রোজা অবস্থায় গান শুনলে বা সিনেমা দেখলে কি হয়?
আজকের প্রবন্ধটি অতি গুরুত্বপূর্ণ । অনেক মেহনত করে তথ্যগুলি আপনাদের জন্য একত্রিত করেছি তাই শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।
রসূল (স.) বলেন, “আমার উম্মাতের মধ্যে এমন কিছু সম্প্রদায় জন্ম নিবে যারা ব্যভিচার, সিল্কের কাপড়, মদ্যপান ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।” -সহীহুল বুখারী (হা/৫৫৯০: তাওহীদ প্রকাশনী)
গান বাজনা সিনেমা দেখা বেহায়াপনা স্পষ্টভাবে সবসময়ের জন্য হারাম । এগুলিকে হালাল মনে করলে ঈমান চলে যাবে । তবে হারাম ভেবে যদি কেউ গান শোনে বা সিনেমা দেখে তাহলে বড় গুনা হবে কিন্তু বেইমান হবেনা বা ঈমান নষ্ট হবে না । তবে রোযা অবস্থায় গান শোনার বা সিনেমা দেখা বা অন্য পাপ কাজ করা আরো বেশি ভয়ানক ।
প্রশ্ন হল রোজা অবস্থায় গান শুনলে বা সিনেমা দেখলে বা অন্য কোনো আপ কাজ যেমন গালাগালি করা, গীবত করা, ঝগরা করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে কি রোযা শুদ্ধ হবে নাকি শুদ্ধ হবে না ?
এ বিষয়ে কয়েকটি দলিল তুলে ধরার চেষ্টা করব, ভিডিও দেখতে দেখতে নিজের বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করবেন ইনশাআল্লাহ নিজেই সঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন । আর যারা বিবেকের কাছেও উত্তর পেতে অপারগ হবেন তাদের জন্যেও রয়েছে হাদিস ও কুরআনের
আলোতে সুন্দর উত্তর ।
তো চলুন শুরু করি
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” -সূরা বাকারা, (২:১৮৩)
পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় তাকওয়া অর্জনের কথা বলা
হয়েছে ।
রোজা আমরা এজন্যই পালন করি, যেন আমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারি। আর তাকওয়া বলতে আমরা যা বুঝি তা হল পরহেজগারিতা ও আল্লাহ ভীতি অর্জন। আল্লাহ ভীতি বলতে, আল্লাহর কাছ থেকে পুরষ্কার (জান্নাত) প্রাপ্তির আশায় হালাল বা বৈধ কর্ম বেশি বেশি করা এবং আল্লাহর শাস্তির (জাহান্নামের) ভয়ে সকল হারাম বা অবৈধ ও নিষিদ্ধ কর্ম থেকে বিরত থাকা।
এবার একটু বিবেকের আদালতে প্রশ্ন করুন রোজা অবস্থায় গান বাজনা বা শয়তানি বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে সময় কাটালে কি তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব?
এবার আরেকটু আগে চলুন
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোজা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মত কাজ করবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি রোজা পালন করছি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই রোজা পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহ্র নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট।
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৮৯৪]
হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে রোজা ঢাল স্বরূপ । যেমন ভাবে যুদ্ধের ময়দানে সৈন্যরা শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ঢাল ব্যবহার করে থাকে , তেমনি মোমিনগন গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য রোজাকে ঢালস্বরূপ ব্যবহার করবে । অর্থাৎ রোজাদার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে । হাদিসের মধ্যে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি গুনার কথা বর্ণিত হয়েছে যেমন -অশ্লীলতা, ঝগড়া, মূর্খতা, গালি দেওয়া ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন কেউ যদি তোমার সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই বা তোমাকে গালি দেয় তাহলে তুমি দুইবার বলবে আমি রোজা রেখেছি (অর্থাৎ রোজাকে ঢালস্বরূপ ব্যবহার করে গুণাহের কাছ থেকে বেঁচে থাকবে )
বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে জানতে আরেকটু আগে চলুন ।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন রোজা রাখা অবস্থায় কোন খারাপ কর্ম না করে।” [সহীহ বুখারী ১৯০৮]
মানুষ জীবনে চলার পথে বিভিন্ন সময়ে অনেক গুনাহ করে ফেলে এবং পরবর্তীতে বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই । তবে রমজান মাসে রোজা রাখা অবস্থায় যেন কোনোভাবেই খারাপ কাজ বা গুনাহ করে রমজান মাস বা রোজার বেয়াদবী না করে ।
এবার বিবেকের আদালতে আবার প্রশ্ন করুন আপনি রোজা রেখেছেন আল্লাহকে খুশি করার জন্য তাহলে গুনহা করছেন কেন ?
প্রিয় দর্শক এবার জানবো রোজা অবস্থাতে গান শোনলে বা সিনেমা দেখলে বা অন্য কোন গুনাহের কাজ করলে রোজা শুদ্ধ হবে নাকি হবে না ।
এতক্ষণ যে সমস্ত দলিলগুলো আপনাদের সামনে পেশ করা হল তা দ্বারা একটা মোটামুটি ধারণা পেয়ে গেছেন ।
বিষয়টি আরো পরিষ্কার করার জন্য আরো দুটি হাদিসের সারসংক্ষেপ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অন্যায় কথাবার্তা (গীবাত, মিথ্যা, গালিগালাজ, অপবাদ, ইত্যাদি) ও মিথ্যাচার ও মূর্খতা সুলভ কাজ যে লোক (রোযা থাকা অবস্থায়) ছেড়ে না দেয়, সে লোকের পানাহার ত্যাগ করা আল্লাহ্ তা’আলার কোন প্রয়োজন নেই।
যে লোক রোজা অবস্থাতেও বিভিন্ন গুনহের কাজ করে সে ব্যক্তি পানাহার ত্যাগ করে সারাদিন রোজা করুক আল্লাহ তা চান না ।
আল্লাহ তা’আলার জন্য যারা রোজা করে আবার রোজা অবস্থাতেও গুনা করে এমন রোজাদারের আল্লাহর প্রয়োজন নেই ।
প্রিয় দর্শক রোজা অবস্থাতে গান শুনলে বা সিনেমা দেখলে বা গালিগালাজ ইত্যাদি গুনাহ করলে তার গুনাহ অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি হবে , কারণ সে কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরেও পবিত্র রমজান মাসের বেয়াদবি করেছে ।
সারাবছর মানুষ বহুগুণাহ করেছে এই মাসে সমস্ত গুনাহ মাফের এক বিশেষ সুযোগ রয়েছে । এই মাস রহমত,বরকত,নাজাতের মাস ।
তাই রোজা অবস্থাতে এই পবিত্র মাসের বেয়াদবি কোনভাবেই করা যাবে না । তার পরেও যদি কেউ গান, সিনেমা, মিথ্যা কথা বলা , গীবত করা, গালি দেওয়া, ইত্যাদি গুনাহের কাজ করে তাহলে কঠিন গুনহা হবে ও কিয়ামতে আজাবের সম্মুখীন হবে।
এবার শেষ কথা রোজা শুদ্ধ হবে হবে নাকি শুদ্ধ হবে না ।
এর উত্তর হল- রোজা হবে তবে মাকরুহ হবে ।
অর্থাৎ রোজা দুর্বল হবে, রোজার ফজিলত ও রোজার প্রকৃত স্বাদ ও বিশেষ বরকত থেকে বিশেষ ভাবে সে বঞ্চিত হবে ।
আল্লাহু ওয়ারাসুলূহু’ আলম
উত্তর লিখেছেন
আব্দুল আজিজ কাদেরী