আহলে বাইত কারা?
আহলে বাইত (ﷺ)-এর প্রিয় ও স্নেহের পাত্র। সেদিকে নির্দেশ করেই আল্লাহর রাব্বুল আলামীন পবিত্র ক্বোরআনুল করীম এরশাদ ফরমান-
قل لااسئلكم عليه اجرا الا المودة فى القربى
অর্থাৎ : (হে হাবীব) আপনি বলে দিন যে, আমি (রাসূল) তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আমার বংশধরগণ ও নিকটাত্মীয়দের ভালোবাসা ব্যতীত। [সূরা শুরা-২৩]
এই আয়াতে কারীমা নাযিল হওয়ার পর, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র নিকট স্বীয় আত্মীয় সম্পর্কে বিনয়ের সাথে জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার নিকটাত্মীয় কারা? যাঁদের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে?।
[তাফসীর ইবনে কছীর- ২য় খণ্ড, ২১১ পৃষ্ঠা]
সরকারে কায়েনাত (ﷺ) এরশাদ করলেন- তারা হলেন হযরত আলী, হযরত ফাতিমা, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) এবং তাদের উভয়ের আওলাদ। [যারক্বানী আলাল মাওয়াহিব, সাওয়াইক্বে মুহরিক্বা, খুৎবাতে মুহররম- পৃষ্ঠা২৫৬, মুফতি জালালুদ্দীন আমজাদী রহ.]
বস্তুত আহলে বাইত ছিলেন রাসূলে করিম (ﷺ)-এর খুবই আপনজন। পবিত্র ক্বোরআনে তাদের পবিত্রতা ঘোষণা করা হয়েছে।
আল্লাহ্ পাকের ইরশাদ- ‘‘হে আহলে বাইত! নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আহযাব: ৩৩]
আয়াতটি নাযিল হলে হযরত আবু সাঈদ খুদরী, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ও উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, এটি ‘‘আহলে বাইত’’ তথা হজরত ফাতেমা, হযরত আলী, ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আহলে বাইতে রাসূল (ﷺ)-এর পরিচয়ে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ)এবং তাবেঈ হযরত মুজাহিদ, হযরত ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সহ অন্যান্য মুফাস্সিরের মতে আহলে বাইত বলতে ‘‘আহলে আবা’’ অর্থাৎ চাদরাবৃতদেরকে বুঝানো হয়েছে।
প্রশ্ন হলো কারা এই চাদরাবৃত?
এই প্রসঙ্গে একটি হাদীস শরীফে এসেছে- হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন নবী পাক (ﷺ) প্রত্যুষে বের হলেন, তখন তাঁর শরীর মুবারক কালো নকশা বিশিষ্ট চাদর দ্বারা আবৃত ছিল। অতঃপর ইমাম হাসান (রাঃ) আসলে নবীজী তাঁকে চাদরের মধ্যে শামিল করে নিলেন, এরপর ইমাম হোসাইন (রাঃ) এলে তাঁকেও নবীজী চাদর মুবারকে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর আসলেন হযরত ফাতিমা (রাঃ) আল্লাহর রসূল তাঁকেও চাদরের অভ্যন্তরে নিয়ে নিলেন। সর্বশেষ এলেন শেরে খোদা আলী (রাঃ)। তাঁকেও তাঁর নূরানী চাদর মুবারকে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর তিলাওয়াত করলেন- হে আহলে বাইত! নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। [সূরা আহযাব-৩৩]
অতঃপর রব্বুল আলামীনের দরবারে এই দোয়া করলেন- আল্লাহুম্মা হা-উলায়ে আহলু বাইতি ওয়াখাচ্ছাতি ফাআজহিব আনহুমুর রিজসা ওয়াতাতহিরহুম তাতহীরান।
অর্থাৎ হে আল্লাহ্। এরাই আমার আহলে বাইত এবং বংশীয় ও ঘনিষ্ঠজন। আপনি এদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন আর এদেরকে পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করুন।
[মুসলিম শরীফের বরাতে মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৫৬৮,মুসনাদেআহমাদ ২৫৩০০]
অপর এক হাদীসে পাকে এসেছে হযরত উসামা ইবনে যায়দ (রাঃ) বর্ণনা করেন, ‘‘আমি নবীজীর খিদমতে উপস্থিত হয়ে দেখলাম নবীজী এমনভাবে কম্বল জড়িয়ে আছেন যে, মনে হলো তার ভিতরে কিছু লুকিয়ে রেখেছেন। আমি আবেদন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্, (ﷺ) এর কম্বলের ভিতরে কী যেন লুকিয়ে আছে মনে হচ্ছে? সাথে সাথে নবীজী কম্বলখানা খুলে দিলেন। তখন দেখা গেল নবীজীর নূরানী কোলে বসে আছেন ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা। অতঃপর নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করলেন- আল্লাহুম্মা ইন্নি উহিব্বুহুমা ফাআহিব্বাহুমা ওয়া আহিব্বা মান আহাব্বাহুমা। অর্থাৎ হে আল্লাহ্! আমি এই দু’জনকে ভালোবাসি সুতরাং তুমিও এদেরকে ভালোবাস এবং ভালোবাস তাদেরকে যারা এদেরকে ভালোবাসবে। [তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৫৭০]
অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, আহলে বায়ত হলো শেরে খোদা আলী, হযরত মা ফাতেমা, হযরত ইমাম হাসান, হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম ও তাঁদের সন্তানগণ।