মোহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ আল মাহদী । ফাতেমা’(রাঃ) র সূত্রধরে নবী (সাঃ) এর বংশধর হবেন ।
হজরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, মাহদী আমার আহলে বাইতের মধ্যে থেকে হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে একরাতে খিলাফতের যোগ্য করবেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস: ৪০৮৫) (মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল মাহদি কে আল্লাহ তাআলা এক রাত্রে যোগ্য শাসক বানিয়ে দেবেন। )
নবী (সাঃ) বলেনঃ ‘‘তোমাদের গুপ্তধনের নিকট তিনজন লোক ঝগড়া করবে। প্রত্যেকেই হবে খলীফার পুত্র। কেউ তা দখল করতে পারবেনা। অতঃপর পূর্বের দিক থেকে কালো পতাকাধারী একদল সৈনিক আসবে। তারা ব্যাপক হত্যাকান্ড চালাবে। তোমরা যখন তাদেরকে দেখতে পাবে তখন তাদের নেতার হাতে বায়আত করবে। যদিও বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে উপস্থিত হতে হয়। কেননা তিনি হলেন আল্লাহর খলীফা মাহদী’’।(সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
এখানে ‘খলীফা সন্তান’ অর্থ সবাই বাদশা বা শাসকের সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে।
মৃত্যুবরণকারী খলীফা কোন এক সৌদি শাসক হবে, যার মৃত্যুর পর তাঁর রাজত্ব নিয়ে মতবিরোধ ঘটবে। আর তখনই ইমাম মাহদী (আঃ) এর আত্মপ্রকাশ ঘটবে এবং কঠিন লড়াই চলবে ।
জিলক্বদ মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে।
লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত ইমাম মাহদি(আঃ) এর কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি (আঃ) কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি। মানুষ ইমাম মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। ইমাম মাহদি(আঃ) বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও ‘মাহদি’, আসমানেও ‘মাহদি’।
তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে,
“বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন”। (আল মু’জামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬)
বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে আল্লাহ তায়ালা ভূগর্ভে ধসিয়ে দেবেন, বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার ‘আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ মুসলমানগণ) ও ইরাকের ‘আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিগণ) মক্কায় এসে ইমাম মাহদি (আঃ) এর নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল ‘কালবের যুদ্ধ’। যে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর ইমাম মাহদী (আঃ) ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন।(আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)
ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে (কালেমার একক পতাকার ছায়াতলে একক ভূখণ্ডে) সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে, শত্রুদের সাথে যুদ্ধ, রোমানদের সাথে মহাযুদ্ধ, আন্তাকিয়ার যুদ্ধ, আমকের যুদ্ধ, ফোরাতের তীরে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের যুদ্ধ, কুস্তুন্তুনিয়া ( তুরস্কের ইস্তাম্বুলে) রক্তপাতহীন যুদ্ধসহ অনেক ছোটবড় যুদ্ধ তাঁর খেলাফতকালে অনুষ্ঠিত হবে।
ইমাম মাহদি(আঃ) এর আমলে “সুফিয়ানির আবির্ভাব হবে দামেস্কের দিক থেকে। তার সহচরদের মধ্যেও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। সে বহু সংখ্যক মানুষ হত্যা করবে এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। মোকাবেলা করার জন্য বনু কায়েস গোত্রের লোক তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে তাদের সবাইকে হত্যা করে ফেলবে। তারপর ইমাম মাহদী (আঃ)এর বিরুদ্ধে (সুফিয়ানি) একটি বাহিনী পাঠাবে এবং পরাজিত হবে। এরপর সে আরেকটি বাহিনী পাঠাবে এবং মরুভূমিতে ভূমিধ্বসে ধ্বংস হয়ে যাবে। শুধুমাত্র একজন লোক বেঁচে থাকবে যে কিনা (ভূমিধ্বসের) এই সংবাদ পৌঁছে দিবে”।(ইবনে হিব্বান, তিরমিজি, আবু ইয়েলী, তাবরানী, আল ফিতান, মুসতাদরাকে হাকিম)
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে”। (সুনানে আবি দাউদ, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)
আলগুতা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী (আঃ) এর হাতে থাকবে।
এবং সমস্ত পৃথিবী জুড়ে চলবে তার শাসন । সর্বত্র উড়বে ইসলামের পতাকা ।
তিনি মুসলমানদের খলীফা হয়ে বিচার-ফয়সালা করবেন। তাঁর যামানায় মুসলমানদের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি ও নেয়া’মত বিরাজ করবে। মানুষের ধন সম্পদের কোন অভাব থাকবে না ।
আবু সাঈদ খুদরী (রঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সঃ)বলেন,
আখেরী যামানায় আমার উম্মাতের ভিতরে মাহদীর আগমণ ঘটবে। তাঁর শাসনকালে আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, যমিন প্রচুর ফসল উৎপন্ন করবে, তিনি মানুষের মাঝে সমানভাবে প্রচুর সম্পদ বিতরণ করবেন, গৃহপালিত পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং উম্মাতে মুহাম্মাদী (সাঃ)এর সম্মাান বৃদ্ধি পাবে।
(মুস্তাদরাক আল হাকিম হাদীস নং- ৭১১)
অতঃপর কোন একদিন তিনি দামেস্কের মসজিদে ফজরের নামাযের সময় ঈসা (আঃ) এর সাক্ষাৎ লাভ করবেন। (ইশা (আঃ) আকাশ থেকে অবতীর্ণ হবেন)
প্রথমে তিনি ঈসা (আঃ) কে নামাযের ইমামতি করার অনুরোধ জানাবেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলে স্বয়ং ইমাম মাহদী ইমামতি করবেন। ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ইমাম মাহদীর পিছনে মুক্তাদী হয়ে নামায আদায় করবেন। অতঃপর তিনি ঈসা (আঃ) এর সাথে যোগ দিয়ে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বের হবেন এবং দাজ্জাল হত্যার কাজে ঈসা (আঃ) কে সহায়তা করবেন।
উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মাহদী (খলীফা হওয়ার পর) সাত বছর বেঁচে থাকবেন। এরপর মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলমানগণ তার জানাযা পড়বে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪২৮৬) অন্য বর্ণনা মতে তিনি নয় বছর অবস্থান করবেন।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২৮৭)
ইমাম মেহেদী আলাই সাল্লাম আত্মপ্রকাশ করার পর ৭/৯ বছর সমস্ত পৃথিবীর উপর রাজত্ব করবেন ।
(তিনার শাসনকাল নিয়ে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায় )
আহ কতইনা সুন্দর হবে তার শাসন কাল, কতইনা সুখের হবে সে সময়, কতই না আনন্দ থাকবে মুসলমানগন । যে দিকে তাকাবে শুধু তাওহীদের বাণী ও ইসলামের পতাকা দেখতে পাবে ।
আল্লাহু ওয়ারাসুলূহু’ আলাম ।
কি হবে