রোযা ভঙ্গের কারণ সমূহ
১. পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়; যদি রোযাদার হবার কথা স্মরণ থাকে। (রদ্দুল মুহতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৫)
২. হুক্কা, সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যায়, যদিও নিজের ধারণায় কণ্ঠনালী পর্যন্ত ধোঁয়া পৌছেনি। (বাহারে শরীআত, খন্ড-৫ম, পৃ-১১৭)
৩. পান কিংবা নিছক তামাক খেলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। যদিও আপনি সেটার পিক বারংবার ফেলে দিয়ে থাকেন। কারণ, কণ্ঠনালীতে সেগুলোর হালকা অংশ অবশ্যই পৌছে থাকে। (বাহারে শরীআত, খন্ড-৫ম, পৃ-১১৭)
৪. চিনি ইত্যাদি, এমন জিনিষ, যা মুখে রাখলে গলে যায়, মুখে রাখলো আর থুুথু গিলে ফেললো এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে গেল। (বাহারে শরীআত, খন্ড-৫ম, পৃ-১১৭)
৫. দাঁতগুলোর মধ্যভাগে কোন জিনিষ ছোলা বুটের সমান কিংবা তদপেক্ষা বেশি ছিল। তা খেয়ে ফেললো। কিংবা কম ছিলো; কিন্তু মুখ থেকে বের করে পুনরায় খেয়ে ফেললো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে।(দুররে মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৯৪)
৬. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে তা কণ্ঠনালীর নিচে নেমে গেলো। আর রক্ত থুুথু অপেক্ষা বেশি কিংবা সমান অথবা কম ছিলো, কিন্তু সেটার স্বাদ কণ্ঠে অনুভুত হলো। এমতাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং যদি কম ছিলো আর স্বাদও কণ্ঠে
অনুভুত হয়নি, তাহলে এমতাবস্থায় রোযা ভাঙ্গবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুখতার, খন্ড-৩য়, পৃ-৩৬৮)
৭. রোযার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ‘ঢুস’
(*) নিলো, কিংবা নাকের ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪)
(*) অর্থাৎ কোন ঔষধের ফিতা কিংবা সিরিঞ্জ পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করালো, আর তা সেখানে স্থায়ীও হলো।
৮. কুল্লী করছিলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও পানি কণ্ঠনালী বেয়ে নিচে নেমে গেলো। কিংবা নাকে পানি দিলো; কিন্তু তা মগজে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি রোযাদার হবার কথা ভুলে গিয়ে থাকে, তবে রোযা ভাঙ্গবে না। যদিও তা ইচ্ছাকৃত হয়। অনুরূপভাবে রোযাদারের দিকে কেউ কোন কিছু নিক্ষেপ করলো, আর তা তার কণ্ঠে পৌঁছে গেলো। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আল জাওয়াতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৭৮)
৯. ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে, কিছু খেয়ে ফেললো, অথবা মুখ খোলা ছিলো; পানির ফোঁটা কিংবা বৃষ্টি অথবা শিলাবৃষ্টি কণ্ঠে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আল-জাওহারাতুন নাইয়ারাহ, খন্ড-১ম, পৃ-১৭৮)
১০. অন্য কারো থুুথু গিলে ফেললো। কিংবা নিজেরই থুু হাতে নেয়ার পর গিলে ফেললো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (আমলগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
১১. যতক্ষণ পর্যন্ত থুুথু কিংবা কফ মুখের ভিতর মওজুদ থাকে। তা গিলে ফেললে রোযা ভঙ্গ হয় না। বারংবার থুু থু ফেলতে থাকা জরুরী নয়।
১২. মুখে রঙ্গিন সুতা ইত্যাদি রাখার ফলে থুুথু রঙ্গিন হয়ে গেলো। তারপর ওই রঙ্গিন থুথুু গিলে ফেললে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
১৩. চোখের পানি মুখের ভিতর চলে গেলে আর সেটা গিলে ফেললেন। যদি এক/দুই ফোটা হয় তবে রোযা ভাঙ্গবে না। আর যদি বেশি হয়। যারফলে সেটার লবণাক্ততা মুখে অনুভুত হয়। তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। ঘামেরও একই বিধান।
(আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৩)
১৪. মলদ্বার বের হয়ে গেলো। এমতাবস্থায় বিধান হচ্ছে, তখন খুব ভাল করে কোন কাপড় ইত্যাদি দিয়ে তা মুছে ফেলার পর দাঁড়াবে যাতে সিক্ততা বাকী না থাকে। আর যদি কিছু পানি অবশিষ্ট ছিলো, আর দাঁড়িয়ে গেলো, যার কারণে পানি ভিতরে চলে গেলো, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। এ কারণে সম্মানিত ফকীহগণ ﺭَﺣْﻤَﺔُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ বলেন, “রোযাদার পানি ব্যবহারে সময় নিবে না।’ (আলমগীরী, খন্ড-১ম, পৃ-২০৪)
কখনো যদি রোযার সময় বমি হয়, তখন লোকেরা চিন্তিত হয়ে যায়, আবার কেউ কেউ মনে করে যে, রোযা পালন কালে এমনিতে নিজে নিজে বমি হয়ে গেলেও রোযা ভেঙ্গে যায়। অথচ তেমন নয়। যেমন সায়্যিদুনা আবু হুুরায়রা ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ থেকে বর্ণিত, হুযুর পূরনুর হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর মহান বাণী, “যার মাহে রমযানে আপনা আপনি বমি এসে যায়, তার রোযা ভাঙ্গে না। আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে, (স্বেচ্ছায়) বমি করে তার রোযা ভেঙ্গে যায়।” (কানযুল উম্মাল, খন্ড-৮ম, পৃ-২৩০, হাদীস নং-২৩৮১৪)
অন্যত্র ইরশাদ করেছেন, “যার আপনা আপনি বমি এসেছে তার উপর কাযা নেই। আর যে জেনে বুঝে বমি করেছে সে কাযা করবে।” (তিরমিযী, খন্ড-২য়, পৃ-১৭৩, হাদীস নং-৭২০)
<<< সবাই শেয়ার করে অন্যদের জানিয়ে দিন >>>
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আসন্ন মাহে রমজানে আমাদের বেশি বেশি নেক আমল তৌফিক দান করুন। #আমীন।