বনী ইসরাঈলের ৩ব্যক্তি ও ফেরেস্তার ঘটনা
বনী ইসরাঈলের মাঝে তিনজন ব্যক্তি ছিল- ১ম জন কুষ্ঠরোগী ২য় জন টেকো এবং ৩য় জন অন্ধ।মহান স্রষ্টা আল্লাহ পাপ তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন এবং তাদের নিকট একজন ফেরেশতা প্রেরণ করলেন । অতঃপর (প্রথমে) কুষ্ঠরোগীর কাছে এসে সেই ফেরেশতা বললেন,তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস কোনটি? সে বলল, সুন্দর রং ও সুন্দর চামড়া। কেননা মানুষ আমাকে (কুষ্ঠ রোগের কারণে) ঘৃণা করে। তখন ফেরেশতা তার শরীরে হাত বুলিয়ে দিলেন। এতে তার রোগ দূর হল এবং তাকে সুন্দর বর্ণ ও সু্নদর চামড়া দান করা হল। অতঃপর তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমার নিকট কোন্ সম্পদ সবচেয়ে বেশী পছন্দনীয়? সে বলল, উট । তাকে তখন দশ মাসের গর্ভবতী একটি উটনী দেয়া হল। ফেরেশতা বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দেবেন।
তারপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে এসে প্রশ্ন করলেন,তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস কোনটি? সে বলল, সুন্দর চুল এবং এই টাক হ’তে মুক্তি লোকেরা যার কারণে আমাকে ঘৃণা করে। ফেরেশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। এতে তার টাক ভাল হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর চুল দান করা হল। এরপর ফেরেশতা বললেন, কোন মাল বা সম্পদ তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল,গরু । বর্ণনাকারী বলেন,তখন তাকে একটি গর্ভবতী গরু দেওয়া হল। ফেরেশতা বললেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দেবেন।
তারপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে এসে প্রশ্ন করলেন,তোমার অধিক পছন্দের জিনিস কোনটি’? সে বলল,আল্লাহ যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন, আমি যাতে মানুষকে দেখতে পারি। ফেরেশতা তার চোখে স্পর্শ করলেন। এতে তার চোখের দৃষ্টি আল্লাহ ফিরিয়ে দিলেন। এরপর ফেরেশতা প্রশ্ন করলেন,কোন মাল তোমার নিকট অধিক প্রিয়’? সে বলল, ছাগল। তাকে তখন এমন ছাগল দেয়া হল, যা অধিক সংখ্যক বাচ্চা দেয়।
তারপর ১ম জনের উট, ২য় জনের গরু এবং ৩য় জনের ছাগলের বাচচা হল।
ফলে একজনের উটে ময়দান ভরে গেল, অপরজনের গরুতে মাঠ পূর্ণ হয়ে গেল এবং আর একজনের ছাগলে উপত্যকা ভরে গেল।
তারপর তাদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবার সেই ফেরেশতা কুষ্ঠরোগীর কাছে তার প্রথম রূপ ধারণ করে এসে বললেন, আমি একজন মিসকীন। সফরে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আজ আল্লাহ ব্যতীত কেউ নেই, যার সাহায্যে আমি আমার গন্তব্যে পৌছাতে পারি। যে আল্লাহ তোমাকে সুন্দর বর্ণ, সুন্দর ত্বক ও সম্পদ দিয়েছেন, সে আল্লাহর নামে তোমার নিকট আমি একটা উট চায়ছি, যার সাহায্যে আমি গন্তব্যে পৌছাতে পারব। সে বলল,(আমার উপর) অনেকের অধিকার রয়েছে (আমি যেতে পারব না)। ফেরেশতা বললেন,তোমাকে বোধ হয় আমি চিনি। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না? লোকেরা তোমাকে কি ঘৃণা করত না? তুমি না নিঃস্ব ছিলে? অতঃপর আল্লাহ তোমাকে সম্পদ দিয়েছেন। সে বলল,এই সম্পদ তো আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পূর্বপুরুষ থেকে পেয়েছি। তিনি বললেন,তুমি যদি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে তোমাকে যেন আল্লাহ আগের মতো করে দেন।
এরপর তিনি টেকো ব্যক্তির কাছে তার প্রথম রূপ ধারণ করে এসে প্রথম লোকটিকে যা বলেছিলেন তা বললেন এবং সেও একই উত্তর দিল,যা পূর্বের লোকটি দিয়েছিল। ফেরেশতা একেও বললেন,তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
এরপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির কাছে তার আগের রূপ ধারণ করে এসে বললেন,আমি একজন মিসকীন মুসাফির। আমার সবকিছু সফরে শেষ হয়ে গেছে। এখন গন্তব্যে পৌঁছাতে আল্লাহ ব্যতীত আর কোন উপায় নেই, তারপর তোমার সহায়তায় চাই। সেই আল্লাহর নামে তোমার কাছে একটি ছাগল সাহায্য চায়ছি, যিনি তোমাকে তোমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ ছাগলটি দিয়ে আমি বাড়ি পৌছাতে পারব। লোকটি বলল,আমি অন্ধ ছিলাম। আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফেরত দিয়েছেন। আমি দরিদ্র ছিলাম, আল্লাহই আমাকে ধনী করেছেন। কাজেই তোমার যত ইচছা মাল বা সম্পদ তুমি নিয়ে যাও। আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহর ওয়াস্তে আজ তুমি যা কিছু নিবে, তার জন্য আমি আজ তোমার নিকট কোন প্রশংসাই দাবী করব না। ফেরেশতা বললেন, তোমার সম্পদ তোমার কাছেই রাখ। তোমাদেরকে শুধুমাত্র পরীক্ষা করা হয়েছে। তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট এবং তোমার অপর দুজন সাথীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। [হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,বুখারী ৩৪৬৪]
শিক্ষা:- অর্থ টাকা ও সম্পদের গরমে কখনো অংকার করা যাবে না, এবং অসহায় মানুষ সাহায্য চাইলে তাকে ফেরানো যাবে না বরং সাধ্যমত সাহায্য করতে হবে । কখন কার দ্বারা আল্লাহ কার পরীক্ষা নেবেন তা বলা মুশকিল । তাই লোভ-লালসা অহংকার কে পিছনে ফেলে অন্তর দিয়ে ভেবে কোন কাজের ফায়সালা করতে হবে । সর্বদা আল্লাহর নেয়ামতের শোকর গুযার হতে হবে।