রাসুল পাক(ﷺ) হাজির ও নাজির প্রসঙ্গ
ﻳﺎ ﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ ﻭﻣﺒﺸﺮﺍ ﻭﻧﺬﻳﺮﺍ ﻭﺩﺍﻋﻴﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺎﺫﻧﻪ ﻭﺳﺮﺍﺟﺎ ﻣﻨﻴﺮﺍ .
অনুবাদ :- ‘হে গায়েবের সংবাদদাতা নবী! নিঃসন্দেহে আমি আপনাকে! প্রেরণ করেছি হাজির নাজির (উপস্থিত’ ‘পর্যবেণকারী) করে, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্দেশে আহ্বানকারী আর আলোকোজ্জ্বলকারী সূর্যরূপে।’ (সূরায়ে আহযাব- আয়াত- ৪৫)
উক্ত আয়াতে কারীমায় আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর হাবীব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচটি সুন্দর গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। যথা-
(১) ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) তথা- হাজির ও নাজির এবং সাক্ষী।
(২) ﻣﺒﺸﺮ (মুবাশ্বির) মু’মিনগণকে বেহেশতের সুসংবাদদাতা।
(৩) ﻧﺬﻳﺮ (নাযীর) কাফেরদেরকে দোযখের ভীতিপ্রদর্শনকারী।
(৪) ﺩﺍﻋﻴﺎ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ (দা’য়িয়ান ইলাল্লাহ) আল্লাহপাকের অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারী।
(৫) ﺳﺮﺍﺟﺎ ﻣﻨﻴﺮﺍ (সিরাজাম মুনীরা) হেদায়তের উজ্জ্বল সূর্যরূপে।
অত্র আয়াতে রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পাঁচটি গুণাবলীর মধ্যে একটি অন্যতম গুণ হল শাহিদ।
এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ নিম্নে প্রদত্ত হল।
ﺷﺎﻫﺪ শব্দের ব্যাখ্যা কোরআন মজিদের শব্দব্যাখ্যা লেখক সর্বজনমান্য বুজুর্গ আল্লামা ইস্পাহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘আল মুফরাদাত ফি গারিবীল কোরআন’ নামক কিতাবের ২৬৭ পৃষ্ঠায় ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) শব্দের অর্থ লিখেছেন নিম্নোক্তভাবে-
ﺷﻬﺪ : ﺍﻟﺸﻬﻮﺩ ﻭﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﺍﻟﺤﻀﻮﺭ ﻣﻊ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﺓ ﺍﻣﺎ ﺑﺎ ﻟﺒﺼﺮ ﺍﻭ ﺑﺎﺍﻟﺒﺼﻴﺮﺓ
অর্থাৎ ﺷﻬﻮﺩ (শুহুদ) ও ﺷﻬﺎﺩﺓ (শাহাদাত) এর অর্থ হচ্ছে ঘটনাস্থলে প্রত্যভাবে দেখার সাথে হাজির বা উপস্থিত থাকা। এ দেখা চর্মচু দ্বারাও হতে পারে বা অন্তর চোখ দ্বারাও হতে পারে।
অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফেকাহগ্রন্থ ‘বাহরুর রায়েক’ নামক কিতাবের ৭ম খণ্ড ৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
ﺍﻥ ﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﺍﺳﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﺓ ﻭﻫﻰ ﺍﻻﻃﻼﻉ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺸﺊ ﻋﻴﺎﻧﺎ ﻓﺸﺘﺮﻁ ﻓﻰ ﺍﻻﺩﺍﺀ ﻣﺎ ﻳﻨﺒﺊ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺸﺎﻫﺪﺓ –
অর্থাৎ ‘শাহাদত’ শব্দটি ‘মুশাহাদাহ’ হতে গঠিত। আর মুশাহাদা হল, কোন বস্তুকে চাুস দেখে এ বিষয়ে অবগতি অর্জন করা । এজন্য সাক্ষ্য প্রদানে স্বচে দর্শন করা যুক্ত করা হয়েছে।
আলমনজিদ নামক অভিধানের ৪০৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
ﻭﺍﻟﺸﻬﻴﺪ ﺍﻟﺬﻯ ﻻﻳﻐﻴﺐ ﺷﺊ ﻣﻦ ﻋﻠﻤﻪ ﺍﻟﺸﺎﻫﺪ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﺨﺒﺮ ﺑﻤﺎ ﺷﻬﺪﻩ
অর্থাৎ ﺍﻟﺸﻬﻴﺪ (শাহীদ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যার ইলিম বা জ্ঞান থেকে কোন কিছুই গায়েব বা অজানা থাকে না এবং ﺍﻟﺸﺎﻫﺪ (শাহিদ) ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যিনি চাুস দেখে সংবাদ প্রদান করে থাকেন।
অনুরূপ বাংলা একাডেমী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত ‘আরবি-বাংলা’ অভিধান ১৪৯৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে- ﺷﺎﻫﺪ (শাহিদ) পরিদর্শন করিয়াছে। ﻳﺸﺎﻫﺪ দেখিয়াছে।
এভাবে ‘লুগাতে সূরাহ’ ১৩৫ পৃষ্ঠা, মিসবাহুল মুনীর ১ম জিলদের ১৪০ পৃষ্ঠা। আল কামুসূল মুহিত, ৩৭২ পৃষ্ঠা, মিসবাহুল লোগাত, ৪৫০ পৃষ্ঠা, ফিরোজুল লুগাত ৬৭ পৃষ্ঠা, মিফতাহুল লুগাত ৩৯৮ পৃষ্ঠা ও লুগাতে কেশওয়ারী ৪১০ পৃষ্ঠা, ‘শাহীদ’ শব্দের অর্থ হাজির ও নাজির লেখা রয়েছে।
ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ উক্ত আয়াতে কারীমার তাফসির বা ব্যাখ্যায় তাফসিরে আবুস সউদ ৪র্থ খণ্ড ১০৭/১০৮ পৃষ্ঠা, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ২২ পারা ৪৫ পৃষ্ঠা, ও তাফসিরে
জুমাল ৩য় খণ্ড ৪৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
( ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﻚ ﺷﺎﻫﺪﺍ ) ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺑﻌﺜﺖ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﺗﺮﺍﻗﺐ ﺍﺣﻮﺍﻟﻬﻢ ﻭﺗﺸﺎﻫﺪ ﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﺗﺘﺤﻤﻞ ﻣﻨﻬﻢ ﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﺑﻤﺎ ﺻﺪﺭ ﻋﻨﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﺼﺪﻳﻖ ﻭﺍﻟﺘﻜﺬﻳﺐ ﻭﺳﺎﺋﺮ ﻣﺎﻫﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻬﺪﻯ ﻭﺍﻟﻀﻼﻝ ﻭﺗﺆﺩﻳﻬﺎ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺍﺩﺍﺀ ﻣﻘﺒﻮﻻ ﻓﻴﻤﺎﻟﻬﻢ ﻭﻣﺎﻋﻠﻴﻬﻢ –
অর্থাৎ যাদের প্রতি আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের সকলের জন্য আমি আপনাকে ‘শাহিদ’ তথা হাজির ও নাজির করে পাঠিয়েছি। আপনি তাদের অবস্থাদি পর্যবেণ করতে থাকবেন, তাদের আমলসমূহ ও প্রত্য করবেন এবং তাদের প্রত্যদর্শী সাী বহন করবেন, এভাবে যে, তাদের মধ্যে কারা সত্যবাদী ঈমানের উপর অটল আছে, কারা ঈমান হারা হয়ে মিথ্যার মধ্যে রয়েছে, কারা সঠিক হেদায়তের উপর বিদ্যমান এবং কারা গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে। কিয়ামতের দিনে আপনার এ সকল সাক্ষী ঈমানদারদের পে এবং কাফেরদের বিপে আল্লাহর দরবারে মকবুল হবে।
উপরে বর্ণিত তাফসিরে আবুস সউদ, তাফসিরে রুহুল মায়ানী ও তাফসিরে জুমালের এবারত দ্বারা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হল যে, হুজুর পুরনুর হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন প্রত্যদর্শী সাক্ষী তথা হাজির ও নাজির।
রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রত্যদর্শী সাী তথা হাজির ও নাজির সংক্রান্ত বিষয়কে জোড়দার করার জন্য প্রখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা সৈয়দ মাহমুদ আলুছী বাগদাদী রাদিয়াল্লাহু আনহু তদীয় ‘রুহুল মায়ানী’ নামক তাফসির গ্রন্থে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু
কর্তৃক রচিত নিম্নলিখিত কবিতাটি সংকলন করেছেন-
ﻗﺎﻝ ﻣﻮﻻﻧﺎ ﺟﻼﻝ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺮﻭﻣﻰ ﻗﺪﺱ ﺳﺮﻩ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﻰ ﻣﺜﻨﻮﻯ : ﺩﺭ ﻧﻈﺮ ﺑﻮﺩﺵ ﻣﻘﺎﻣﺎﺕ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩ ﺯﺍﻥ ﺳﺒﺐ ﻧﺎ ﻣﺶ ﺧﺪﺍ ﺷﺎﮨﺪ ﻧﮩﺎﺩ
অর্থাৎ মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী রাদিয়াল্লাহু আনহু মসনবী শরীফে বলেন, মাকামাতুল এবাদ তথা বান্দাগণ যেখানে অবস্থান করে, সেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নজর বা দৃষ্টি রয়েছে। এজন্যই আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর বাণীতে তাঁর হাবিবের নাম মোবারক ‘শাহিদ’ বলে নামকরণ করেছেন। (তাফসিরে রুহুল মায়ানী ৮ম খণ্ড ৪৫ পৃষ্ঠা ২২ নং পারা)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ প্রদত্ত মতাবলে হাজির ও নাজির।