পীর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা
পীর শব্দটি ফার্সি আরবীতে যাকে শাইখ বলা হয়। শব্দগতভাবে এর অর্থ হল ‘জ্ঞানি’। কুরআন শরীফ ও হাদিছ শরীফে যাদের আউলিয়া, মুর্শিদ ও শায়খ বলা হয়েছে, ফার্সিতে তাদের পীর বলা হয়।
ফার্সি ভাষার শব্দ ‘পীর’ কেন বাংলায় ব্যবহার হচ্ছে?
পাক ভারতে ইসলামের প্রচার-প্রসার তথা স্থানীয় বিধর্মীদের মুসলমান হওয়ার ক্ষেত্রে ফার্সি ভাষাভাষি আউলিয়ায়ে কিরামদের ভূমিকাই মুখ্য। যে কারণে এ স্থানে মুসলমানদের বন্দিগী জীবনে ফার্সির অনেক পরিভাষাই ব্যবহৃত হয়। আরবী সালাত, সাওম এর পরিবর্তে যেরূপ ফার্সি নামায, রোযা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাই পীর শব্দের সাথে এলার্জি থাকার আর কোন কারণ দেখছি না।
এবার তাহলে পীর সাহেবদের প্রসঙ্গে আসি। দ্বীন ইসলামে পীর সাহেবদের কেন প্রয়োজন?
কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বলেন “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য হাদী বা হেদায়েতকারী রয়েছে।”(সূরা রাদ, আয়াত-৭) এখন মানুষদেরকে হেদায়েত করার জন্য যুগে যুগে নবী রসূলগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। কিন্তু নবী রসূল আসার পথ তো বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে কি হাদীগণেরও আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে না, বন্ধ হয় নি ?
(নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার পরে যুগে যুগে আউলিয়া কিরামগণই হাদী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত রাখবেন। আর সেই আউলিয়া কিরাম, ওলী-আল্লাহগণকেই উনার মুরীদদের নিকট পীর সাহেব বলা হয়।
যে কেউই কি পীর সাহেব দাবী করে অন্যদেরকে মুরীদ করতে পারে?
জি না। নিজেই ওলী-আল্লাহর দরজায় না পৌঁছতে পারলে অপরকে ওলী-আল্লাহ হওয়ার পথ দেখাবে কি করে ? কেউ যদি এরূপ করে, তবে সেক্ষেত্রে সে ভন্ড, প্রতারক, মুনাফিক। আর আপনি ভন্ডামীর জালে জড়াবেন কেন? (কোনো ভাবেই ভন্ড পীরের বায়াত গ্রহণ করা যাবে না)
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা কিরূপ লোক থেকে দ্বীন (ইলম বা নছীহত) গ্রহণ করছো, তা ভালরূপে লক্ষ্য করো।” (মুসলিম, তিরমিযী, মিশকাত শরীফ )।
যিনি হক্কানী পীর ছাহেব হবেন, উনাকে অবশ্যই আলেম হতে হবে। অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ-এর অধিকারী হতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমলও থাকতে হবে।
পীর সাহেবের কি কি বিষয় দেখে বাইয়াত হতে হবে?
বাইয়াত হওয়ার পূর্বে যে বিষয়গুলো তাহক্বীক বা যাচাই-বাছাই করতে হবে সেগুলো হলো,
(১) যার কাছে বাইয়াত হবে তিনি কোন হক্কানী পীর সাহেবের কাছ থেকে খিলাফতপ্রাপ্ত কিনা।
(২) আক্বীদা আহলে সুন্নতের অনুরূপ কিনা।
(৩) আমলের দিক থেকে সুন্নতের পাবন্দ কিনা।
(৪) ইলমের দিক থেকে এতটুকু ইলমের অধিকারী কিনা- যার দ্বারা নিজেকে এবং অধীনস্থ মুরীদদেরকে বিদয়াত-কুফরী- শেরেকী থেকে ফিরিয়ে হক্ব মতে-পথে রাখতে পারেন।
মুরীদ হওয়ার পরে কোন প্রকার কোন বিষয়ে কি, কেন ? বলতে পারবে না। বিনা প্রশ্নে সব বিষয় মেনে নিতে হবে। কেননা, মুরীদ তাছাউফের রাস্তায় নাবালক, আর পীর সাহেব সে পথের দিশারী। তবে হ্যাঁ, কোন বিষয় বুঝে না আসলে আদবের সহিত জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবে। মনে রাখতে হবে, বেয়াদব আল্লাহ পাকের রহমত থেকে বঞ্চিত।
এখানে সুধু পীর সম্পর্কে একটা ধারণা দেওয়া হলো , পীর মানা ও বায়াত করার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অন্য প্রবন্ধ পড়ুন।
মহান আল্লাহ পাক যেন আমাদের একজন হাদী-এ কামেল ওলী সাসিব করেন ৷ (আমীন)