বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আস্সালামু আলাইকুম
প্রিয় পাঠক আজ একটি আকিদা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যে বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে দলা দলি শুরু হয়েছে । কেও বলছে নবী (ﷺ) ইলম-এ- গাইব জানেন আর কেও বলছে জানেন না । আসল বিষয়টি আমরা কুরান ও হাদিসের আলোতে জানব, এবং শেষে গাইবের বিষয়ে কিছু জটিল প্রশ্নের উত্তর দেব ইন শা আল্লাহ ।
কোরান হতে দলীল
আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (ﷺ ) কে গাইবের জ্ঞান দ্বান করেছেন, কোরান হইতে তার কএকটি দলীল
কোরান হতে দলীল ১:-” মা কানাল্লাহু লি উতলিয়াকুম আলাল গাইবে ওয়ালাকিন নাল্লাহা ইজতাবিয়ু মির রুসুলিহু মাইয়া শায়ু ”
অর্থাৎ হে সাধারাণ লোকগন ! আল্লাহ তা’আলার শান নয় যে , তিনি তোমাদেরকে ইলমে গায়েব দান করবেন , তবে হ্যাঁ রাসুলগনের মধ্য হতে তিনি যাকে চান তাকে অদৃশ্যজ্ঞানের জন্য মনোনীত করেন ।( সুরা আলইমরান ১৭৯)
কোরান হতে দলীল ২:- ”অালিমুল গাইবি ফালা ইউহিরু আলা গাইবিহি আহাদান ইল্লা মা নিরতাদা মির রাসু “ অর্থাৎ স্বীয় গায়েবের বিষয় কাউকে প্রকাশ করেন না । কিন্তু রাসুলদের মধ্য যার উপর তিনি সন্তষ্ট হন”( তাকেই প্রকাশ করেন ) (সুরা জিন- আয়াত ২৬-২৭ )
কোরান হতে দলীল ৩:- ‘ আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম……. ” আর্থাৎ, তিনি আপনাকে (সকল বিষয়) শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না এবং আল্লাহর অশেষ করুনা আপনার প্রতি “ ( সুরা নিসা আয়াত ১১৩)
হাদিস হতে দলীল
আল্লাহ তায়ালা প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (ﷺ ) কে গাইবের জ্ঞান দ্বান করেছেন, হাদিস হইতে তার কএকটি দলীল
হাদিস হতে দলীল ১ :-
عن عُمَرَ ـ رضى الله عنه ـ يَقُولُ قَامَ فِينَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَقَامًا، فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ، وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ، حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ، وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ.
হযরত ওমর ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন একদা হুজুর নবী করীম (ﷺ) আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশত বাসীরা বেহেশতে এবং দোযখনাসীরা দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বর্ণনা করলেন । আমাদের মধ্যে যারা মুখস্ত রাখতে পেরেছে তারা মুখস্ত রেখেছে ; আর যারা ভুলে যাবার তারা ভুলে গেছে ।
[ বুখারী : হাদীস নং ৩১৯২ : কিতাবু বাদয়ুল খালক্ব ]
হাদিস হতে দলীল ২ :- হযরত হুযাইফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত । তিনি বলেন রাসুলে পাক(ﷺ) আমাদের সামনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করলেন- সে দিন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তার কোন বিষয়েই তাঁর বক্তব্যে বাদ দেননি । শ্রোতাদের মধ্যে যে মুখস্থ রাখার সে মুখস্ত রেখেছে আর যে ভুলে যাবা সে ভুলে গেছে ।
( বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬২৩০ কিতাবুল কদর – মুসলিম শরীফ হা:নং২৮৯১ কিতাবুল ফিতন )
হাদিস হতে দলীল ৩ :-
حَدَّثَنِي أَبُو زَيْدٍ، – يَعْنِي عَمْرَو بْنَ أَخْطَبَ – قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْفَجْرَ وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ فَنَزَلَ فَصَلَّى ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا .
হযরত আবু জয়েদ (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্নিত , তিনি বলেন , আল্লাহর রাসুল (ﷺ) একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন ; এমন কি যোহরের নামায পড়ালেন ।অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে , আর বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন ,এমন কি আসরের নামাযের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বরে হতে নেমে আসরও পড়লেন । পুনরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতে সুর্য অস্তমিত হয়ে গেল । সে দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) অতীতে যা কিছু এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাঁদের স্মরণশক্তি অধিক তাঁরা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশী মনে রাখতে পেরেছেন । (মুসলিম শরিফ হাদিস নম্বর ৭১৫৯ কিতাবুল ফিতান)
এই হদিস দ্বারা স্পস্ট বুঝাগেল যে আমাদের নবী (ﷺ) গায়েব জানে ,আল্লাহ তায়ালা দান করেছেন ।
হাদিস হতে দলীল ৪:-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ، فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” يُعَذَّبَانِ، وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ”، ثُمَّ قَالَ ” بَلَى، كَانَ أَحَدُهُمَا لاَ يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ، وَكَانَ الآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ”. ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فَكَسَرَهَا كِسْرَتَيْنِ، فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا كِسْرَةً. فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ ” لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ تَيْبَسَا أَوْ إِلَى أَنْ يَيْبَسَا
হজরত ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্নিত (ﷺ) একদা মদীনা বা মক্কার বাগানগুলোর মধ্য হতে কোন এক বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এমন দু’ ব্যক্তির আওয়ায শুনতে পেলেন যে, তাদেরকে কবরে আযাব দেয়া হচ্ছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এদের দু’জনকে আযাব দেয়া হচ্ছে, অথচ কোন গুরুতর অপরাধে তাদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তারপর তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, এদের একজন পেশাব করতে গিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করত না। অপর ব্যক্তি চোগলখোরী করত। অতঃপর তিনি একটি খেজুরের ডাল আনতে বললেন, এবং তা ভেঙ্গে দু’ টুকরা করে প্রত্যেকের কবরের উপর এক টুকরা করে রাখলেন। তাঁকে বলা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেন এমন করলেন?’ তিনি বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ দু’টি শুকিয়ে না যায় তাদের আযাব কিছুটা হালকা করা হবে। ( বুখারী-সাদিস নং ২১৬)
সময় মত আরো কিছু দলীল যুক্ত করা হবে ও প্রত্যেক হাদিসে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করা হবে ।ইন শা আল্লাহ
ইলম-এ-গাইব সম্পর্কে প্রশ্ন ও তার উত্তর
প্রশ্ন ১:- পবিত্র কোরান এ উল্লেখ আছে আল্লাহ ছাড়া গাইব কেও জানে না,এমন কি হাসিসে এসেছে রসুল (ﷺ) নিজে বলেছেন আমি গাইব জানিনা, এর উত্তর কী হবে ?
উত্তর :- উপরের কুরান ও হাদিস হতে দেওয়া দলীলগুলি লক্ষ্য করলে বুঝা যায় নাবী (ﷺ) কে আল্লাহ তায়ালা গাইব এর জ্ঞান দান করেছেন । আমরা দুই প্রকার কুরানের আয়াত ও হাদিস দেখতে পাই , পক্ষে ও বিপক্ষে । এখন এর সমাধান কি হবে যাতে করে দুই প্রকার আয়াতের উপর আমল করা যায় ?
গাইব দুই প্রকার ১-জাতী ২- আতায়ী
যেখানে (যে সব কুরানে আয়াতে ও হাদিসে) আল্লাহ ছাড়া আর কেও গাইব জানে না বলা হয়েছে ,সেখানে জাতী গাইব উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে । আর যেখানে (যে সব কুরানে আয়াতে ও হাদিসে) রাসুল(ﷺ) কে গাইব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সেটা আতায়ী গাইব উদ্দেশ্য নেওয়া হয়েছে । আল্লাহর জ্ঞান জাতী (নিজস্য) আর রাসুলের জ্ঞান আতায়ী (আল্লাহর প্রদত্ত)। এই বাখ্যা সঠিক ,এই বাখ্যা মানলে দুই প্রকার আয়াত ও হাদিসে উপর বিশ্বাস স্থাপন করা হচ্ছে । আর যিনারা গাইব অশিকার করেন তিনারা দুই প্রকার আয়াত ও হাদিসে এর উপর কী ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবনে এক প্রকার কী অশিকার করবেন? বিচার আপনাদের কাছে ,কমেন্ট এ মতামত জানান
( আব্দুল আজিজ কাদেরী (পশ্চিম বঙ্গ,ভারত)