কুরবাণীর ১০ প্রয়োজনীয় মাসায়েল

কুরবাণীর সঙ্গা :-

 নির্দিষ্ট পশু নির্দিষ্ট দিনে নেকির উদ্দেশ্যে আল্লাহর রাস্তায় জবাহ করাকে কুরবানী বলে ৷ কুরবাবাণী, মালিক-এ- নেসাব এর উপর ওয়াজিব,সে পুরুষ হক অথবা নারী ৷

কুরবাণী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত । সামর্থ্য থাকা সত্বেও (মালিক-এ-নেসাব হওয়া সত্বেও)  যে ব্যক্তি এই ইবাদাত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফের এসেছে ” যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে । [ সুনানে ইবনে মাজাহঃ-৩/৫২৯, মুস্তাদরাক হাকেম হাদীসঃ- ৩৫১৯ ]

প্রশ্ন -মালিক-এ-নেসাব কে?

উত্তর- হাজাতে আসলিয়া অর্থাৎ প্রয়োজনীয় (ব্যবহৃত) বস্তু যেমন -থাকার জন্য বাড়ি,চড়ার জন্য গাড়ি, জামা কাপড় ইত্যাদি বাদ রেখে, সাড়ে সাত ভরী সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরী রূপ বা সপরিমান অর্থের মালিক) হলে সে মালিক-এ- নেসাব হবে (ভারতে প্রায় ৩৫০০০ টাকা / বাংলাদেশে প্রায় ৫৩০০০ টাকার মালিক হলে)  তার উপর কুরবানী অজিব হবে ৷ কুরবাণী না করলে সে গুনেহগার হবে ৷

কুরবানী সম্পর্কে ১০টি প্রয়োজনীয় মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করা হল

১- মুসাফিরের উপর কুরবাণী ওজিব না তবে নেকির উদ্দেশ্যে নফল হিসাবে কুরবাণী করলে নেকি লাভ করবে ৷ (দুররে মুখতার)


২- কুরবাণীর দিন কুরবাণী না করে যদি কুরবানির পশু পরিমান অর্থ দান করে তাহলে কুরবাণী আদায় হবে না, কুরবাণীই করতে হবে ( ফাতাওয়ায়ে আলমগিরী)


 

৩- ১টি গরু, ১টি মহিশ,১টি উট এ সাত জন কুরবাণী দিতে পারবে, তার বেশি হবে না ৷ ছাগল,ভেড়া,দুম্বা এতে এক এক জন ই কুরবাণী করতে পারবে ৷


 

৪- কম পক্ষে, কুরবাণীর ক্ষেত্রে, উট ৫ বছর,মহিষ ও গরু ২ বছর ছাগল,দুম্বা,ভেড়া ১ বছর হতে হবে ৷ (দুররে মুখতার) তার কম হলে হবে না কিন্তু বেশি হলে সমস্যা নেই ৷ তবে ভেড়া যদি ৬ মাসে ১ বছরের সমান হয় তাহলে তার কুরবাণী দেওয়া যাবে, এটা শুধু ভেড়ার ক্ষেত্রে হবে ৷


 

৫- অন্ধ,ল্যাংড়া,কান কাটা,নাক কাটা,লেজ কাটা,বে দাঁত,হিজড়া ,জন্মগত কান না থাকা,অতি দুর্বল – এই সমস্ত আইব (ত্রুটি) থাকলে,সেই সমস্ত পশুর কুরবাণী বৈধ নয় ৷ ( বাহারে শরিয়াত,দুররে মুখতার)


৬- কুরবাণীর পশু ক্রয় করার পর যদি সে বাচ্চা জন্ম দেয় তাহলে তা কুরবাণীর দিন জবাহ করতে হবে, তবে সেই বাচ্চা বিক্রি করলে মূল্য দান করে দিতে হবে ৷ এছাড়া কুরবাণীর দিন যদি বাচ্চা জন্ম দেয় তাহলে একই হুকুম হবে, জবেহ করতে হবে অথবা সাদকা করে দিতে হবে ৷ (আলমগিরী)


৭- আমাদের নবী হজরত মোহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম) উম্মতের জন্য কুরবাণী করেছেন অতএব তিনার জন্য (তিনার নামে) কুরবাণী করা দরকার এটা নাসিবের ব্যপার (সবার কপালে জুটেনা)- ( বাহারে শরিয়াত)


৮ কারো পক্ষ থেকে বা কারো নামে কুরবাণী করা জায়েয তবে নিজের নামেও একটি থাকতে হবে ( অর্থাৎ মোট দুটি কুরবাণী করতে হবে)


৯- গোস্ত ৩ভাগ করতে হবে ১ভাগ দারিদ্র মানুষদের মাঝে বন্টন করতে হবে, আর ১ ভাগ আত্মীসজন,বন্ধগণের মধ্যে বন্টন করতে হবে ,বাকি এক ভাগ নিজে নিবে ৷ তবে পরিবারের মানুষ যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে তুলনামূলক বেশি গোস্ত পরিবারের জন্য রাখতে পারবে ৷ (কোরবাণী হল এবাদত) কুরবাণীর গোস্ত কোন অমুসলীমকে দেওয়া যাবে না ৷(কানুনে শরিয়াত)

* মৃত ব্যক্তির নামে কুরবাণী করলে সেই গোস্তের একই হুকুম ৷ তবে যদি মৃত ব্যক্তি অসিয়াত করে যায় তাহলে সমস্ত গোস্ত বন্টন করতে হবে, নিজে খাওয়া যাবে না ৷

নোট:- যদি কেও অমুসলিম বন্ধুকে গোস্ত দিতে চান তাহলে তার জন্য কুরবাণীর গোস্ত দিতে পারবেন না যদি কোরবাণীর গোস্ত ছাড়া অন্য কোন গোস্ত দিতে সক্ষম হন তাহলে দিতে পারেন ৷


১০- ১০ জিলহজ সূর্য উঠার পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবাণী করার সময় ৷ অর্থাৎ ৩দিন ২ই রাত্রী ৷ এই দিনগুলির মধ্যে যে কোন একটি দিনে কুরবানি করলেই কুরবাণী সুদ্ধ হবে
তবে প্রথম দিন (১০ জিলহজ) কুরবাণী করা উত্তম ৷ (কানুনে শারিয়াত)

Spread the love

Leave a Comment