জেনে নিন যেইসব কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে

যেইসব কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে

এখানে ওইসব অপরাগতার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে, যেগুলোর কারণে রমযানুল মুবারকে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু একথা মনে রাখতে হবে যে, অপারগতার কারণে রোযা মাফ নয়। ওই অপারগতা দূরীভূত হয়ে যাবার পর সেটার কাযা রাখা ফরয। অবশ্য, এ কাযার কারণে গুনাহ্ হবে না। যেমন, ‘বাহারে শরীয়ত’ এ ‘দুররে মুখতার’ এর বরাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সফর, গর্ভাবস্থায়, সন্তানকে স্তনের দুধ পান করানো, রোগ, বার্ধক্য, প্রাণ-নাশের ভয়, জোর-যবরদস্তি, পাগল হয়ে যাওয়া ও জিহাদ এ সবই রোযা না রাখার ওযর। এসব ওযরের কারণে যদি কেউ রোযা না রাখে, তবে সে গুনাহগার নয়। যদি কেউ প্রাণে মেরে ফেলার কিংবা কোন অঙ্গ কেটে ফেলার অথবা মারাত্মকভাবে প্রহারের বাস্তবিক পক্ষেই হুমকি দিয়ে বলে, “রোযা ভেঙ্গে ফেল।” আর রোযাদারও জানে যে, একথা যে বলছে সে যা বলছে তাই করে ছাড়বে, এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গা কিংবা না রাখা গুনাহ্ নয়। ‘জোর-যবরদস্তি মানে এটাই।’ (দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৪০২)

সফরের মধ্যেও রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। সফরের পরিমাণও জেনে নিন! সায়্যিদী ও মুরশিদী ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত মওলানা শাহ আহমদ রযা খান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর গবেষণা অনুসারে শরীয়ত সম্মত সফরের পরিমাণ হচ্ছে- সাতান্ন মাইল তিন ফরলঙ্গ (অর্থাৎ প্রায় ৯২ কিলোমিটার)। যে কেউ এতটুকু দূরত্বে সফর করার উদ্দেশ্যে আপন শহর কিংবা গ্রামের বসতি থেকে দূরে যায়, সে তখন শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসাফির। তার জন্য রোযা কাযা করার অনুমতি রয়েছে। আর নামাযেও কসর করবে। মুসাফির যদি রোযা রাখতে চায় তবে রাখতে পারবে; কিন্তু চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযে কসর করা তার জন্য ওয়াজিব। কসর না করলে গুনাহগার হবে। অজ্ঞতাবশতঃ যদি পূর্ণ (চার) রাকআত পড়ে নেয়, তবে ওই নামাযকে পুনরায় পড়া ওয়াজিব।
(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ্ সংশোধিত, খন্ড-৮ম, পৃ-২৭০) অর্থাৎ জানা না থাকার কারণে আজ পর্যন্ত যতো নামাযই সফরে পূর্ণভাবে আদায় করেছে সেগুলোর হিসাব করে চার রাকআত ফরয কসরের নিয়্যতে দু দু রাকআত করে পুনরায় পড়তে হবে। হাঁ, মুসাফির মুকীম ইমামের পেছনে ফরয চার রাকআত পূর্ণ পড়তে হয়। সুন্নতসমূহ ও বিতরের নামায পুনরায় পড়ার প্রয়োজন নেই। কসর শুধু যোহর, আসর ও ইশার ফরয রাকআত গুলোতেই করতে হয়। অর্থাৎ এগুলোতে চার ফরযের স্থানে দু’ রাকআত সম্পন্ন করা হবে। অবশিষ্ট সুন্নত সমুহ এবং বিতরের রাকআতগুলো পুরোপুরিই পড়তে হবে। অন্য কোন শহর কিংবা গ্রাম ইত্যাদিতে পৌঁছার পর যতক্ষণ ১৫ দিন থেকে কম সময়ের জন্য অবস্থান করার নিয়্যত করে নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে ‘মুসাফির’ই বলা হবে এবং তার জন্য মুসাফিরের বিধানাবলী প্রযোজ্য হবে। আর যদি মুসাফির সেখানে পৌঁছে ১৫ দিন কিংবা আরো বেশি সময় অবস্থান করার নিয়্যত করে নেয়, তাহলে এখন মুসাফিরের বিধানাবলী শেষ হয়ে যাবে এবং তাকে ‘মুকীম’ বলা হবে। এখন তার রোযাও রাখতে হবে, নামাযেও কসর করবে না।
যদি কোন ধরনের অসুখ হয় এবং যদি এ অবস্থায় তার রোযা রাখলে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা দেরীতে সুস্থতা লাভ করার প্রবল ধারণা হয় তবে তার জন্য রোযা না রেখে পরবর্তীতে তা কাজা করার অনুমতি রয়েছে। (এর বিস্তারিত বর্ণনা সামনে আসছে) কিন্তু আজকাল দেখা যায় মানুষ সামান্য সর্দি, জ্বর, মাথা ব্যাথার কারণে রোযা ছেড়ে দেয় অথবা আল্লাহরই পানাহ রোযা রেখে ভেঙ্গে ফেলে, এ রকম কখনো না হওয়া চাই, যদি কেউ কোন বিশুদ্ধ শরয়ী কারণ ছাড়া রোযা রাখা ছেড়ে দেয়, যদি ও সে পরবর্তীতে সারাজীবনও রোযা রাখে তবুও ঐ একটি রোযার ফযীলত কখনো পাবে না। যেহেতু ‘রোযা না রাখার ওযরসমূহ’ এর বিস্তারিত বর্ণনা সামনে করা হবে, সেহেতু তিনটি বরকতময় হাদীস বর্ণনা করা হচ্ছে:

(১) উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়িশা সিদ্দীকা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ বর্ণনা করেছেন, “হযরত সায়্যিদুনা হামযা ইবনে আমর আসলামী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বেশি রোযা রাখতেন। তিনি মদীনার তাজেদার, হযরত মুহাম্মদ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করে আরয করলেন, “আমি কি সফরে রোযা রাখবো?” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন, “ইচ্ছা হলে রাখো, আর ইচ্ছা না হলে রেখোনা।” (সহীহ বোখারী, খন্ড-১ম, পৃ-৬৪০, হাদীস নং-১৯৪৩)

(২) হযরত সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ বলেন, “১৬ রমযানুল মুবারক সারওয়ারে কায়েনাত হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর সাথে আমরা জিহাদে গেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ রোযা রেখেছিলেন, আর কেউ কেউ রাখেননি। তখন রোযাদারগণ যারা রোযা রাখেনি তাদের প্রতি দোষারোপ করেনি এবং যারা রোযাদার না তারাও রোযাদারদের বিরূদ্ধে দোষারূপ করেন নি, একে অপরের বিরুধিতা করেন নি।” (মুসলিম শরীফ, খন্ড-১ম, পৃ-৫৬৪, হাদীস নং-১১১৬)

(৩) হযরত সায়্যিদুনা আনাস ইবনে মালিক কাবী ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজদার হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা’আলা মুসাফির থেকে অর্ধেক নামায ক্ষমা করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামায দুরাকআত পড়বে।) আর মুসাফির ও স্তন্যদাত্রী এবং গর্ভবতীর রোযা ক্ষমা করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ: তখন রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছেন। পরবর্তীতে সে পরিমাণ রোযা কাযা আদায় করবে।) (তিরমিযী, খন্ড-২য়, পৃ-১৭০, হাদীস-১৭৫) (কিন্তু ওই অপারগতা শেষ হয়ে যাবার পর প্রতিটি রোযার পরিবর্তে একটি করে রোযা কাযা করতে হবে।)

<<< সবাই শেয়ার করে অন্যদের জানিয়ে দিন >>>

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আসন্ন মাহে রমজানে আমাদের বেশি বেশি নেক আমল তৌফিক দান করুন। #আমীন।

Spread the love

Leave a Comment