পেশাব ও রক্ত দিয়ে সুরা ফাতেহা লিখার অপবাদ ও তার জবাব

পেশাব ও রক্ত দিয়ে সুরা ফাতেহা লিখার অপবাদ ও তার জবাব

ফিকহে হানাফির উপর আরোপিত আপত্তির জবাবঃ

লা-মাজহাবীরা (ফারাজীরা) অন্যান্য মাযহাবের তুলনায় হানাফি মাযহাবের বিরোধিতা একটু বেশিই করে থাকে । এমনকি তারা বিরোধিতা করতে গিয়ে ভালো করে না বুঝে, হানাফি মাযহাবের উপর অহেতুক আপত্তি তুলতে শুরু করে। যা খুবই দুঃখজনক।

এমনি এক বড় আপত্তির (পেশাব ও রক্ত দিয়ে সুরা ফাতেহা লিখার অপবাদের) জবাব তুলে ধরা হলো-

হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য কিতাব ফাতাওয়ায়ে শামিতে উল্লেখ আছে ,

لو رعف فكتب الفاتحة بالدم على جبهته وأنفه جاز للاستشفاء وبالبول أيضا إن علم فيه شفاء لا بأس به ، لكن لم ينقل
অর্থাৎ পেশাব অথবা রক্ত দিয়ে সূরা ফাতিহা লেখা জায়েজ। (ফাতাওয়া শামীঃ ১/২১০
) লা-মাজহাবীদের বক্তব্যঃ নাউযুবিল্লাহ। অথচ হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ তায়ালা হারাম বস্তুর মধ্যে চিকিৎসা রাখেন নি। ছিঃছিঃ হানাফিরা কত নিকৃষ্ট মানসিকতার অধিকারী।

উপযুক্ত জবাবঃ- এসমস্ত আপত্তি সাধারণত আহলে হাদিস (লা মাজহাবী) ভাইয়েরা করে থাকে। তারা আপত্তি তোলার ক্ষেত্রে কিছু জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে থাকে।এখানেও তেমনটি ঘটেছে। যেমন ইবারত পুরোটা উল্লেখ করলেও অনুবাদ পুরোটা করে না।

✍️প্রথম কথা হলো, হানাফি মাযহাব মতে বিনা অজুতে কুরআন মাজিদ স্পর্শ করাই জায়েজ নেই। একথা খোদ ফত্ওয়ায়ে শামিতেই বলা আছে। এছাড়া ফিকহে হানাফির নির্ভরযোগ্য সকল কিতাবেই একথা বলা আছে । বাদায়েউস সানায়ের ইবারত হলো এমন-
ولا…من مس المصحف بدون غلافه
অর্থাৎ(অজু ছাড়া)বিনা গিলাফে কুরআন স্পর্শ করা জায়েজ নেই।(বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৪৯) যেখানে বিনা অজুতে কুরআন ছোঁয়াই নাজায়েজ বলা হচ্ছে, সেখানে পেশাব দ্বারা কুরআনের সবচে মৌলিক সূরাটি লেখা কেমন করে জায়েজ বলা হতে পারে ?

✍️দ্বিতীয় কথা হলো,এই মাসয়ালাটি যেই অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে সেই অধ্যায়ের শিরোনাম হলো,

اختلف في التداوي بالمحرم وظاهر المذهب المنع

হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা বৈধ কি না, তা নিয়ে (ইমামদের) মতানৈক্য রয়েছে। যাহেরী মাজহাব হলো, এটা নিষিদ্ধ (হারাম)। (সুধু একটা আলোচনা করা হয়েছে,সরাসরি বৈধ বলা হয়নি)

আর শিরোনামেই উল্লেখ করা হয়েছে, হানাফি মাযহাবের ফত্ওয়া হলো অবৈধতার উপর এবং দলিল হিসেবে একটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে । যেই হাদিস দিয়ে তারা আপত্তি তুলে থাকে।

হাদিসটি হলো,
إن الله لم يجعل شفاءكم فيما حرم عليكم
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা হারাম বস্তুতে তোমাদের জন্য চিকিৎসা রাখেন নি।
(বুখারি- ফাতহুল বারিঃ ১০/৭৪)

“হায়রে কপাল মন্দ , চোখ থাকিতে অন্ধ” শুরুতেই স্পষ্ট বলে দিয়েছে, হারাম কোন কিছু দিয়ে চিকিৎসা জায়েজ নেই। সাথে হাদিস ও উল্লেখ করেছে। কিন্তু, হিংসার চশমা চোখে থাকার কারণে মনে হয় এগুলো দেখেতে পায় না।

✍️তৃতীয় কথা হলো,ফত্ওয়ায়ে শামিতে নাজায়েজের পক্ষেই বলা হয়েছে। যা তাদের মত ওয়ান টু এর ছাত্রদের জন্য বুঝা বড়ই কঠিন। কারণ, এটা উচ্চ লেভেলের কিতাব। এটা বুঝতে হলে কিছু পড়াশুনা করতে হবে এবং চোখ থেকে হিংসার চশমা খুলতে হবে।

আসুন দেখি ফাতওয়ায়ে শামিতে কি বলা হয়েছে

لو رعف فكتب الفاتحة بالدم على جبهته وأنفه جاز للاستشفاء وبالبول أيضا إن علم فيه شفاء لا بأس به ،لكن لم ينقل
অর্থঃ যদি কারো নাকে দিয়ে রক্তপড়া রোগ হয়, আর সে জানতে পারে যে, রক্ত অথবা পেশাব দিয়ে কপালে বা নাকে সূরা ফাতিহা লিখলে নিশ্চিত আরোগ্য লাভ করবে, তাহলে চিকিৎসার জন্য এমনটি করা জায়েজ হবে। কোন সমস্যা হবে না।
কিন্তু, (এর মধ্যে নিশ্চিত শিফা রয়েছে) এব্যপারে কুরআন হাদিসে কোন কিছু বর্ণিত হয় নি।(ফত্ওয়ায়ে শামি: ১/২১০)

বাস্তব কথা হলো, এই ইবারতের মধ্যেই তাদের আপত্তির জবাব রয়েছে। আর সে অংশটি হলো,
إن علم فيه شفاء لا بأس به لكن لم ينقل
অর্থাৎ যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, এমনটি করলে শিফা হবে,তাহলে কোন সমস্যা নেই। এর মানে, যদি নিশ্চিতভাবে জানা না যায় তাহলে সমস্যা আছে।
আর لكن لم ينقل শব্দের দ্বারা স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছে,জানার সুযোগ তো দূরের কথা সম্ভাবনাই নেই। কারণ, নিশ্চিত হওয়ার উপায় হলো তিনটি।

(১) বিবেক খাটিয়ে জানা। আর বিবেক কখনো একাজকে সমর্থন করবে না।

(২) মেডিকেল সাইন্স থেকে জানা। আর মেডিকেল সাইন্স তো দুআ দুরুদ বা আমালিয়াত বিশ্বাসই করে না।

(৩) কুরআন- হাদিস। আর কুরআন-হাদিসে এমন কোন কিছু বর্ণিত হয়নি।

তাহলে কথা কি দাড়াল?
যদি কনফার্ম হওয়া যায়, তাহলে জায়েজ। যেহেতু কনফার্মেশনের কোন সম্ভাবনাই নেই, সুতরাং এমনটি করা ও জায়েজ নেই। আর শামিতে এটাই বলা হয়েছে। এই একটি শব্দ لكن لم ينقل কে অভিযোগকারীদের মুখের উপর ছুড়ে দিয়ে বলা যায়, এই নে তোদের জবাব। আশাকরি সকলের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

এই অপবাদ দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই বিপদে পড়েছেন

পেশাব দিয়ে সূরা ফাতিহা লেখা আমাদের মতে জায়েজ নেই। বরং আহলে হাদিস শায়েখদের মতে জায়েজ। আসুন, এব্যাপারে তাদের সাথে একটু কথা বলি।

হানাফীঃ- আচ্ছা ভাই! কুরআনের আয়াত কি লেখা যাবে?

লা-মাজহাবীঃ- অবশ্যই। কেন যাবে না। #হানাফী- কি দিয়ে লেখা যাবে?

লা-মাজহাবীঃ- কালি দিয়ে

হানাফীঃ- অন্য কিছু দিয়ে লেখা যাবে না ?

লা-মাজহাবীঃ- হুম,, প্রত্যেক পাক বস্তু দিয়েই লেখা যাবে।

হানাফীঃ- তাহলে তো বীর্য, রক্ত, মদ এবং কুকুরের পেশাব ও পায়খানা দিয়ে ও কুরআনের আয়াত লেখা যাবে ।

লা-মাজহাবীঃ- কেন?

হানাফীঃ- আরে! আপনাদের ইমাম ও ফকিহ শায়েখ আল্লামা ওহিদুজ্জামান সাহেব তার এক কিতাবে লিখেছেন,

والمني طاهر..وكذلك الدم غير دم الحيض ورطوبة الفرج والخمر وبول الحيوانات غير الخنزير

অর্থাৎ বীর্য পাক। এবং হায়েযের রক্ত ছাড়া বাকি সব রক্ত; এমনকি মহিলাদের যৌনাঙ্গ দিয়ে বের হওয়া অন্যান্য আর্দ্র বস্তুসমূহ ও পাক। মদ পাক, শুয়োর ছাড়া বাকি জীবজন্তুর পেশাব ও পাক।(কানযুল হাকাইক মিন ফিকহি খাইরিল খালাইক:১৬)।

এই শায়েখ তার আরেক কিতাবে লিখেছেন,

وكذلك في بول الكلب وخراءه والحق أنه لا دليل على النجاسة

অর্থাৎ কুকুরের পেশাব ও পায়খানা নাপাক হওয়ার কোন দলিল নেই। (নুজুলুল আবরাব:১/৫০)।

যেহেতু বীর্য, রক্ত, মদ এবং কুকুরের পেশাব ও পায়খানা পাক। আর প্রত্যেক পাক বস্তু দিয়ে কুরআন লেখা জায়েজ। তাই এগুলো দিয়ে ও কুরআন লেখা যাবে।

লা-মাজহাবীঃ- মানে?? কিছুই বুঝলাম না।

হানাফীঃ- বুঝার দরকার নেই। আমিই বুঝিয়ে দিচ্ছি। এর মানে হচ্ছে, উপরে থুথু মারলে নিজের উপরই পড়ে।

লা-মাজহাবীঃ- স্পষ্ট বুঝিয়ে বলেন।

হানাফীঃ- আরে পেশাব অথবা রক্ত দিয়ে সূরা ফাতিহা লেখা জায়েজ হওয়া -এটা আমাদের আকিদা নয়। বরং আপনাদেরই আকিদা। বুঝলেন?

লা-মাজহাবীঃ- ইয়ে মানে…

হানাফীঃ- আচ্ছা, বুঝেছি। এখন থেকে আর অপপ্রচার করবেন না।

আল্লাহ যেন হেদায়াত দান করেন। আমিন

সংগৃহীত

👉🏼ইমাম আবু হানিফা (রঃ) উপর আহলে হাদিসের মিথ্যা অপবাদের জবাব ।

Spread the love

1 thought on “পেশাব ও রক্ত দিয়ে সুরা ফাতেহা লিখার অপবাদ ও তার জবাব”

Leave a Comment