যে মানুষের মধ্যে ৫টি বদ অভ্যাস থাকবে সে মানুষ জীবনে চলার পথে অপমানিত হবে, লাঞ্ছিত হবে, পদধূলিত হবে এবং সকলের কাছে ঘৃণারপাত্রে রূপান্তরিত হবে । মনের মধ্যে সুখ শান্তি থাকবে না সর্বদাই তারমধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করবে ।
(১) মিথ্যা বলা
রাসূল (সাঃ) বলেন: ‘যখন কোন বান্দা মিথ্যা কথা বলে তখন তার মুখ থেকে যে দূগর্ন্ধ বের হয় তাতে – তার থেকে দুইজন ফেরেস্তা দূরে সরে যায়।‘ [সুনান তিরমিজীঃ১৯৭২]নাউজুবিল্লাহ ।
আবুহুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন : মুনাফেকদের নিদর্শন তিনটি : কথা বলার সময় মিথ্যা বলা, ওয়াদা করে ভঙ্গ করা এবং আমানতের মধ্যে খেয়ানত করা। (বুখারী, মুসলিম)
মিথ্যা বলা মহাপাপ , একজন মিথ্যাবাদী তার একটি মিথ্যাকে ঢাকা চাপা দিতে আরও ১০টি মিথ্যা বলে ।
আস্তে আস্তে মানুষের কাছে সে মিথ্যাবাদী রূপে পরিচিতি লাভ করে, যার ফলে কারো কাছে আর সম্মান পায় না ।
(২) অতিরিক্ত রাগ করা
মানবচরিত্রের একটি খারাপ দিক রাগ বা ক্রোধ। কারো ক্রোধ যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন সেটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্রোধান্বিত মানুষ বেসামাল হয়ে যায়, তখন অন্যের ওপর জুলুম করে। ক্রোধের কারণে মনের মধ্যে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে ওঠে, তখন খুনখারাবি পর্যন্ত হয়ে যায়, ঘরসংসার ভেঙে যায়।
শয়তান ক্রোধের ইন্ধন জোগায়, কারণ ক্রোধ আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান ক্রোধের ইন্ধন জ্বালিয়ে বিপদে ফেলে দেয় ।
(৩) অহংকার করা
অহংকার একটি খারাপ গুণ। এটা শয়তানের বৈশিষ্ট্য । সর্বপ্রথম যে অহংকার করেছিল সে হচ্ছে, অভিশপ্ত ইবলিস। তাই অহংকার ইবলিসি চরিত্র।
অহংকার প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন জিজ্ঞেস করলেন, কোনো লোক যদি পছন্দ করে যে তার জামাটা ভালো হোক, তার জুতাটা ভালো হোক? (তাহলে কি কিছুটা অহংকার হবে?) নবী (সাঃ) বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর; তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। (অর্থাৎ এটা অহংকার এর মধ্যে পড়বে না) অহংকার হচ্ছে, সত্যকে উপেক্ষা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। (সহিহ মুসলিম)
সত্যকে উপেক্ষার অর্থ, সত্য জেনেও সেটাকে প্রত্যাখ্যান করা। আর মানুষকে তুচ্ছ করার অর্থ, মানুষকে ছোট মনে করা, মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেন, তার প্রভাব-প্রতাপ নস্যাৎ করে দেন ও তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন।
(৪) কৃপণতা করা
অর্থ থাকার পরেও যে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না এবং অতি প্রয়োজনেও খরচ করে না তাদেরকই বখিল বা কৃপণ বলা হয় ।
আল্লাহ তা’আলা বলেন যারা নিজেরাও কৃপণতা করে এবং মানুষকেও কৃপণতার নির্দেশ দেয়, আর আল্লাহ তাদের নিজ অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন তা তারা গোপন করে। আমি এরূপ অকৃতজ্ঞদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। [নিসা-৩৭]
কৃপণ ব্যক্তির জন্য আখেরাতে রয়েছে অপমানজনক কঠিন শাস্তি আর পৃথিবীতেও এই সমস্ত মানুষ বিভিন্ন দিক দিয়ে লাঞ্ছিত অপমানিত হয় ।
(৫) ফুজুল খরচ
সম্পদ খরচ করতে হবে প্রয়োজনে । আর সেই খরচ হতে হবে সঠিক জায়গায় । অকারনে প্রয়োজন ছাড়া খরচ করাকে ফুজল খরচ বলা হয় ।
যা ইসলামী শরীয়তে জায়েজ নেই ।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তিনটি বস্তু অপছন্দ করেন-
১. অনর্থক এবং বাজে কথা বলা
২. প্রয়োজন ছাড়া মাল নষ্ট করা
এবং ৩. অত্যধিক প্রশ্ন করা।
(বুখারি১৪৭৭)
যার মধ্যে থাকবে সে দুনিয়াতে বিশেষভাবে অপমানিত হবে, তার জীবন থেকে সুখ শান্তি নষ্ট হবে । এবং আখেরাতেও কঠিন অপমানজনক শাস্তি পাবে ।
তাই এ সমস্ত বদভ্যাসগুলো কারো মধ্যে থাকলে তা আজ থেকে বর্জন করতে হবে ।
আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক বোঝার তৌফিক দান করেন আমিন ।