নামাজে বাজে চিন্তা আসে কেন?
নামাজে বাজে চিন্তা দূর করার উপায়
নামাজে দাঁড়ালে বিভিন্ন চিন্তা মাথার মধ্যে ঘোরাফেরা করতে শুরু করে, মাথা ভারী হয়ে যায়, মনে হয় মাথার অপর কোন বোঝা চেপে আছে, যা নামাজে অমনোযোগ সৃষ্টি করে। অথচ নামাজের বাইরে অন্য সময় এত চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে আসেনা। তাই আজ আমরা জানবো নামাজ শুরু করলে পৃথিবীর বিভিন্ন চিন্তা মাথায় আসে কেন এবং এ থেকে বাঁচার উপায় কি ।
তো চলুন শুরু করি
নামাজ জান্নাতের চাবি, নামাজ মুমিনের মেরাজ, নামাজ চোখের জ্যোতি ও কবরের বাতি । নামাজ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা উপহার হিসাবে মেরাজের রাত্রিতে দান করেছেন। প্রথম যখন আল্লাহ এই উপহার নবী (সাঃ) কে দান করেন তখন তা ছিল ৫০ ওয়াক্ত । মেরাজ থেকে ফেরার পথে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে তিনার সাক্ষাৎ হয় । তিনি জিজ্ঞেস করেন আল্লাহ আপনার উম্মতের জন্য কি ফরজ করেছেন । নবীজী (সাঃ) বলেন ৫০ ওয়াক্ত নামাজ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বলেন আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে যান ,কিছু কম করানোর জন্য কারণ আপনার উম্মত এত নামাজ আদায় করতে পারবে না । কখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরে যান এবং আল্লাহ তায়ালা কিছু কম করে দেন এভাবে কয়েকবার আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং আল্লাহ প্রতি বারেই নামাজ কম করতে থাকেন অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত অবশিষ্ট রয়ে যায় যা আদায় করা ৫০ রক্তের সমান ।
ইবলিশ শয়তান ও তার দলবল কখনো চাই না যে একজন মুমিন ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব হাসিল করুক তাই নামাজে দাঁড়ালে ইবলিশ শয়তানের সঙ্গীরা অসওয়াসা দিতে শুরু করে এবং বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা মাথার মধ্যে নিয়ে এসে নামাজের ক্ষতি করতে চেষ্টা করে । যার কারণে মানুষ মাঝে মাঝে নামাজের রাকাতের সংখ্যা ভুলে যাই, সূরা পড়তে ভুল করে, নামাজের বৈঠকে ভুল করে ইত্যাদি ।
ইবলিশ শয়তানের নেতৃত্বে যে শয়তান নামাজের মধ্যে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে তার নাম খিনযিয ।
নামাজে ওয়াসওয়াসা দুই কারণে হয়ে থাকে।
(ক) অভ্যন্তরীণ কারণ
(খ) বহিরাগত কারণ
অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ ভিতরের কারণ যা সম্পূর্ণ রূপে অন্তরের সঙ্গে জড়িত ।
মানুষের অন্তর/নফস তিন প্রকার।
(১) নফসে মুতমায়িন্নাহ
(২) নফসে লাওয়ামাহ
(৩) নফসে আম্মারাহ
(১) নফসে মুতমায়িন্নাহ
এটা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখতে সচেষ্ট থাকে। কোনো খারাপ বা অপছন্দনীয় কাজ দেখলেই মানুষের বিবেকে ধাক্কা দেয় এর দ্বারা মানুষ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।
(২) নফসে লাওয়ামাহ
এটা ভালো কাজের আদেশ করতে পারে না। সাধারণত ইমান রক্ষার লক্ষ্যে ভ্রান্ত আকিদা থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
(৩) নফসে আম্মারাহ
এটা নেক কাজের আদেশ করে না শুধু খারাপ ও হীন কাজের আদেশ দিয়ে থাকে। এটা মানুষকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়।
যার মাঝে যে নফস/অন্তর বেশি শক্তিশালী হয়, সে ওই নফসের অনুকরণে কাজ করে থাকে।
শয়তান সর্বদাই নাফসে আম্মারাহকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা করে । আর এর মধ্যেই শয়তান ওয়াসওয়াসা তৈরি করে । বিভিন্ন সময় ইবলিশের বিভিন্ন সহচর এসে থাকে এবং তারা ভিন্ন দায়িত্ব পালন করে । আর শয়তানের বিশ্বস্ত সহচর খিনজিব বিশেষ করে নামাজের মধ্যে গোলমাল তৈরী করতে কাজ করে ।
যার ফলে মাঝে মাঝে নামাজের মধ্যে অবাস্তব ও অশ্লীল চিন্তা ভাবনা বা খারাপ চিন্তা ঘোরাফেরা করে ।
(খ) বহিরাগত কারণ
দিবারাত্রিতে রাস্তাঘাটে ঘোরাফেরার দরুন অসংখ্য দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নামাজে দাঁড়ালে ওইসব দৃৃশ্য ভেসে ওঠে। ফিজিক্যালি বাস্তবে যে সমস্ত ঘোরাফেরা ও কাজকর্ম হয়ে থাকে সেটাকে নামাজের মধ্যে খিনজিব শয়তান বেশি বেশি মনে করিয়ে দেয় ।
তাহলে নামাজের মধ্যে খারাপ চিন্তা ভাবনা বা দুনিয়ার বিভিন্ন কথা মনে আসে কেন,তা আপনারা পরিষ্কার বুঝতে পারলেন ।
তো চলুন নামাজের মধ্যে এই অসওয়াসা বা অশ্লীল চিন্তা ভাবনা কম করতে বা এই থেকে মুক্তি পেয়ে এবং নামাজে মনোযোগী হতে কি করতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক ।
শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাচার পদ্ধতি-
(১) নাফসে মুতমায়িন্না ও নফসে লাওয়ামাহ কে বেশী বেশী নেক আমল করে শক্তিশালী করতে হবে ।
(২) ভালভাবে অযু করতে হবে ।
(৩) নামাজ শুরু করার পূর্বে একবার বিশেষ করে আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়তে হবে ।
(৪) নামাজের সূরা, রুকুর তাসবীহঃ, সেজদার তাসবিহ, আত্তাহিয়্যাতু দরুদ শরীফ ইত্যাদি ধীর-স্থিরভাবে মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে । এবং সর্বদাই সেই গুলির দিকে মনোযোগ স্থির রাখার চেষ্টা করতে হবে ।
তাহলে নামাজের মধ্যে আজেবাজে চিন্তা আশা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং নামাজে মনোযোগী হওয়া যাবে ।
তার পরেও যদি নামাজের মধ্যে কোন কোন সময় আজেবাজে চিন্তা চলে আসে তাহলে যা করতে হবে তা হল- নামাজের মধ্যেই খাস করে আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে হবে ।
পবিত্র হাদীছ শরীফ এর মধ্যে এসেছে ।
উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন-হে আল্লাহর রসূল! শাইতান আমার নামাজ ও কিরাআতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এটা এক (প্রকারের) শাইতান-যার নাম ‘খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থু থু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপরে আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন।
( এরপর এমন হলে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের কথা মতো কাজ করতাম আর সমস্যা দূর হয়ে যেত)
মনোযোগ সহকারে নামাজ শুরু করার পরেও যদি নামাজের মধ্যে খুব বেশি ওয়াসওয়াসা বা পৃথিবীর আজেবাজে চিন্তা এসে নামাজে গোলমাল বাঁধিয়ে দেয় তাহলে বুঝবেন খিধযিব শয়তান আপনার মনের মধ্যে ওয়াসওয়াসা তৈরি করে জোর কদমে তার দায়িত্ব পালন করছে ।
এমন বুঝতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে
মনে মনে আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম একবার পাঠ করে বামদিকে হালকা মাথা ঘুরিয়ে তিনবার থুথু ফেলবেন । তবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় বা ঘরে অথবা মসজিদে যদি কেউ থুতু ফেলে তাহলে সেটা কেউ পছন্দ করবে না সকলে নোংরা মানুষ ভাববে এবং এর দ্বারা বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে ,তাই খুব হালকা বাম দিকে মাথা ঘুরিয়ে কাঁধের উপরে শুধুমাত্র থু থু করবেন যার দ্বারা খুব সামান্য পরিমাণ কুয়াশার মতো বের হয়ে ছিটে লাগবে । এবং পোশাকের ওপর আলকাপ থুথুর ছিটে পড়বে , তারপর নামাজ পড়া হয়ে গেলে ভেজা গামছা দিয়ে মুছে নেবেন ।
নামাজের মধ্যে কেন আজেবাজে ও খারাপ চিন্তা মাথার মধ্যে আসে তা আমরা জানলাম এবং খারাপ অশ্লীল চিন্তাভাবনা যাতে না আসে তার জন্য কি করতে হবে সেটাও জানলাম এবং তার পরেও যদি নামাজের মধ্যে কোন ভাবে খিনযিব শয়তান ওয়াশ ওয়াশ তৈরি করে নামাজের গোলমাল বাঁধাতে সক্ষম হয় তাহলে তার ওয়াসওয়াসা থেকে বাচার জন্য কি করতে হবে সেটাও আমরা জানলাম ।
এরপরেও যদি এ সংক্রান্ত বিষয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন ইনশাআল্লাহ আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ।
লিখেছেন- আব্দুলআজিজ কাদরী