বংশ ও বর্ণের কোনো গৌরব নেই
বুখারী শরীফের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত বিলাল হাবশী (রা:) ও হযরত আবু যর গিফারী (রা:) দু’জনেই প্রাথমিক কালের সাহাবী। দু’জন পরস্পরের উপর ক্রোধান্ধ হয়ে গালাগাল করতে শুরু করলেন। ক্রোধের তীব্রতায় আবু যর গিফারী (রা:) হযরত বিলাল (রা:) কে সম্বোধন করে বললেন: ‘হে কালোর বাচ্চা! হযরত বিলাল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ কথা বলে অভিযোগ করলেন। তিনি হযরত আবু যরকে (রা:) বললেন: ‘তুমি ওর মা’কে মন্দ বললে? দেখা যায় তোমার মধ্যে জাহিলিয়াতের স্বভাব-চরিত্র এখনও অবশিষ্ট রয়েছে।’
হযরত আবু যর (রা:) থেকেই বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন: ‘তুমি নিজ সম্পর্কে ভেবে দেখ। লাল বা কালো বর্ণের লোকেদের অপেক্ষা তুমি কোন অংশেই উত্তম ব্যক্তি নও। তুমি ওর ওপর কেবলমাত্র তাকওয়ার ভিত্তিতেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পার।’ (মুসনাদে আহমাদ)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমরা সকলেই আদমের সন্তান। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি দিয়ে।’ (বাযযার)
এ সবের সাহায্যে মুসলমানের বংশ, বর্ণ পিতৃপুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার ভিত্তিতে গৌরব করা ও অন্যদের তুলনায় নিজেদের বড়ত্ত্ব প্রমাণ করতে চেষ্টা করাকে ইসলাম সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে। কেননা, এগুলিই হচ্ছে জাহেলিয়াতের উপকরণ। নিতান্ত লালসার দাসত্ব করতে গিয়েই মানুষ এ কাজ করতে পারে। কাজেই আমি অমুকের ছেলে অমুকের বংশধর আর তুমি অমুক হীন বংশের লোক, আমি শ্বেতবর্ণ আর তুমি কৃষণাঙ্গ, আমি আরব আর তুমি অনারব ইত্যাদি ধরনের বিদ্বেষাত্মক ও হিংসাত্মক কথাবার্তা পরস্পরে বলার কোনো অবকাশ ইসলামে নেই।
বস্তুত, সমস্ত মানুষ যখন এক ও অভিন্ন মূল থেকে উৎসারিত, তখন পরবর্তী লোকদের পক্ষে বংশ গোত্র বা রক্ত নিয়ে গৌরব করার ও ওপরের তুলনায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর কোনও অর্থ হয় না, তার অধিকারও কারও থাকতে পারে না। বংশের কোনো গুরুত্ব আছে যদিও ধরে ননেওয়া যায়, তবু তার বংশে জন্ম গ্রহণকারী ব্যক্তির নিজের কি শ্রেষ্ঠত্ব থাকতে পারে বা তার কি অপরাধ মনে করা যেতে পারে? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওজস্বিনী কণ্ঠে ঘোষণা করেছেন: ‘তোমাদের এসব বংশ নিয়ে একে অপরের উপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পার না। কেননা, তোমরা সমস্ত মানুষই আদমের সন্তান–বংশধর। দ্বীনদারী ও আল্লাহ ভীতি ছাড়া তোমাদের কারও কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই অপর লোকদের উপর।’ (আহমাদ)
তিনি আরো বলেন, ‘সমস্ত মানুষই তো আদম-হাওয়ার বংশধর। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তোমাদের বংশ বা আভিজাত্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন না। আসলে তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে আল্লাহ ভীরু।’
বাপ দাদার বা বংশের উচ্চতা নিয়ে গৌরবকারী লোকদেরকে কঠোর ভাষায় সাবধান করে দিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘হে লোকেরা! বাপ-দাদাদের নিয়ে গৌরব করা ত্যাগ করো- সেসব বাপ-দাদা যারা মরে জাহান্নামের কয়লা হয়ে গেছে। নতুবা তারা পোকা-মাকড়ের তুলনায়ও অধিক হীন ও লাঞ্ছিত হবে। আল্লাহতায়ালা জাহেলিয়াতের আত্মম্ভরিতা ও বংশ গৌরব নির্মূল করে দিয়েছেন। এক্ষণে মানুষ হয় মুমিন মুত্তাকী হবে অথবা হবে পাপী দুশ্চরিত্র। সব মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট।’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, বায়হাকী
পোষ্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইল