‘শির্ক’ হল তাওহীদের বিপরীত। প্রথমে দেখুন ‘তাওহীদ’ কাকে বলে। ‘তাওহীদ’ (توحيد) হচ্ছে- যা কালেমা-ই ত্বাইয়্যেবাহ لا اله الا الله (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু)’র মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে- সত্য মা’বূদ আল্লাহ ব্যতীত কেউ নেই। অর্থাৎ সত্য উপাস্য একমাত্র আল্লাহ। আর একথা অন্তরে বিশ্বাস করা ও মুখে স্বীকার করাভ নাম ‘তাওহীদ’।
[আত্বই্য়াবুল বয়ানঃ কৃত সদ্রুল আফাযিল সাইয়্যেদ নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী, পৃষ্ঠা-১৮৪]আল্লামা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘মিরক্বাতুল মাফাতীহ শরহে মিশ্কাতুল মাসাবীহ’তে লিখেছেন- ‘লা-ইলা-হা’ (لا اله) – এর মধ্যে نفى جنس ـ لا -এর জন্য ব্যবহৃত। অর্থাৎ প্রত্যেক ‘ইলাহ’ বা উপাস্যকে অস্বীকার করার জন্যই এ শব্দটি। আর الا الله সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন- এ বাক্যাংশটা বিধেয় (خبر لا�); কিন্তু সঠিক অভিমত হচ্ছে- বিধেয় উহ্য রয়েছে। সুতরাং ওই উহ্য বিধেয় সহকারে لا اله الله বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায়- ‘কোন সত্য উপাস্য (মা’বূদ) নেই- আল্লাহ ব্যতীত। কেননা, পবিত্র নাম আল্লাহ الله)) হচ্ছে- সমস্ত উত্তম গুণের ধারক সত্তারই নাম এবং সত্য মা’বূদ যিনি, একমাত্র তাঁরই জন্য এটা নির্দিষ্ট নাম। সুতরাং এখানে ‘আল্লাহ’ শব্দের স্থলে যদি ‘রাহমান’ (পরম দয়ালু) বলা হয়, তবে নিরেট ‘তাওহীদ’ (একত্ববাদ) তা দ্বারা বিশুদ্ধভাবে বুঝা যেতো না। এটাও বলা হয়েছে যে, ‘তাওহীদ’ মানে কোন বস্তুকে ‘এক’ বলে সাব্যস্ত করা এবং এক বলে জানা। আর ‘তাওহীদ’-এর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ তা’আলার মহান যাত বা সত্তাকে ‘এক’ বলে সাব্যস্ত করা। তাছাড়া, তাঁকে আক্বীদা বা বিশ্বাসে, তারপর কথায় ও কাজে, তারপর নিশ্চিত বিশ্বাস ও পরিচিতিতে অতঃপর বাহ্যিক ও অন্তর্চক্ষু দ্বারা দর্শনে, অতঃপর প্রমাণিত ও স্থায়ীভাবে ্লএকশ বলে সাব্যস্ত করা।
[মিরকাতঃ ১ম খন্ড, ৪৬ পৃষ্ঠার বরাতে ‘আত্বইয়াবুল বয়ানঃ পৃষ্ঠা- ১৮৪]সুতরাং এখন দেখুন ‘শির্ক’-এর সংজ্ঞা কি?
‘শিরক’ হচ্ছে যাকে কলেমা-ই তাইয়্যেবাহ্ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু’ বাতিল বা প্রত্যাখ্যান করেছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে মা’বূদ (উপাস্য) সাব্যস্ত করা। [আত্বইয়াবুল বয়ান, পৃষ্ঠা-১৮৪]
‘তাফসীর-ই খাযিন’-এ উল্লেখ করা হয়েছে- আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করার অর্থ হচ্ছে তাঁর সাথে তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক স্থির করা।
‘শরহে আক্বাইদে নাসাফী’তে উল্লেখ করা হয়েছে-
اَلْاِشْرَاكُ هُوَ اِثْبَاتُ الشَّرِيْكِ فِى الْاُلُوْهِيَّةِ بِمَعْنى وُجُوْبِ الْوُجُوْدِ كَمَا لِلْمَجُوْسِ اَوْ بِمَعْنى اِسْتِحْقَاقِ الْعِبَادَةِ كَمَا لِعَبَدَةِ الْاَصْنَامِ
অর্থাৎ ‘শির্ক’ করার অর্থ হচ্ছে- ইলাহ্ (উপাস্য) হবার মধ্যে (কাউকে আল্লাহ্র সাথে) শরীক স্থির করা। ‘ইলাহ’ হওয়াও এ অর্থে যে, যিনি ‘ইলাহ’ তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর অস্তিত্ব অপরিহার্য; যেমন অগ্নিপূজারীরা করে থাকে, অর্থাৎ আগুনকে তারা আল্লাহর সাথে এ অর্থে শরীক সাব্যস্ত করে যে, আগুনও আল্লাহর মতো চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর অস্তিত্ববিশিষ্ট। অথবা এ অর্থে যে, অন্য কেউ ইবাদতেরও উপযোগী। যেমন- মূর্তি পূজারীরা এ শির্ক করে থাকে, অর্থাৎ তারা তাদের মূর্তিগুলোকেও ইবাদতের উপযোগী বলে বিশ্বাস করে।’ (আল্লাহরই পানাহ!) [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-১৮৫] [গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.২০-২১]
মহান আল্লাহ পাক আমাদের এই পরম সত্যকে অনুধাবন করে, শিরিক এর সঠিক অর্থ বুঝার তাওফিক নসীব করুন। #আমীন।