নারীদের প্রতি নবী (ﷺ) এর উপদেশ
আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারীদেরকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন । আমরা হাদীস শরীফের মধ্যে থেকে কিছু উপদেশ সংগৃহীত করেছি । প্রত্যেক নারীর কর্তব্য সেগুলি মেনে চলা ।
১ উপদেশঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, একবার মহানবী (ﷺ) নারীদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, তোমরা বেশী বেশী দান খায়রাত করো। যদিও তোমাদের অলংকারাদি থেকে হয়। কারণ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশী হবে। একথা শুনে জনৈকা মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাদের সংখ্যা বেশী হওয়ার কারণ কী? জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কারণ (কথায় কথায়) তোমরা অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অবাধ্য হও। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ৪০৩৬)
২ উপদেশঃ- হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, মহানবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, নারী যদি সময় মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাহলে (কিয়ামতের দিন) সে জান্নাতের (আট দরজার) যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান- হাদীস নং ৪১৩৯)
৩ উপদেশঃ– ইউসাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি ছিলেন হিজরতকারিণী মহিলাদের একজন –তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অবশ্যই তোমরা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ) ও তাক্বদীস ( সুবহানালা মালিকিল কুদ্দূস) আঙ্গুলের গিরায় হিসাব করে পড়বে। কেননা এগুলোকে ক্বিয়ামাতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে এবং কথা বলতে আদেশ দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা রহমাত (অনুগ্রহের কারণ) সম্পর্কে উদাসীন থেকো না এবং তা ভুলে যেও না। (আবূ দাঊদ ১৩৪৫, মিশকাত ২৩১৬)
৪ উপদেশঃ– হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (ﷺ) এক মহিলা সম্পর্কে বলা হল, অমুক মহিলা দিনে রোযা রাখে আর সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী করে,কিন্তু সে কটূ কথা বলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। মহানবী (ﷺ) বললেন, কোন লাভ নেই, সে জাহান্নামে যাবে। আর এক মহিলা সম্পর্কে বলা হল যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে রমযান মাসে রোযা রাখে, এবং সে যথাসাধ্য দান-সদকা করে, কিন্তু কাউকে কষ্ট দেয় না, মহানবী (ﷺ) বললেন, সে জান্নাতে যাবে। (মুসতাদরাকে হাকেম হাঃ নং ৭৩০২)
৫ উপদেশঃ–উম্মে সালামাহ রাযি. বলেন নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন (মুমিনা) নারী স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমীযী শরীফ হাঃ নং ১১৬১) স্বামীকে কষ্ট দিলে একজন নারী গুনাহগার হয় । রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পৃথিবীতে কোন স্ত্রীলোক যখনই তার স্বামীকে কষ্ট দেয় তখনই (জন্নাতের) বিস্তৃত চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মধ্যে তার (জান্নাতের) স্ত্রী বলে, হে অভাগিনী তাকে কষ্ট দিও না। তোমাকে আল্লাহ তা’আলা যেন ধ্বংস করে দেন! তোমার নিকট তো তিনি কিছু সময়ের মেহমান মাত্র। শীঘ্রই তোমার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আমাদের নিকট চলে আসবেন। (সহীহ ইবনে মাজাহ ২০৪১) নমে রাখতে হবে যে প্রত্যেক জান্নাতী নারী জান্নাতে তার স্বামীকে পাবে ।
৬ উপদেশঃ– তলক ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোন লোক তার স্ত্রীকে নিজ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে ডাকলে সে যেন সাথে সাথে তার নিকট আসে, এমনকি সে চুলার উপর রান্না-বান্নার কাজে ব্যস্ত থাকলেও। (মিশকাত (৩২৫৭), সহীহা ১২০২)
৭ উপদেশঃ– আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, কোন মাহরাম আত্মীয় ব্যতীত একাকী যেন কোন মহিলা এক দিন ও এক রাতের দূরত্বও অতিক্রম না করে। (সহিহ, ইবনু মাজাহ ২৮১১) (একা একজন মহিলা বেশি দূরে অপরিচিত জায়াতে যেন না যায়)।
৮ উপদেশঃ– হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, মহানবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ মহিলার উপর রহম করুন, যে মহিলা শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে। এবং স্বামীকেও (তাহাজ্জুদের জন্য) জাগিয়ে দেয়। (স্বামী) ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। অন্য হাদীসে উক্ত গুণ সম্পন্ন স্বামীর জন্যও মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ৭৪১০)
৯ উপদেশঃ– হযরত হুসাইন ইবনে মিহসান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একবার তার ফুফু কোন এক প্রয়োজনে মহানবী (ﷺ) এর দরবারে আসেন। প্রয়োজন পূরণ হলে মহানবী (ﷺ) তাকে সম্বোধন করে বললেন, তোমার স্বামী কি জীবিত আছে? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। পূনরায় মহানবী (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, তার সাথে কেমন ব্যাবহার কর? জবাবে তিনি বললেন, সাধ্যানুযায়ী তাঁর খেদমত করে থাকি। অতঃপর মহানবী (ﷺ) তাকে (সাবধান করে) বললেন, ভাল করে চিন্তা কর, তুমি তার কতটুকু খেদমত করে যাচ্ছ। কেননা সেই তোমার জান্নাত, আবার সেই তোমার জাহান্নাম। (অর্থাৎ তাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে জান্নাত লাভ করবে, অন্যথায় জাহান্নাম)। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ১৯০২৭)
১০ উপদেশঃ– হযরত আবূ হুমাইদ আস সায়েদী রাযি.-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ একবার নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার সাথে জামা‘আতে নামায পড়তে আমার ভাল লাগে। এ কথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তা আমি জানি। তবে শোন, তোমার জন্য তোমার ঘরের অভ্যন্তরে নামায পড়া বারান্দার কামরায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। আবার বারান্দার কামরায় নামায পড়া তোমার জন্য তোমার ঘরের আঙ্গিনায় নামায পড়ার চেয়ে উত্তম। এবং তোমার ঘরের আঙ্গিনায় নামায পড়া তোমার জন্য তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম, একইভাবে তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়া তোমার জন্য আমার মসজিদে এসে আমার সাথে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।
হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, একথা শোনার পর তিনি পরিবারের লোকদেরকে ঘরের ভিতরে নামাযের স্থান বানাতে বলেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী তা নির্মাণ করা হল। এরপর তিনি মৃত্যু পর্যন্ত এখানেই নামায পড়তে থাকেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ নং ২২১৭)
(স্বামী কোনো অন্যায় বা হারাম কাজের জন্য আদেশ করলে স্ত্রী তা শুনবে না আর এতে কোনো জুনাহ হবে না)