আত্মার ব্যাধির চিকিৎসা ফরয
মানুষের শরীরের মতো মানুষের অন্তরও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেসব রোগের একেকটি এতো বেশি ক্ষতিকর যে, একটি রোগই যেকোনো মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য অন্তর বা আত্মার রোগের চিকিৎসা করা আমাদের সকলের জন্য ফরজ ।
কুরআন পাকে আল্লাহ্ তাআ’লা আত্মার রোগের চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন–⤵
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا
অর্থ:- যে ব্যক্তি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করাবে, সে সফলকাম হবে। [সূরা শামস : আয়াত ৯]
▶এ আয়াতের তাফসীরে হাসান বসরী (রহ.) বলেন-⤵
معناه: قد افلح من زكى نفسه فاصلحها و حملهاعلى طاعة الله. تفسير المظهرى247/10
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই সফলকাম হবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করাবে তথা আত্মাকে সংশোধন করাবে এবং আত্মাকে আল্লাহর আনুগত্যের উপর উদ্বুদ্ধ করবে। [তাফসীরে মাজহারী: ১০/২৪৭]
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ্ তাআ’লা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করাতে বলেছেন। বুঝা গেলো যে, আত্মা একা একা পরিশুদ্ধ হয় না, বরং কোনো আহলে দ্বীন বুযূর্গের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করাতে হয়। তাই সাহাবায়ে কিরাম (রাযি:) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাধ্যমে নিজেদের আত্মার চিকিৎসা করিয়েছেন, পরিশুদ্ধ করিয়েছেন। নিজের আত্মার চিকিৎসা নিজে করেননি এবং এটা সম্ভবও নয়। শরীরের রোগের চিকিৎসার জন্য যেমনিভাবে আমরা ডাক্তারের দ্বারস্থ হয়ে থাকি, ঠিক তেমনিভাবে আত্মার রোগের চিকিৎসার জন্য যারা আত্মার রোগের পরামর্শপত্র দেন তাদের দ্বারস্থ হতে হবে। হ্যাঁ! পার্থক্য শুধু এতোটুকু যে, আত্মার রোগের চিকিৎসা করা ফরয, আর শরীরের রোগের চিকিৎসা করা সুন্নাত । সুতরাং, আমাদের জন্য ফরয হলো: কোনো হক্কানী-রব্বানী নায়েবে নবীর মাধ্যমে নিজ আত্মার চিকিৎসা করানো।
আত্মার রোগের চিকিৎসা না করেই মারা যাওয়া ব্যক্তির অবস্থো ভয়াবাহ হবে
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন–⤵
وقد خاب من دسها
অর্থ:- আর ব্যর্থকর্ম হবে সে, যে আত্মাকে (গুনাহের মধ্যে) ধ্বংসিয়ে দিবে। [সূরা শামস: ১০]
তাছাড়া, ১৮নং হাদীসেও তাদের পরিণতির কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহওয়ালাদের সুহবতে এসে আত্মার চিকিৎসা না করালে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের অনুসরণ করতে বাধ্য হয়ে যাবে।
নিম্নবর্ণিত হাদীসে আত্মার রোগের চিকিৎসা না করার কারণে শহীদ, আলেম ও দানবীরদের করুণ অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে:
হযরত আবূ হুরাইরা (রাযি:) বলেন, নবীজি (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে সে হবে একজন শহীদ (ধর্ম-যুদ্ধে প্রাণদানকারী)। তাকে আল্লাহ্ তাআ’লার দরবারে আনা হবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাআ’লা তাকে (প্রথমে দুনিয়াতে প্রদত্ত) নিয়ামাতসমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন; আর সেও তা (নিয়ামাত প্রাপ্তির কথা) স্বীকার করবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি এসব নিয়ামাতের বিনিময়ে দুনিয়াতে কী আমল করেছো? জবাবে সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি।
তখন আল্লাহ্ তাআ’লা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি আমার সন্তুষ্টির জন্য লড়াই করোনি, বরং তুমি এজন্য লড়াই করেছো যে, তোমাকে বীর বলা হবে। আর তোমাকে তা বলাও হয়েছে। এরপর তার ব্যাপারে (ফেরেশতাদেরকে) আদেশ করা হবে। ফলে তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে। এরপর এমন ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, যে নিজে দীনী ইলম শিখেছে এবং অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে, আর সে কুরআন শরীফও পড়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাকেও দুনিয়ার নিয়ামাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সেও তা স্বীকার করবে। অতঃপর আল্লাহ্ তাআ’লা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এসব নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য তুমি কী আমল করেছো? উত্তরে সে বলবে, আমি ইলম শিখেছি এবং অপরকেও তা শিখিয়েছি। আর তোমার সন্তুষ্টির জন্য কুরআন মাজীদ পড়েছি।
আল্লাহ্ তাআ’লা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি তো এজন্য ইলম শিখেছো যাতে তোমাকে আলেম বলা হয়, আর এজন্য কুরআন পড়েছো যাতে তোমাকে ক্বারী বলা হয়। আর তা তোমাকে বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে। ফলে তাকে উপুড় করে টানতে টানতে জাহান্নামে ফেলে দেয়া হবে। এরপর এমন ব্যক্তির বিচার শুরু হবে যাকে আল্লাহ্ তাআ’লা সবধরণের ধন-সম্পদ দান করে বিত্তবান বানিয়েছিলেন। তাকে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্ তাআ’লা তাকে প্রদত্ত নিয়ামাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সেও তা স্বীকার করবে। তখন আল্লাহ্ তাআ’লা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এসমস্ত নিয়ামাতের বিনিময়ে তুমি আমার জন্য কী করেছো? সে বলবে, যেসব ক্ষেত্রে ধন-সম্পদ ব্যয় করা তুমি পছন্দ করো তার একটিও আমি হাতছাড়া করিনি।আল্লাহ্ তাআ’লা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তুমি তো এজন্য দান করেছো, যাতে তোমাকে দানবীর বলা হয়। আর তা তোমাকে বলাও হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে আদেশ করা হবে। ফলে তাকে উপুড় করে টানা হবে। অবশেষে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [সহীহ মুসলিম হা.নং ১৯০৫]
আত্মার রোগের চিকিৎসা না করার কারণেই মূলত উপরিউক্ত শহীদ, আলেম ও দানবীরের এই করুণ পরিণতি হয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যেকের উচিত হলো, নিজ আত্মার চিকিৎসার ব্যাপারে যত্নবান হওয়া কোনো হক্কানী পীর বা শাইখকে নিজ আত্মার অবস্থা জানিয়ে আত্মার পরিশুদ্ধি করানো।