✿ হতবাগা আবিদ ও যুবতী মহিলা ✿
”তালবিসে ইবলিশ” নামক কিতাবে আছে, বনী ইসরাঈলের একজন অনেক বড় আবিদ (ইবাদত গুজার) ব্যক্তি ছিল। একদিন, একই এলাকার তিন ভাই একদা সেই আবিদের নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: আমরা সফরে যাচ্ছি, তাই ফিরে আসা পর্যন্ত আমাদের একমাত্র যুবতি বোনকে আপনার কাছে রেখে যেতে চাই। আবিদ ব্যক্তি ফিতনার ভয়ে নিষেধ করে দিল। কিন্তু তাদের বারবার অনুরোধের কারণে রাজি হল এবং বললো : তাকে আমি সাথে তো রাখতে পারব না, বরং পাশের নিকটবর্তী কোন বাড়িতে রেখে যান। সুতরাং, এমনই হল এবং তারা সফরে চলে গেল। আবিদ তার ইবাদতখানার বাইরে খাবার রেখে দিত, সে মেয়ে তা নিয়ে যেত। কিছুদিন পর শয়তান সেই আবিদের অন্তরে সহানুভূতির মাধ্যমে কূমন্ত্রণা দিল যে, “খাবার নেওয়ার সময় সেই যুবতী মেয়ে তার থেকে বেরিয়ে আসে, কখনো কোন দুষ্ট লোকের হাতে যেন না পড়ে যায়। উত্তম এটাই যে, তোমার দরজার পরিবর্তে তার দরজার বাইরে খাবার রেখে দাও। এই সৎ নিয়তের বিনিময়ে তুমি অনেক সাওয়াব ও পাবে।” সুতরাং, সে তারপর থেকে যুবতি মেয়েটির দরজার সামনে খাবার রেখে আসত। কিছুদিন পর শয়তান কূমন্ত্রণা মাধ্যমে আবিদের সহানুভূতির প্রেরণা বাড়িয়ে দিল যে, “এই নিঃস্ব মেয়েটি নিশ্চুপ একাএকা পড়ে থাকে। কমপক্ষে তার ভয়ভীতি দূর করার জন্য ভাল নিয়তে কথা বলতে কি গুনাহ? বরং এটা নেককাজ। তুমি তো এমনিতেই পরহেজগার ব্যক্তি এবং নফসের উপর বিজয়ী। নিয়ত ও তোমার পরিষ্কার, সে তো তোমার বোনের মতই।” সুতরাং, কথাবার্তা শুরু হল। যুবতীর সুমধুর কন্ঠ আবিদ ব্যক্তির কানে মধু বর্ষণ করল, তার অন্তরর উতাল-পাতাল ঢেউ সৃষ্টি হল। শয়তান থাকে আরো উৎসাহিত করল, এমনকি যা না হওয়ার তাও হয়ে গেল এবং যুবতী মেয়েটি অবৈধ সন্তানও প্রসব করল। শয়তান পুনরায় কুমন্ত্রণার মাধ্যমে আবিদ ব্যক্তিকে ভয় লাগাল, “মেয়েটির ভাইয়েরা যদি এই সন্তানকে দেখে তোমার তো অনেক বদনাম হয়ে যাবে, সবাই তোমাকে খারাপ বলবে। সুতরাং, তুমি নবজাতক সন্তান এবং তার মাকে হত্যা করে মাটিতে দাফন করে দাও। ” আবিদ ব্যক্তিটি তাই করল। মেয়েটির ভাইয়েরা যখন সফর হতে আসল, আবিদ ব্যক্তিটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আফসোস করে বলল: ” আপনাদের বোনের ইন্তিকাল হয়ে গেছে, এই হল আপনার মরহুমা বোনের কবর, আসুন ফাতিহা পাঠ করি। ভাইয়েরা ফাতেহা পাঠ করল এবং বেদনাগ্রস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরল। রাতে শয়তান মুসাফিরের বেশে এসে তিন ভাইকে স্বপ্নে এসে সেই আবিদের সমস্ত অসৎ কর্মের কথা খুলে বলল আর দাফনকৃত স্থান দেখিয়ে বলল: এই জায়গাটি খনন কর। তিন ভাই মিলে জায়গাটি খনন করল; তারা তাদের বোন এবং সেই নবজাতক শিশুর লাশ দেখতে পেল। তিন ভাই মিলে বাদশাহর দরবারে অভিযোগ করল। আবিদ ব্যক্তিকে ইবাদতখানা থেকে বের করে ফাসিঁ দেওয়ার হুকুম হল। ফাসিঁ দিতে নিয়ে যাওয়ার সময় শয়তান সেই আবিদের সামনে আত্মপ্রকাশ করল এবং বলল: “আমাকে চিনতে পেরেছ? আমি শয়তান তোমাকে সেই মহিলার ফেতনায় ফেলেছি এবং অপমানের সর্বশেষ স্তরে পৌঁছে দিয়েছি। যাই হোক চিন্তা কর আমি তোমাকে বাঁচাতে পারব কিন্তু শর্ত হল আমার আনুগত্য কর।” যে মৃত্যুর সামনে উপস্থিত হয় বাচাঁর জন্য কি না করে! আবিদ বললো আমি তোমার প্রতিটা কথা শোনার জন্য প্রস্তুত। শয়তান বলল: “আল্লাহকে অস্বীকার কর এবং কাফির হয়ে যাও, আর আমাকে সিজদা কর।” সে আবিদ তাই করল এবং শয়তান তার ঈমান হরণ করে সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল। এরপর, সৈন্যরা তাকে ফাসিঁ দিল এবং সে আবিদ কাফির হয়ে মৃত্যুবরণ করল!!! #নাউজুবিল্লাহ।
[সুত্র: তালবিসে ইবলিশ, ৩৮-৪০ পৃষ্ঠা]
শয়তানের নিকট পুরুষদের ধংস করার জন্য সবচেয়ে বড় এবং মন্দ হাতিয়ার হল মহিলা। হযরত সৈয়্যদুনা আবু দরদা (رضی اللہ تعالی عنه) বলেন, “মূহূর্তের যৌন তাড়নার স্বাদ দীর্ঘস্থায়ী দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় “।
”মলফুযাতে আলা’হযরত” কিতাবের ৪৫৪ পৃষ্টায় আলা’হযরত ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেলরভী (رضی اللہ تعالی عنه) বলেন, “যে ব্যক্তি নিজের নফসের উপর ভরসা করল, সে অনেক বড় মিথ্যাবাদীর উপর ভরসা করল”।
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাচাঁর এবং নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। #আমিন