মনের ইচ্ছা পূরণ ও দোয়া কবুলের জন্য ইসমে আযম

মানুষের চাওয়ার শেষ নেই মানুষের হাজারো চাওয়া হাজারো মনের ইচ্ছা আছে । সেই মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য মানুষ হাজারো চেষ্টা করে থাকে। তাই আজ ইসমে আজম নিয়ে আলোচনা করব যে ইসমে আজম দ্বারা আল্লাহর কাছে নিজের মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করে থাকেন ।

ইসমে আজম
ইসম শব্দের অর্থ নাম
আজম শব্দের অর্থ মহান/শ্রেষ্ঠ
ইসমে আজম অর্থ হল, আল্লাহর মহান নাম ।

আল্লাহর সমস্ত নামই মহান /শ্রেষ্ঠ তবে ইসমে আজমের বিশেষ কিছু ফজিলত রয়েছে যার দ্বারা দোয়া করলে খুব তাড়াতাড়ি দোয়া কবুল হয় যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ।

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছিল, যখন সে রুকূ-সিজদা এবং তাশাহহুদ পড়ে (নামাজ শেষে) দোয়া করতে আরম্ভ করল তখন সে তাঁর দোয়াতে বলল

اللَّهُمَّ إِنّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، إِنّي أَسْأَلُكَ

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা আন্না লাকাল-হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নানু বাদিউস-সামাওয়াতি অল- আরদি ইয়া- যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম ইন্নি আসয়ালুক”

তখন নবী (সাঃ) সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা কি জান সে কিসের দ্বারা দোয়া করল? তাঁরা বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ,সে আল্লাহর ঐ ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছে যা দ্বারা দোয়া করা হলে তিনি তা কবুল করেন, আর যাদ্বারা কোন কিছু চাওয়া হলে তা তিনি দান করেন।
সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ১৩০০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

আসমা বিনতে ইয়াযিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সা:) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলার মহান নাম (ইসমে আজম) এই দুই আয়াতের মাঝে নিহিত আছে

وإلَهُكُمْ إِلَهٌ وَّاحِدٌ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ
الرَّحِيمُ
অর্থাৎ “আর তোমাদের মা’বূদ একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি দয়াময়, অতিদয়ালু”- (সূরা বাক্বারাহ্‌ ১৬৩)

আর সূরা আ-লি ‘ইমরানের এই আয়াত
الم اللّٰهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ

অর্থাৎ“আলিফ-লাম-মীম। তিনিই আল্লাহ,
তিনি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী”- (সূরা আ-ল ‘ইমরান ১-২)।
(ইবনু মাজাহ ৩৮৫৫)

কোনো কোনো সাহাবী থেকে থেকে বর্ণিত আছে, الْحَيُّ এবং الْقَيُّومُ আল্লাহর ইসমে আজম। ইমাম রাযী রহ. ও আল্লামা নববী রহ. এ মতকেই গ্রহণ করেছেন।
(ফাতাওয়া উসমানী ১/২৬৪)

ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে শুনেছি, আল্লাহ তাআলার ইসমে আজম হল, اللَّه (আল্লাহ)।
কেননা, এটি তাঁর সত্তাগত নাম।
(আত-তাকরীর ওয়াত-তাহবীর ১/৫)

আল্লাহ নামটি পবিত্র কোরআন মজিদে ২৬৯৭ বার এসেছে।
এত বেশি তাঁর অন্য নাম আসে নি।

আল্লামা জাযারী রহ. বলেছেন, আমার মতে ইসমে আ’যম হল,

لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ

কারো কারো মতে رب শব্দটি ইসমে আ’যম।

ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী (রহ:) ও বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ:) এর মত হল هو শব্দটি
ইসমে আযম ‌।

ইসমে আজম কোনগুলি এবং এর দ্বারা কিভাবে দোয়া করতে হয় ?


সমস্ত মতামত সামনে রেখে ইসমে আজম হলো –

১- الله
২- هو
৩-رب
৪-لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
৫- الْحَىُّ الْقَيُّومُ
৬- الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
৭- بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
৮-يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

ইসমে আজম সম্পর্কে ৬৩টি মত রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি বর্ণনা করা হলো । তবে যদি কেউ ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করতে চান তাহলে তাদের বলব আপনারা এই দোয়াটি পুরো পড়বেন ,

اللَّهُمَّ إِنّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، إِنّي أَسْأَلُكَ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা আন্না লাকাল-হামদু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল মান্নানু বাদিউস-সামাওয়াতি অল- আরদি ইয়া- যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম ইন্নি আসয়ালুক”

অর্থ- হে আল্লাহ! আপনার নিকট সাহায্য চায়ছি , সমস্ত প্রশংসা কেবল আপনারই জন্য, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, আপনি এক, আপনার কোন শরীক নেই, অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী হে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে মর্যাদা ও সম্মান দানের অধিকারী। হে চিরঞ্জীব ও সর্বনিয়ন্তা। আমি আপনার কাছে সাহায্য চাইছি ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এর মধ্যেই ইসমে আজম রয়েছে তাহলে যদি আপনি এটি পুরো পাঠ করেন তাহলে ইসমে আযম পেয়ে যাবেন।

যেকোনো নামাযের পর উক্ত দোয়াটি পাঠ করে আল্লাহর দরবারে নিজের মনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এবং আল্লাহর কাছে কিছু সাহায্য চাইলে আল্লাহ তা দান করবেন । কারণ আপনি ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছেন ইনশাআল্লাহ আপনার দোয়া কবুল হবে ।

তবে মনে রাখবেন কোন হারাম, অবৈধ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে বা মা বাবার অবাধ্য হলে দোয়া কবুল নাও হতে পারে ।
তাই হারাম বর্জন করুন এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করুন তারপরে দেখবেন ইনশাআল্লাহ আপনার দোয়া কবুল হবে ।

লম্বা হওয়ার আমল জানতে চায়?

Spread the love

Leave a Comment