আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা
আহলে বাইতের প্রতি মুহাব্বতের বহু রেওয়ায়ত বিদ্যমান। তৎমধ্যে তিরমিযী শরীফে উল্লেখ রয়েছে- হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজের সময় আরাফাত দিবসে রাসূল পাক (ﷺ) কে ‘ক্বাসওয়া’ নামক উটের উপর আরোহনরত অবস্থায় বলতে শুনেছি ও দেখেছি- নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করলেন- হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের মাঝে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধর তাহলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো কিতাবুল্লাহ্ ও আমার বংশধর- আমার আহলে বাইত। [মিশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা ৫৬]
হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি হাসান-হোসাইন আলায়হিমাস্ সালামকে ভালোবেসেছে, সে যেন বাস্তবে আমি রাসূলকে ভালোবেসেছে। [ইবনে মাজাহ আস্ সুনান, ইমাম আহমদ- আল্ মুসনাদ, নাসায়ী- আস্ সুনানুল কুবরা ও ফাযায়িলুস্সাহাবা। যথক্রমে হাদীস ১৪৩,৭৮৬৩,৮১৬৮ ও ৬৪]
হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) বর্ণনা করেন, হযরত রাসূল করিম (ﷺ) হাসান-হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা সম্পর্কে বলেছেন, যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালোবাসবে তাকে আমি ভালোবাসবো, আর যাকে আমি (নবী) ভালোবাসবো, তাকে আল্লাহ্পাক ভালোবাসবেন, আর আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যাকে ভালোবাসেন তাকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যা নেয়ামত দ্বারা পরিপূর্ণ। [তাবরানী: আল্ মু’জামুল কবীর ৩/৫০ হাদীস ২৬৫৫ হায়সমী: মাজমাঊয যাওয়ায়েদ ৯/১৮১]
নবী পাক (ﷺ) নামাযরত ছিলেন। ইমাম হোসাইন নিজ ঘর হতে বের হয়ে মসজিদে নববীতে গেলেন এবং দেখতে পেলেন নানাজান রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) সাহাবীদের নিয়ে নামাযরত। শিশু ইমাম হোসাইন কালবিলম্ব না করে আল্লাহর রাসূলের কাঁধ মুবারকে ওঠে গেলেন। হুযূর-ই আকরাম সাজদাকে দীর্ঘ করে দিলেন। রাসূলুল্লাহরও ইচ্ছা ইমাম হোসাইন যতক্ষণ নিজের ইচ্ছায় নামবে না ততক্ষণ অবস্থান করুক। এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু অবতরণ করলে সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ও মাথা মুবারক সাজদা হতে উত্তোলন করলেন। নামায শেষে সাহাবীরা সাজদা দীর্ঘ করার কারণ জানতে চাইলেন এবং বললেন আজ থেকে কি সাজদা দীর্ঘ করার কোন হুকুম এসেছে? হে আল্লাহর রাসূল! হুযূর-ই আকরাম (ﷺ) উত্তরে বললেন, ‘না, সাজদা দীর্ঘ করার কারণ- আমার হোসাইন আমার কাঁধে উঠে গিয়েছিল। আর সে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাওয়ার আশঙ্কায় আমি সাজদা দীর্ঘ করি। [মুস্তাদরাক: ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠ ১৬৬]
ইমাম হোসাইনের এতটুকু কষ্টও নবীজী সহ্য করতে পারলেন না, তাও আবার নামাযরত অবস্থায়। তাহেল ৬১ হিজরি সনে করবালার প্রান্তরে কুখ্যাত ইয়াযীদের নরপশুরা সেই ইমামের নূরানী দেহ মুবারকে কত ধরনের নির্যাতন চালিয়ে পরিশেষে দেহ মুবারক হতে মাথা মুবারককে বিচ্ছিন্ন করে উল্লাস করল! (নাঊযুবিল্লাহ্)। এতে নবীজী কত কষ্ট পেয়েছেন তা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না।
নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করলেন,হোসাইন আমার থেকে আমি হোসাইন থেকে, যে হোসাইনকে ভালোবাসে তাকে মহান আল্লাহ্ ভালোবাসেন। [তিরমিযি শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮২]