বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
জীবনে সফল হওয়ার কুরআনী হেদায়াত
সারা বিশ্ব আজ সফল হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে। জীবনে আমরা কিছু না কিছু পাওয়ার জন্য বা কোনো কিছু অর্জনে সফল হওয়ার পেছনে ছুটি। সেই কিছুকে পাওয়ার জন্য জীবনে চারটি মাত্র বিষয়ে মনোযোগী হতে হয়। এই চারটি বিষয় আয়ত্ত করতে পারলে যে-কোনও সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে- ইহকালে এবং পরকালেও। সূরা ‘আসরের দ্বিতীয় আর তৃতীয় আয়াতে আল্লাহতায়ালা এই চারটি বিষয় আমাদের বলে দিয়েছেন। নিম্নে সেই চার বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, আসুন জেনে নিই-
১. বিশ্বাস রাখুন:- ঈমান শব্দের অর্থ হলো বিশ্বাস। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে সফলতা চাইলে এক আল্লাহতায়ালা, তাঁর রাসূল সা. এবং রাসূল সা.- এর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস রাখতে হবে। আর এই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে–আমি পারবই ইনশা আল্লাহ। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। ওয়াল ‘আসর ইন্নাল ইনসানা লাফি খুসর। ইল্লাল্লাযিনা আমানু।’ (সূরা আসর, আয়াত ১-২) সময়ের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ চরম ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ছাড়া, যারা ঈমান এনেছে।
২. যা করা দরকার তা করে যান:- অনেক সময় আমাদের এমন হয় যে নামাজ পড়তে ইচ্ছা করে না, যিকির করতে মন চায় না, পবিত্র কুরআন মজিদ পড়ারও আগ্রহ পাওয়া যায় না; তবু যেহেতু আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল সা. এই আমলগুলো আমাদের করতে বলেছেন- তাই এগুলো করে যেতে হবে। একইভাবে, দুনিয়াতে সাফল্য লাভের জন্যও কিছু রুটিন ওয়ার্ক আছে, সেগুলি আমাদের করে যেতে হবে। যেদিন ভালো লাগবে সেদিনও একজন ছাত্রকে পড়তে বসতে হবে, যেদিন ভালো লাগবে নাসেদিনও তাকে পড়তে বসতে হবে; একজন চাকুরিজীবীর যেদিন কাজে মন বসবে সেদিন অফিসের কাজ করতে হবে, আবার কাজে মনোযোগ না বসলেও জোর করে অফিসের কাজ করে যেতে হবে। যা করা উচিত তা করতে থাকতে হবে, আজ বা আগামীকাল এর ফল চোখে না দেখা গেলেও, পরশু এর ফল ঠিকই পাওয়া যাবে। ‘ওয়া আমিলুস স্বয়ালিহ্বাতি।’ (সূরা আসর, আয়াত: ৩) অর্থ: ‘যারা ভালো কাজ করে।’
৩. মানুষের উপকারে আসুন:- নবী হওয়ারও আগে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর পরোপকারী মানুষ। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর সমস্ত জীবন ব্যয় করেছেন অন্য মানুষদের ভাগ্য উন্নয়নে। আমরাও যত অল্প টাকাই পারি না কেন-তা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করব, যত অল্প শ্রমই হোক না কেন, তা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করব। পরিবার, বন্ধু, প্রতিবেশীদের সহ সমস্ত মানুষকে উপকারের চেষ্টা করব। কারও কাছ থেকে প্রতিদান চাইব না, প্রতিদান চাইব শুধু আল্লাহর কাছে। মানুষকে উপকার করার এই পথ মধুর নয়, বন্ধুর। অনেক সমালোচনা গাল-মন্দ শুনব, অনেক অকৃতজ্ঞ মানুষের দেখা পাব, অনেক সময় আর্থিক বা সামাজিক সংকটে পর্যন্ত পড়ে যেতে পারি- তবু ধৈর্য ধরব। যত অল্পই হোক না কেন, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কন্ট্রিবিউট করব। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘খেজুরের অর্ধেকটা দান করে হলেও নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।’ (বুখারী) ‘ওয়াতা ওয়া সওবিস সবর।’ (সূরা আসর) অর্থ ‘ অপরকে ধৈর্য্যের উপদেশ দেয়।’
৪. নতুন কিছু শিখুন:- আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদের সূরা ফাতির-এর ২৮ নম্বর আয়াতে বলেছেন: ‘আল্লাহতায়ালার বান্দাহদের মধ্যে শুধু তারাই তাকে ভয় করে যাদের জ্ঞান আছে।’ ইসলাম সম্পর্কে আপনি যত জানবেন ততই প্রাত্যহিক ইবাদতগুলো আপনার কাছে ধীরে ধীরে গভীর অর্থবহ হয়ে উঠবে। নামায-রোজাকে আপনার কাছে কেবল রুটিন ওয়ার্ক বলে মনে হবে না, বরং তখন আপনি এই ইবাদতগুলোর মাঝে ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করতে থাকবেন। পার্থিব জীবনেও সেই ব্যক্তি তত সফল, যে অন্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখতে পারে। আর অন্যের উপকারে আসতে চাইলে, আগে নিজের উন্নয়ন করতে হবে। ভালো কথা অন্যকে বলতে হলে আগে নিজেকে ভালো কথা শিখতে হবে। ‘ওয়াতা ওয়া সওবিল হাক্কি।’ (সূরা আসর, আয়াত: ৩) অর্থ: ‘একে অপরকে সঠিক উপদেশ দেয়।’
রুসমিনা খাতুন