আশুরা বা ১০ই মহররমের দিন ৪টি কাজ হারাম
-আহলে বাইতগণের মর্যাদা ও পবিত্রতার কথা পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে । একজন মুমিন কখনই তাদেরকে ভালোবাসতে দ্বিধাবোধ করবে না, যদি কেউ আহলে বাইতের শানে বেয়াদবি করে বা তাদের বিরুদ্ধচারণ করে তাহলে সে প্রকাশ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধচারণকারী হিসেবে বিবেচিত হবে ।
আসুন এবার মূল আলোচনায় ফিরে যায় ।
অনেক জায়গায় আশুরা উপলক্ষে মানুষ রোজা রাখে, নামাজ পড়ে, দান-খয়রাত করে, শহীদানে কারবলার জন্য ইসালে সওয়াব করে, ইত্যাদি নিঃসন্দেহে এগুলি উত্তম কাজ ।
কিন্তু অনেক জায়গায় শহরে ও গ্রামে আশুরা বা ১০ মহররম উপলক্ষে খুব বেশি ভক্তি ও হোসাইন (রাঃ) প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে, শরীয়ত বিরোধী কাজ করে বসে । সারা বছর নামাজ পড়ে না, রমজানে রোজা রাখে না, অথচ মহররম মাস আসলে, মনে হয় তাদের মত আশিক আর কেউ নাই ।
অতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে এই দিন উপলক্ষে যা করা দরকার তা বাদ দিয়ে যা অবৈধ বা হারাম সেগুলিকে নিয়ে মাতামাতি করে । যার দ্বারা আহলে বাইতের প্রকাশ্যে বেয়াদবি করা হয়।
এমনই ৪টি বড় বেয়াদবি ও হারাম কাজ হল-
(১) মাতম করাঃ- শহীদানে কারবালা (রাঃ)গণকে স্মরণ করা এবং দুঃখে দুঃখিত হওয়া, চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরানো,তাদেরকে মোহাব্বতে করা অবশ্যই জায়েজ তবে মাতম করা জায়েয নেই । হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে –
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, সে ব্যক্তি আমাদের দলের লোক নয়, যে (মৃতের শোকে) নিজ মুখমন্ডলে হাত দ্বারা আঘাত করে, জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং অন্ধকার যুগের লোকদের মত হা-হুতাশ (মাতম) করে।
(সহীহ বুখারী ১২৯৭)
এমন একাধিক হাদীস রয়েছে, সে সমস্ত হাদিসগুলো কে সামনে রেখে ওলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে একমত হয়েছেন যে মাতম করা নাজায়েজ ও হারাম ।
(২) বুক ও পিঠ ক্ষত করাঃ-
ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানুষের কষ্ট হোক, মানুষ বিপদে পড়ুক, মানুষের ক্ষতি হোক, এমন কোনো নির্দেশ ইসলামে দেওয়া হয়নি । সেই জন্যই তো ইসলাম শান্তির ধর্ম নামে পরিচিত । সাধারণ বিবেক দ্বারা চিন্তা খুব সহজে উত্তর পাওয়া যাবে, যে ছুরি দিয়ে পিঠ আর বুক কাটা এটা ইসলাম ধর্মের কোন নির্দেশ হতে পারে না ।
আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না।
(সূরা আল বাক্বারাহ ১৯৫)
নিজের ক্ষতি করা, নিজে নিজেকে ধ্বংস করা, অকারনে শরীর কেটে ক্ষত করা জঘন্য অপরাধ যা সম্পূর্ণরূপে হারাম । ফলে বুক ও পিঠ কেটে রক্ত বের করে নিজের ক্ষতি করা কোনভাবেই জায়েজ নয় কঠোর ভাবে হারাম ।
(৩) নকল কারবালাঃ-
ইসলামের নকলের কোন স্থান নেই, ইসলাম আসল বিষয় গুলি গ্রহণ করে । নকল ভাবে কারবালা তৈরি করে মানুষদের ধোকা দেওয়া জায়েজ নেই । যেহেতু এগুলি বিধানের নেই বা এর কোন দলিল নেই, তাই এইগুলি করা মানে ইসলামের নামে বদনাম করা, এবং ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয় ।
(৪) তাজিয়া বের করাঃ-
ফাতাওয়ায়ে রাজাবিয়্যা ২৪ নম্বর খন্ড, ৫০১ পৃষ্ঠার মধ্যে, ইমাম আহমদ রেযা (রহঃ) তাজিয়া বের করার বিষয়ে না জায়েজ ফতোয়া দিয়েছেন । এছাড়া এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামায়ে কেরামগণ একমত পোষণ করেছেন যে তাজিয়া করা নাজায়েজ বা হারাম ।
এছাড়া ঢোল, তবলা, গান বাজনা, জোর করে ভয় দেখিয়ে, মানুষের কাছে চাঁদা নেওয়া, সম্পূর্ণরূপে হারাম ।
ইমাম হোসাইন কে ভালবাসি এ কথা যদি কেউ সত্য প্রমাণ করতে চাই, তাহলে হোসাইন (রঃ) এর আদর্শ নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে । তাহলেই প্রকৃত আশিক বলে বিবেচিত হবে, বুক কেটে, পিঠ কেটে, মাতম করে, তাজিয়া বের করে, নকল কারবালা তৈরি করে, কখনো আশিক হওয়া যাবে না বরং, ইসলামের শত্রু ও ইসলামের নামে কুসংস্কার ছড়ানোর অপরাধে অপরাধী বলে গণ্য হবে ।
তথ্য সংগ্রহ
আব্দুল আজিজ কাদরী