আল্লাহকে খোদা বা প্রভু বলে ডাকলে কি গুনাহ হবে?
খোদা (خدا) ও প্রভু (رب)
এ দুটি শব্দ দ্বারা আল্লাহকে ডাকা যাবে নাকি যাবেনা তা বিস্তারিত জানবো । ইনশাআল্লাহ ।
খোদাঃ- ফারসি শব্দ “খোদ” অর্থ স্বয়ং বা নিজে আর আ’ শব্দের অর্থ হলো আগমনকারী বা অস্তিত্বশীল । খোদ+আ যার প্রকৃত অর্থ হলো, নিজে নিজেই অস্তিত্বশীল।
(অর্থাৎ তিনাকে কেউ সৃষ্টি করেনি
সহজে ভাবে বলা যেতে পারে
(ولم يولد)
এবং তাকে কেউ জন্ম দেয়নি )
যেহেতু আল্লাহ স্বয়ং অস্তিত্বশীল, তাকে কেউ অস্তিত্ব দেয়নি, তাই তাঁকে ‘খোদা’ বলা হয়।
“আল্লাহ” এর প্রতিশব্দ হলো “খোদা”
আল্লাহ তায়ালাকে খোদা বলে ডাকা যাবে কিনা এ বিষয়ে জানার পূর্বে আমরা প্রভু শব্দ সম্পর্কে কিছু জানব ।
প্রভুঃ- বাংলা শব্দ, যার আরবি প্রতিশব্দ হলো “রব”
“রব” শব্দের প্রকৃত অর্থ হল প্রতিপালক । রব শব্দের আরও কিছু অর্থ আছে যেমন, মনিব , মালিক ।
দুনিয়াবী ক্ষেত্রেও এ শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকে যেমন – ঘরের মালিক বোঝাতে রববুদ,দার (অর্থাৎ ঘরের মালিক) এবং জিনিস পত্রের মালিক বোঝাতে রব্বুল মাল (জিনিসের মালিক) ব্যবহৃত হয় ।
যেমন ভাবে আবদ (عبد) শব্দটির দুটি অর্থ আছে, বান্দা ও গোলাম (দাস) ।
যখন আল্লাহর দিকে নিসবত করা হয় তখন তার অর্থ হয় বান্দা
যেমন আব্দুল্লাহ অর্থ আল্লাহর বান্দা
আর যখন দুনিয়াবী কোন মানুষের দিকে ইঙ্গিত করা হয় তখন তার অর্থ হয় গোলাম বা দাস ।
যেমন জাইদুন আব্দু খালিদ
(زيد عبد خالد)
(অর্থাৎ জাইদ খালিদের দাস বা গোলাম)
এছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদার নাম আবদুল মুত্তালিব ।
আব্দুল মোত্তালিবের প্রকৃত নাম ছিল শাইবা । তিনি নিজের চাচা মুত্তালিব ইবনে আবদে মানাফ এর সঙ্গে উটের পৃষ্ঠে জীর্ণশীর্ণ পোশাক পরে তার মহল্লায় আগমন গ্রহণ করেন । লোকেরা তারের জীর্ণশীর্ণ পোশাক দেখে মোতালিব এর দাস বা গোলাম ভেবে তার নামকরণ করে আব্দুল মোতালিব (মোতাল্লিবের দাস বা গোলাম) । লোকেরা পরে জানতে পারে এটা মুতালিবের ভাতিজা তবুও আব্দুল মুত্তালিব নামটা প্রশিদ্ধ হয়ে যায় এবং শাইবা নামটা ঢাকা পড়ে যায় ।
বর্তমানে দাস-দাসী প্রথা নেই বলে আজ শব্দটি দুনিয়াবী কোন ব্যক্তির জন্য তেমন ব্যবহার হয়না ।
এবার জানবো
খোদা (خدا) ও প্রভু (رب) শব্দ দ্বারা আল্লাহকে ডাকা যাবে নাকি যাবে না ?।
খোদাঃ- খোদা বলার চাইতে আল্লাহ বলা অতি উত্তম । তবে খোদা বলা নাজায়েজ ও বিদআত নয় । বিশেষ কিছু জায়গায় যেমন- গজল,হামদ, কবিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে খোদা শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রেও খোদা বলে আল্লাহকে সম্বোধন করলে তা সম্পূর্ণ রূপে জায়েজ আছে ।
কারণ আল্লাহ তাআলাকে অন্য ভাষায় এমন শব্দ দ্বারা ডাকা জায়েজ, যে শব্দে আর কাউকে ডাকা হয় না। সেই সাথে এটা অন্য কোন ধর্মের ধর্মীয় কোন নাম নয়। {ফাতওয়া আলমগীরী-৬/৪৪৬}
এ মূলনীতির আলোকে খোদা শব্দটি আল্লাহ তাআলার প্রতিশব্দ হিসেবে বাংলা, উর্দু, হিন্দিতে বলাতে কোন সমস্যা নেই। কারণ খোদা শব্দটি ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের কোন ধর্মীয় শব্দ নয়। সেই সাথে এর দ্বারা আমরা কেবল আল্লাহকেই বুঝে থাকি। অন্য কোন সত্বাকে বুঝি না। খোদা এটা নিরেট ইসলামি শব্দ। এর দ্বারা অন্য কোন ধর্মকে বুঝায় না। বুঝায় না আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্বাকেও। তাই খোদা বলে আল্লাহকে বুঝাতে কোন সমস্যা নেই।
যারা খোদা বলা না জায়েজ বলে থাকেন তাদের দলিল হল-আল্লাহ আরবী শব্দ, তাই একে ফারসি,বাংলা ও উর্দুতে অনুবাদ করে খোদা বলা জায়েজ হবে না।
এর জবাব হল-যদি আরবী আল্লাহ শব্দকে অনুবাদ করে খোদা বলা না জায়েজ হয়, তাহলে আরবী সালাত শব্দকে বাংলা উর্দু-ফার্সিতে নামায বলা কিভাবে জায়েজ?
আরবী সওম শব্দকে বাংলা উর্দতে রোযা বলা কিভাবে জায়েজ ?
যদি এসব জায়েজ হয়, তাহলে আল্লাহ শব্দের প্রতিশব্দ খোদা বলাও জায়েজ।
এমন বহু ফারসি শব্দ বাংলা, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে একটু রিসার্চ করলে বুঝতে পারবেন ।
তাদের আরেকটি দলিল হল-আল্লাহ শব্দের কোন বহুবচন নেই। নেই আল্লাহ সত্বারও কোন বহুবচন। অথচ খোদা শব্দটির বহুবচন হল খোদাওন্দ। তাই খোদা বলার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলাকে বহুবচন সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তাই আল্লাহ শব্দের অনুবাদ খোদা শব্দ দিয়ে করা জায়েজ নয়।
এ যুক্তিটিও একটি অগ্রহণীয় যুক্তি। কারণ যদি তাই হয়, তাহলে রহিম শব্দ দিয়ে আল্লাহকে ডাকা জায়েজ হবে না। কারণ রহীম শব্দের বহুবচন “রুহামা”, তেমনি আল্লাহ তাআলাকে ইলাহ ডাকাও জায়েজ হবে না, কারণ “ইলাহ” এর বহুবচন “আলিহাহ”।
সুতরাং খোদা শব্দটি আল্লাহ নামের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করাকে হারাম ও বেদাত বলে ফাতওয়া দেয়াও বোকামী ছাড়া কিছুই না।
প্রভু (رب):- প্রভু শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হলো রব । কেউ যদি আল্লাহকে প্রভু বলে ডাকে তাহলে ডাকতে পারে কোন সমস্যা নেই ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন
رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ
তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক বা প্রভু (প্রতিপালক)। সূরা আর রহমান:১৭ ।
সঠিক সিদ্ধান্ত
সমস্ত আলোচনা সামনে রেখে যে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেল তা হল আল্লাহ তা’আলাকে খোদা ও প্রভু শব্দ দ্বারা সম্বোধন করা নিঃসন্দেহে জায়েজ ।
তাই যে সমস্ত মানুষেরা নতুন নতুন ফিতনা সমাজে ছড়াচ্ছে তাদের চক্রান্তমূলক কথা-বার্তা থেকে নিজেকে বাঁচানো আমাদের দায়িত্ব ।
আল্লাহ যেন আমাদের সকলকে ভুল ভ্রান্তি ও যাবতীয় ফেতনাবাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন । আমিন
তথ্য সংগ্রহ করেছেন
আব্দুল আজিজ কাদরী