ঈমান বিনষ্ট হবার মতোও কিছু কারণ রয়েছে। আল্লামা ক্বাযী সানাউল্লাহ পানিপথী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘মা-লা-বুদ্দমিন্হু’র শেষাংশে ফাতাওয়া-ই বোরহানীর বরাতে ‘কুফরী বাক্যসমূহ’ শিরোনামে এমন কিছু কলেমা বা বাক্য উল্লেখ করেছেন, যেগুলোর কারণে ঈমানদারের ঈমান বিনষ্ট হয়ে যায় এবং সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। মুসলমানদের ছথূ সকল প্রকার কুফর থেকে বাঁচা অপরিহার্য। তাই এখানে কুফরী বাক্যগুলোর কিছুটা উল্লেখ করার প্রয়াস পেলাম-
১. আল্লাহ তাজ্ঞআলারও সৃষ্টির ন্যায় শরীর আছে বলা কুফর।
২. দুনিয়ায় আল্লাহ্র দীদার অসম্ভব বলে মনে করা কুফর। কারণ, এটা ক্বোরআন ও হাদীস অস্বীকারের নামান্তর।
অবশ্য প্রত্যেক মু’মিন বেহেশতে আল্লাহর দীদার লাভ করবেন। মি’রাজ শরীফে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আল্লাহর দীদার লাভ করা তাঁর বৈশিষ্ট্য ও মু’জিযা ছিলো।
৩.যদি কেউ বলে, ‘‘অমুক যদি খোদাও হয়ে যায়, তবুও আমি তার কাছ থেকে আমার প্রাপ্য উসূল করে ছাড়বো,’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
৪.যকি কেউ বলে, ‘‘স্বয়ং আল্লাহ্ তোর সাথে পারে না, আমি কিভাবে পারবো?’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
৫.যদি কেউ বলে, ‘‘আমার জন্য আসমানে খোদা আছে, আর যমীনে আছো তুমি’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
৬.যদি কারো সন্তান মারা যায়, সে যদি বলে, ‘‘আল্লাহর তার প্রয়োজন ছিলো, তাই তাকে নিয়ে গেছে’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে। আর যদি কেউ বলে, ‘‘আল্লাহ তার প্রতি যুল্ম করেছেন’’, তবুও সে কাফির হয়ে যাবে।
৭. যদি কোন মযলূম বলে, ‘‘হে খোদা! তুমি তার তাওবা কবূল করো না! তুমি কবূল করলেও আমি করবো না’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
৮.যদি কোন পাওনাদার বলে, ‘‘আমার ঋণী যদি আল্লাহও হন, তবুও তাঁর কাছ থেকে আমার পাওনা উসূল করে নেবো’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। যদি বলে, ‘‘তিনি যদি পয়গাম্বরও হন, তবুও আমার পাওনা উসূল করে নেবো’’, তবুও সে কাফির হয়ে যাবে।
৯.যদি কেউ বলে, ‘‘আল্লাহর হুকুম এমনই’’ তখন অন্যজন বললো, ‘‘আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে আমি কি জানি?’’ তবে শেষোক্তজন কাফির হয়ে যাবে। (অবশ্য, অস্বীকার নয়, বরং আফসোস্ করে বললে কাফির হবে না।)
১০. যদি কেউ বলে, ‘‘হে আল্লাহ! আমার উপর অত্যাচার করবেন না’’, তবে সঠিক অভিমতানুসারে, সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ সে আল্লাহর পক্ষে অত্যাচারে বিশ্বাস করলো। এটা কুফর।
১১.যদি কেউ ‘বিস্মিল্লাহ্’ বলে মদ্যপান করে কিংবা যিনা-ব্যভিচার করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কেউ ‘বিস্মিল্লাহ’ বলে হারাম জিনিষ আহার করলেও সে কাফির হয়ে যাবে।
১২.যে ব্যক্তি এ বিশ্বকে নশ্বর (حادث) বলতে অস্বীকার করে, মৃত ব্যক্তিদের সশরীরে হাশর হওয়া স্বীকার করে না, আল্লাহ তা’আলাকে প্রতিটি সৃষ্টির ও সৃষ্টি জগতের অনূ-পরমাণূ সম্পর্কে অবগত ও জ্ঞাতা বলে বিশ্বাস করে না কিংবা এ ধরনের ধর্মীয় জরুরী বিষয়গুলো (ضروريات دين ) কে অস্বীকার করে, তবে সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যাবে।
(উল্লেখ্য, রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দো’আ কবূল হওয়া ‘যুরুরিয়াতে দ্বীন’ (দ্বীনের জরুরী বিষয়াদি)’র অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং হযরত ওমর ফারূক্ব ও আবূ জাহলের ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দো’আ সংক্রান্ত বিষয়টিও ‘দ্বীনের জরুরী বিষয়াদি’র অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যদি কেউ মনগড়াভাবে বলে, ‘‘হুযূর দো’আ করেছেন আবূ জাহলের পক্ষে, কিন্তু আল্লাহ তা কবূল না করে কবূল করলেন হযরত ওমর ফারূক্বকে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে।)
১৩.যদি কেউ বলে, ‘‘যদি অমুক নবী হয়, তবে আমি তার উপর ঈমান আনবো, আল্লাহ যদি আমাকে নামাযের আদেশ করেন, তবুও আমি তা সম্পন্ন করবো না’’ অথবা বললো, ‘‘যদি ক্বেবলা এদিকে হয়, তবে নামায পড়বো না,’’ তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
১৪.যদি কেউ কোন সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করে আর বলে, ‘‘আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূল বা ফিরিশ্তাদের সাক্ষী রেখেছি, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, সে শরীয়তকে নিয়ে উপহাস করলো। শরীয়ত নিয়ে উপহাস-ঠাট্টা করা কুফর।
১৫.যদি কেউ বলে, হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি অপবাদ দেয় কিংবা তাঁর চুল মুবারককেও অবজ্ঞা করে, তবে সে কাফির হয়ে যাবে।
১৬.যদি কেউ বলে, ‘‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শত্রুদের ভয়ে কিছু খোদায়ী বিধান প্রচার করেন নি’’, তবে সে কাফির হয়ে যাবে। রাফেযীরা এমনটি বলে থাকে। এমন কথা বলা কুফর।
১৭.যে ব্যক্তির সামনে ওই হাদীস শরীফ বর্ণনা করা হয়, যাতে হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমায়েছেন, ‘‘আমার হুজুরা মুবারক ও মিম্বর শরীফের মধ্যবর্তী স্থানটুকু, অথবা আমার ক্ববর শরীফ ও মিম্বর মুবারকের মধ্যবর্তী স্থানটুকু জান্নাতের বাগানগুলো থেকে একটি বাগান’’ আর ওই লোকটি বলে, ‘‘আমি তো শুধু মিম্বর ও কবরই দেখতে পাচ্ছি,অন্যকিছু দেখছি না’’, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, তার এ কথা নবী করীমের পবিত্র বাণীর প্রতি ঠাট্টা ও অস্বীকৃতির নামান্তর হলো, যা কুফর বৈ-কিছুই নয়।
[গাউসিয়া তরবিয়াতী নেসাব, পৃ.৩৪-৩৬]