহকারে এটা ব্যবহার করতে থাকি। এটা শেষ হতে চলেছিল বিধায় আমি চিন্তিত ছিলাম। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা দয়া করেছেন এবং আপনি আমাকে আরেকটি মিসওয়াক দান করলেন। অতঃপর তিনি বললেন: “দীর্ঘ দিন যাবত আমি দাঁত ও মাড়ির ব্যথায় ভুগছিলাম। আমাদের এখানকার দাঁতের চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা হচ্ছিল না। আমি এই মিসওয়াকের ব্যবহার আরম্ভ করি। অল্প দিনের মধ্যেই আমি সুস্থ হয়ে উঠি। অতঃপর আমি ডাক্তারের নিকট গেলাম, তিনি আশ্চর্য্য হয়ে যান এবং জিজ্ঞাসা করলেন: “আমার ঔষধে এত তাড়াতাড়ি আপনার রোগ সেরে যেতে পারে না। ভালভাবে চিন্তা করে দেখুন, অন্য কোন কারণ থাকতে পারে।” আমি যখন গভীরভাবে চিন্তা করলাম তখন আমার স্মরণ হলো যে, আমি তো মুসলমান হয়েছি এবং এই সব বরকত মিসওয়াক শরীফেরই। যখন আমি ডাক্তারকে মিসওয়াক শরীফ দেখালাম তখন তিনি বিস্মিত ও অপলক দৃষ্টিতে শুধু তা দেখতে থাকেন।
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
স্মরণশক্তির জন্য
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! মিসওয়াক শরীফের মধ্যে ধর্মীয় ও দুনিয়াবী অসংখ্য উপকারীতা রয়েছে। এতে বিভিন্ন রাসায়নিক অংশ রয়েছে, যা দাঁতকে সব ধরণের রোগ থেকে রক্ষা করে। তাহতাবীর পাদটীকায় রয়েছে: “মিসওয়াক দ্বারা স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়, মাথা ব্যথা দূর হয় এবং মাথার রগগুলোতে প্রশান্তি আসে। এতে শ্লেষ্মা (কফ, সর্দি) দূর, দৃষ্টি শক্তি তীক্ষ্ম, পাকস্থলী ঠিক এবং খাদ্য হজম হয়, বিবেক বৃদ্ধি পায়। সন্তান প্রজননে বৃদ্ধি ঘটায়। বার্ধক্য দেরীতে আসে এবং পিঠ মজবুত থাকে।” (হাশিয়াতুত তাহতাভী, আল মারাকিল ফালাহ, ৬৮ পৃষ্ঠা)
মিসওয়াক সম্বন্ধে দু’টি বরকতময় হাদীস
(১) “যখন হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর মোবারক ঘরে প্রবেশ করতেন তখন সর্বপ্রথম মিসওয়াক করতেন।” (সহীহ মুসলিম শরীফ, ১৫২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৫৩) (২) “নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন, তখন মিসওয়াক করতেন।” (আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীস-৫৭)
মুখের ফোস্কার চিকিৎসা
ডাক্তারগণ বলেন: “অনেক সময় গরম ও পাকস্থলী হতে বের হওয়া এসিডের ফলে মুখে ফোস্কা পড়ে যায়। এই রোগ থেকে বিশেষ ধরণের জীবাণু মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর চিকিৎসার জন্য তাজা মিসওয়াক দ্বারা মিসওয়াক করুন এবং এর লালাকে কিছুক্ষণ মুখের ভিতরের এদিক সেদিক ঘুরাতে থাকুন। এই ভাবে অনেক রোগী সুস্থতা লাভ করেছে।”
টুথ ব্রাশের অপকারিতা সমূহ
বিশেষজ্ঞগণের গবেষণা অনুযায়ী ৮০% রোগ পাকস্থলী ও দাঁতের দূষণ থেকে সৃষ্টি হয়। সাধারণতঃ দাঁতের পরিচ্ছন্নতার প্রতি লক্ষ্য না রাখার ফলে মাড়িতে বিভিন্ন ধরণের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। অতঃপর পাকস্থলীতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের রোগের সৃষ্টি করে। মনে রাখবেন! টুথ ব্রাশ মিসওয়াকের স্থলাভিষিক্ত নয় বরং বিশেষজ্ঞদের স্বীকারোক্তি রয়েছে যে, (১) ব্রাশ যখন একবার ব্যবহার করা হয় তখন এতে জীবাণুর ভিত্তি জমে যায়। পানি দ্বারা ধৌত করার ফলেও ঐ জীবাণুগুলো যায় না বরং তা বংশবৃদ্ধি করে, (২) ব্রাশের কারণে দাঁতের উপরিভাগে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতার ভিত্তি নষ্ট হয়ে যায়, (৩) ব্রাশের ব্যবহারে মাড়ি ধীরে ধীরে নিজস্থান থেকে সরে যায়, যার ফলে দাঁত ও মাড়ির মধ্যে শূণ্যতা (GAP) সৃষ্টি হয় এবং তাতে খাদ্যের কণা লেগে পঁচে যায় এবং জীবাণুগুলো তাদের স্থান তৈরী করে নেয়। এতে অন্যান্য রোগ-ব্যাধি ছাড়াও চোখের নানা ধরণের রোগ-ব্যাধিও জন্ম নেয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি দূর্বল হয়ে পড়ে বরং কোন কোন সময় মানুষ অন্ধও হয়ে যায়।
আপনি কি মিসওয়াক করতে জানেন?
হতে পারে আপনি মনে মনে ভাবছেন যে, আমি তো বছরের পর বছর ধরে মিসওয়াক ব্যবহার করছি কিন্তু আমার তো দাঁত ও পেট উভয়েরই সমস্যা! আমার সহজ সরল ইসলামী ভাইয়েরা! এটা মিসওয়াকের নয় বরং আপনার নিজেরই ব্যর্থতা। আমি (সগে মদীনা عُفِىَ عَنْه) এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, বর্তমানে হয়ত লাখো মানুষের মধ্যে এক আধ জনই এইরূপ রয়েছে যারা সঠিক নিয়মে মিসওয়াক ব্যবহার করে। আমরা প্রায়ই তাড়াতাড়ি দাঁতের উপর মিসওয়াক মালিশ করে অযু করতে চলে যাই। অর্থাৎ এটাই বলুন যে, আমরা মিসওয়াক নয় বরং মিসওয়াকের প্রথাই আদায় করি।
হাত ধৌত করার রহস্যাবলী
অযুর মধ্যে সর্বপ্রথম হাত ধৌত করা হয়। এর রহস্যগুলো লক্ষ্য করুন। বিভিন্ন জিনিসে হাত দিতে থাকায় হাতের মধ্যে বিভিন্ন রাসায়নিক অনুকণা ও জীবাণু লেগে যায়। যদি সারা দিন ধৌত করা না হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি হাত এই চর্মরোগের আক্রান্ত হতে পারে, (১) হাতের ঘামাছি, (২) চামড়া ফোলা, (৩) একজিমা, (৪) চর্মরোগ অর্থাৎ ঐ জীবাণু যেটা কোন জিনিসের উপর ময়লার মতো জমে যায়, (৫) চামড়ার রং পরিবর্তন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। যখন আমরা হাত ধুয়ে নিই তখন আঙ্গুল সমূহের মাথা থেকে কিরণ (জঅণঝ) বের হয়ে এমন এক বৃত্ত সৃষ্টি করে যার ফলে আমাদের আভ্যন্তরীন বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা সচল হয়ে উঠে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ এক বৈদ্যুতিক স্রোত আমাদের উভয় হাতে একত্রিত হয়। এতে আমাদের উভয় হাতে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়।
কুলি করার রহস্যাবলী
প্রথমে হাত ধৌত করা হয়। ফলে তা জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। অন্যথায় এগুলো কুলির মাধ্যমে প্রথমে মুখে তারপর পেটে গিয়ে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে।বাতাসের মাধ্যমে অসংখ্য ধ্বংসাত্মক জীবাণু, তাছাড়াও খাদ্যের অনুকণা আমাদের মুখ ও দাঁতের মধ্যে লালার সাথে লেগে থাকে। অতএব, অযুর মধ্যে মিসওয়াক ও কুলির মাধ্যমে ভালভাবে মুখ পরিস্কার হয়ে যায়। যদি মুখ পরিস্কার করা না হয় তাহলে এই ব্যাধিগুলো সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, (১) এইডস যার প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে মুখ পাকাও রয়েছে, এইডস রোগের সমাধান ডাক্তাররা করতে পারে না, এই রোগে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অচল হয়ে যায়। এতে রোগের মোকাবিলা করার শক্তি থাকে না এবং রোগী দূর্বল হয়ে যায় এবং রোগী তীলে তীলে মারা যায়। (২) মুখের পার্শ্বদ্বয় ফেটে যাওয়া, (৩) মুখ ও উভয় ঠোঁট দাদ, ছত্রাক (MONILIASIS) হওয়া, (৪) মুখের মধ্যে ক্ষত হওয়া ও ছাল পড়া। তাছাড়া রোজা না হলে কুলির সাথে গরগরা করাও সুন্নাত। নিয়মিতভাবে গরগরাকারী টনসিল (TONSIL) বৃদ্ধি ও গলার বহু রোগ এমনকি গলার ক্যান্সার থেকে নিরাপদ থাকে।
নাকে পানি দেয়ার রহস্যাবলী
ফুসফুসের জন্য এমন বাতাস প্রয়োজন হয় যা জীবাণু, ধোঁয়া ও ধূলাবালি থেকে মুক্ত হবে। আর এতে ৮০% আর্দ্রতা থাকবে। এই বাতাস পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নাকের ন্যায় এক মহান নিয়ামত দান করেছেন। বাতাসকে স্যাঁতসেঁতে করার জন্য নাক দৈনিক প্রায় ১/৪ গ্যালন আর্দ্রতা সৃষ্টি করে। পরিশুদ্ধতা ও অপরাপর কঠিন কাজ নাকের বাঁশির (ছিদ্রের) লোমের মাথাগুলো সম্পাদন করে থাকে।নাকের ভিতর এক দূরবীন (সুক্ষ্মতি সূক্ষ্ম) অর্থাৎ (MICROSCOPIC) ঝাড়ু রয়েছে। এই ঝাড়ু খোলা চোখে দেখা যায় না এমন জালি রয়েছে যা বাতাসের মাধ্যমে প্রবেশকারী জীবাণূগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। তাছাড়া এই অদৃশ্য জালির দায়িত্বে অন্য এক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও রয়েছে। যাকে ইংরেজীতে (LYSOZUIM) বলা হয়। এর মাধ্যমে নাক উভয় চোখকে সংক্রমণ (INFECTION) হতে রক্ষা করে।
اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ অযুকারী নাকে পানি দেয়, যার ফলে শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র নাকের পরিচ্ছন্নতা লাভ হয়। পানির মধ্যে কার্যকরী বৈদ্যুতিক স্রোত নাকের ভিতরকার অদৃশ্য জালির কার্যকারীতাকে জোরদার করে। মুসলমানগণ অযুর বরকতে নাকের অসংখ্য সংকটর্পূণ রোগ থেকে নিরাপদ থাকে। স্থায়ী সর্দি-কাশি এবং নাকের ব্যথাজনিত রোগ-ব্যাধির জন্য নাক ধৌত করা (অর্থাৎ-অযুর ন্যায় নাকে পানি দেয়া) অত্যন্ত উপকারী।
মুখমন্ডল ধৌত করার রহস্যাবলী
বর্তমানে আকাশ বাতাসে ধোঁয়া ইত্যাদির দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সীসা প্রভৃতি আবর্জনার আকারে চোখ, চেহারা ইত্যাদিতে জমতে থাকে। যদি মুখমন্ডল ধৌত করা না হয় তাহলে চেহারা ও চোখ অনেক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এক ইউরোপীয় ডাক্তার তার এক প্রবন্ধে লিখেছেন: যার শিরোনাম ছিল “চোখ, পানি, স্বাস্থ্য (EYE, WATER, HEALTH) ।” এতে তিনি এই বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে, আপনার উভয় চোখ দিনে কয়েকবার ধৌত করতে থাকুন অন্যথায় আপনাকে বিপজ্জনক রোগের কবলে পড়তে হতে পারে। মুখমন্ডল ধৌত করার ফলে মুখের উপর ব্রণ বের হয় না, আর হলেও তা খুবই কম। রূপ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এই বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে, সবধরণের ক্রীম (CREAM) ও লোশন (LOTION) ইত্যাদি মুখমন্ডলে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। চেহারাকে লাবণ্যময় করার জন্য চেহারাকে (দৈনিক) কয়েকবার ধৌত করা আবশ্যক। আমেরিকান কাউন্সিল ফারবিউটির শীর্ষস্থানীয় সদস্য ‘বায়চার’ যথার্থই উন্মোচন করেছেন। তিনি বলেন: “মুসলমানদের জন্য কোন ধরণের রাসায়নিক লোশনের প্রয়োজন নেই। অযুর মাধ্যমে তারা তাদের মুখমন্ডল ধৌত করে বহু রোগ থেকে নিরাপদ হয়ে যায়।”
পরিবেশ বিভাগের বিশেষজ্ঞগণ বলেন: “মুখমন্ডলের এলার্জি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য একে বার বার ধৌত করা উচিত।” اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ এইরূপ শুধুমাত্র অযু দ্বারাই সম্ভব। اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ অযুর মধ্যে মুখমন্ডল ধৌত করার ফলে এলার্জি থেকে চেহারা নিরাপদ থাকে, চেহারা ম্যাসেজ হয়ে যায়, রক্তের সঞ্চালন চেহারার দিকে সচল হয়, ময়লা-আবর্জনাও ঝরে যায় এবং চেহারার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়।
অন্ধত্ব থেকে নিরাপত্তা লাভ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! চোখের এমন একটি রোগ রয়েছে, যে রোগে চোখের মূল আর্দ্রতা কমে যায় অথবা নিঃশেষ হয়ে যায় এবং রোগী ধীরে ধীরে অন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে যদি ভ্রগুলোকে সময়ে সময়ে সিক্ত করা হয় তাহলে এই ভয়ংকর রোগ থেকে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ অযুকারী মুখমন্ডল ধৌত করে আর এতে তার ভ্রগুলো সিক্ত হতে থাকে। আশিকানে রাসূলের দাঁড়িও অযুতে ধৌত করা হয়, আর এতে সুন্দর রহস্য রয়েছে;ডাঃ প্রফেসর জর্জ আইল বলেন: “মুখ মন্ডল ধৌত করার ফলে দাঁড়িতে লেগে থাকা জীবাণুগুলো ভেসে যায়। গোড়ায় পানি পৌঁছার ফলে লোমগুলোর শিকড় মজবুত হয়। খিলাল করার দ্বারা উকুনের সম্ভাবনা থাকে না। তাছাড়া দাঁড়িতে পানির আর্দ্রতার স্থিতির ফলে ঘাঁড়ের পাট্টা, থাই রাইড গ্ল্যান্ড ও গলার ব্যাধি সমূহ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
মাসেহ এর রহস্যাবলী
মাথা ও ঘাঁড়ের মাঝখানে হাবলুল ওয়ারীদ অর্থাৎ শাহরগ (গ্রীবাস্থি ধমনী) এর অবস্থান। তা মেরুদন্ডের হাড় ও মজ্জা এবং শরীরের সকল জোড়ার সাথে সম্পৃক্ত। যখন অযুকারী ঘাঁড় মাসেহ করে তখন উভয় হাতের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক স্রোত বের হয়ে শাহ রগে জমা হয় এবং মেরুদন্ডের হাড় বয়ে শরীরের সকল শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিরা-উপশিরা শক্তি লাভ করে।
কনুই ধৌত করার রহস্যাবলী
কনুইতে তিনটি বড় বড় রগ রয়েছে যা হৃৎপিন্ড, যকৃৎ (কলিজা) ও মস্তিষ্কের সাথে সম্পৃক্ত। শরীরের এই অংশটা সাধারণত কাপড়ে আবৃত থাকে। যদি তাতে পানি ও বাতাস না লাগে তাহলে মস্তিষ্ক ও শিরার বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হতে পারে। অযু করার সময় কনুই সহ হাত ধৌত করার ফলে হৃৎপিন্ড, যকৃৎ (কলিজা) ও মস্তিষ্কে শক্তি পৌঁছে থাকে এবং এইভাবে اَلْحَمْدُ لِلّٰہ عَزَّوَجَلَّ অযুকারী এই সমস্ত রোগ থেকে নিরাপদ থাকবে। তাছাড়া কনুই সহ হাত ধৌত করার ফলে বুকের মধ্যে সঞ্চিত চমকগুলোর সাথে সরাসরি মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায় এবং চমকগুলোর সমাগম এক অবস্থার আকার ধারণ করে। এই আমল দ্বারা হাতের জোড়া সমূহ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে।
পাগলদের ডাক্তার
এক ব্যক্তির বর্ণনা: “আমি ফ্রান্সের এক স্থানে অযু করছিলাম। দেখলাম, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে খুব গভীরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। যখন আমি অযু শেষ করলাম তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন: “আপনি কে এবং কোথাকার অধিবাসী?” আমি বললাম: “আমি একজন পাকিস্তানী মুসলমান।”তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন:“পাকিস্তানে কয়টি পাগলাগারদ আছে?”এই আশ্চার্য্যজনক প্রশ্নে আমি চমকে গেলাম, কিন্তু আমি বলে দিলাম: “দু’চারটা হবে।” জিজ্ঞাসা করলেন: “এক্ষুণি আপনি কি করলেন?”আমি বললাম: “অযু।” তিনি বললেন: “কি প্রতিদিন করেন?” আমি বললাম: “হ্যাঁ! বরং দৈনিক পাঁচবার।”তিনি খুবই আশ্চর্য্য হয়ে বললেন: “আমি মানসিক হাসপাতালের (MENTAL HOSPITAL) সার্জন এবং পাগলামির কারণ সমূহের গবেষণা আমার কাজ।
আমার গবেষণার সিদ্ধান্ত হলো এই যে, মস্তিষ্ক হতে সারা শরীরে সংকেত যায় এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। আমাদের মস্তিষ্ক সব সময় তরল পদার্থে (FLUID) সাতরিয়ে (FLOAT) যাচ্ছে। এইজন্য আমরা দৌড়াদৌড়ি করলেও মস্তিষ্কের কিছু হয় না। যদি তা শক্ত (RIGID) কিছু হতো তাহলে এতদিনে হয়ত ভেঙ্গে যেতো। মস্তিষ্ক হতে কিছু সূক্ষ্ম রগ (CONDUCTOR) সঞ্চালক হয়ে আমাদের ঘাঁড়ের পিছন দিয়ে সারা শরীরে চলে গেছে। যদি চুলগুলোকে অতিরিক্ত লম্বা করা হয় এবং গর্দানের পিছনের অংশ শুষ্ক রাখা হয় তাহলে এই (CONDUCTOR) সঞ্চালক রগগুলোতে শুষ্কতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রে এইরূপও হয়ে থাকে যে, মস্তিষ্ক নিষ্ক্রীয় হয়ে তারা পাগলে পরিণত হয়। অতএব আমি ভাবলাম, ঘাঁড়ের পিছনের অংশ দিনে দু’চারবার যেন অবশ্যই ভিজানো হয়। এক্ষুণি দেখলাম আপনি হাত, মুখ ধৌত করার পাশাপাশি ঘাঁড়ের পিছনের অংশও কিছু করেছেন। বাস্তবিকই আপনারা পাগল হতে পারেন না।” তাছাড়া ঘাঁড় মাসেহ করার ফলে তাপের প্রভাবের ক্ষতি ও ঘাঁড় ভাঙ্গা জ্বর থেকেও বাঁচতে পারা যায়।
পা ধৌত করার রহস্যাবলী
পা সবচেয়ে বেশি ময়লাযুক্ত হয়ে থাকে। প্রথমে জীবাণু পায়ের আঙ্গুল সমূহের মাঝখানে থেকে শুরু হয়। অযু করার সময় পা ধৌত করার ফলে ধূলা-বালি ও জীবাণুগুলো (INFECTION) ভেসে যায় এবং অবশিষ্ট জীবাণু পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করার ফলে বের হয়ে যায়। অতএব অযুর মধ্যে সুন্নাত অনুসারে পা ধৌত করার ফলে ঘুমের স্বল্পতা, মস্তিষ্কের শুষ্কতা, ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তা (DEPRESSION) এর মত অস্বস্তিকর রোগ সমূহ দুরীভূত হয়।
অযুর অবশিষ্ট পানি
আ’লা হযরত رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ বলেন: হুযুর পুরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم অযু করে বেঁচে যাওয়া পানি দাঁড়িয়ে পান করে নিতেন। অন্য এক হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে: “৭০টি রোগের শিফা।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া, ৪র্থ খন্ড, ৫৭৫ পৃষ্ঠা) ফোকাহায়ে কিরামগণ رَحِمَہُمُ اللہُ السَّلَام বলেন: যদি কোন পাত্র বা বদনায় অযু করা হয়, সেটার বেঁচে যাওয়া পানি দাঁড়িয়ে পান করা মুস্তাহাব। (তাবইনুল হকাইক, ১ম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা) অযুর বেঁচে যাওয়া পানি পান করার ব্যাপারে এক মুসলমান ডাক্তার বলেছেন: (১) এর প্রথম প্রভাবে মূত্রথলীর উপর পড়ে, প্রস্রাবের প্রতিবন্ধকতা দূর হয় এবং খোলাসাভাবে প্রশ্রাব বের হয়ে আসে, (২) অবৈধ কামভাব হতে মুক্তি পাওয়া যায়, (৩) যকৃত, (কলিজা) পাকস্থলী ও মূত্রথলীর উত্তাপ দূর হয়।
অযুর রহস্য শুনার কারণে ইসলাম গ্রহণ
এক ব্যক্তির বর্ণনা: “আমি বেলজিয়ামে কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অমুসলিম শিক্ষার্থীকে ইসলামের দাওয়াত দিলাম। সে জিজ্ঞাসা করলো: “অযুর মধ্যে কি কি বৈজ্ঞানিক রহস্য আছে?” আমি নির্বাক হয়ে যাই। তাকে একজন আলিমের নিকট নিয়ে গেলাম কিন্তু তাঁর কাছেও এর কোন জ্ঞান ছিল না। অবশেষে বিজ্ঞানের জ্ঞান রাখেন এমন এক ব্যক্তি তাকে অযুর যথেষ্ট সৌন্দর্য বর্ণনা করলো কিন্তু গর্দান মাসেহ করার রহস্য বর্ণনা করতে তিনিও অপারগ হলেন। এরপর সে অমুসলীম (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) চলে যায়। কিছু দিন পর এসে বলল, “আমাদের প্রফেসর লেকচারের মাঝখানে বলেছেন, “যদি গর্দানের পৃষ্ঠদেশে ও দু’পার্শ্বে দৈনিক কয়েক ফোটা পানি লাগিয়ে দেয়া হয় তাহলে মেরুদন্ডের হাড় ও দূষিত মজ্জার সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট ব্যাধি সমূহ থেকে নিরাপদ থাকা যায়।” এটা শুনে অযুর মধ্যে গর্দান মাসেহ্ করার রহস্য আমার বুঝে এসে যায়। অতএব আমি মুসলমান হতে চাই এবং শেষ পর্যন্ত বাস্তবেই সে মুসলমান হয়ে গেলো।
صَلُّوْا عَلَی الْحَبِیْب! صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلٰی مُحَمَّد
সংগৃহীত