বেতর নামায কত রাকাত ১/৩/৫ ?

বেতর নামায কত রাকাত ?

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের নামায তিন রাকাত পড়তেন, এক রাকাত পড়া প্রমাণিত নয়। তদ্রূপ যেসব রেওয়ায়েতে তিন রাকাতের অধিক, যথা পাঁচ, সাত বা নয় রাকাত পড়ার কথা বলা হয়েছে সেখানেও মূল বিতর তিন রাকাত। বর্ণনাকারী পূর্বের বা পরের রাকাতসমূহ মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলে বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামায তিন রাকাত পড়তেন তা নীচের হাদীস সমূহ দ্বারা প্রমাণিত।

১. আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন, ‘রমযানুল মুবারকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামায কীরূপ হত?’ উম্মুল মুমিনীন বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে ও রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন-এত সুন্দর ও দীর্ঘ সে নামায, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অতঃপর চার রাকাত পড়তেন-এরও দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে চেয়ো না। এরপর তিন রাকাত পড়তেন । (সহীহ বুখারী ১/১৫৪; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬)

২. সা’দ ইবনে হিশাম বলেন, (উম্মুল মুমিনীন) আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।’ عن سعد بن هشام أن عائشة حدثته أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان لا يسلم في ركعتي الوتر. (সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮)

৩. ইমাম হাকেম রাহ. সা’দ ইবনে হিশামের বিবরণ এভাবে বর্ণনা করেছেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না।’ كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسلم في الركعتين الأوليين من الوتر. هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه (আলমুস্তাদরাক ১/৩০৪)


৪. অন্য সনদে বিবরণটি এভাবেও বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামায তিন রাকাত পড়তেন এবং শুধু শেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। আমীরুল মু’মিনীন উমর রা. এই নিয়মে বিতর পড়তেন এবং তাঁরই সূত্রে আহ্লে মদীনা এই নিয়ম গ্রহণ করেছে।’ كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث، لا يسلم إلا في آخرهن. وهذا وتر أمير المؤمنين عمر بن الخطاب رضي الله عنه، وعنه أخذه أهل المدينة. (আলমুস্তাদরাক)


৫. মুসনাদে আহমদ কিতাবে (৬/১৫৬) বিবরণটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার নামায আদায় করে ঘরে আসতেন এবং দুই রাকাত নামায পড়তেন। এরপর আরো দুই রাকাত পড়তেন, যা পূর্বের নামাযের চেয়ে দীর্ঘ হত। অতঃপর তিন রাকাত পড়তেন, যা মাঝখানে আলাদা করতেন না। এরপর বসে বসে দুই রাকাত নামায পড়তেন। রুকু-সেজদাও সেভাবেই করতেন। أن رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا صلى العشاء دخل المنزل ثم صلى ركعتين. ثم صلى بعدهما ركعتين أطول منهما، ثم أوتر بثلاث، لا يفصل بينهن ثم صلى ركعتين وهو جالس، يركع وهو جالس ويسجد وهو جالس.

৬. আবদুল আযীয ইবনে জুরাইজ বলেন, ‘আমি (উম্মুল মু’মিনীন) আয়েশা সিদ্দীকা রা.কে জিজ্ঞাস করেছি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামাযে কী কী সূরা পাঠ করতেন? উম্মুল মু’মিনীন বলেছেন, তিনি প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ ও ‘মুআওয়াযাতাইন’ (ফালাক ও নাস) পাঠ করতেন ।’ عن عبد العزيز بن جريج قال سألت عائشة رضي الله عنها بأي شيء كان يوتر رسول الله صلى الله عليه وسلم؟ قال يقرأ في الأولى بسبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية بقل يا ايها الكافرون وفي الثالثة بقل هو الله احد والمعوذتين. قال أبو عيسى هذا حديث حسن غريب. (সুনানে আবু দাউদ ১/২০১; সুনানে তিরমিযী পৃ. ৬১; সুনানে ইবনে মাজাহ পৃ. ৭৩; মুসনাদে আহমদ ৬/২২৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক)

৭. ‘আমরা বিনতে আবদুর রহমান উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর নামায তিন রাকাত পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতেন ।’ عن عمرة عن عائشة رضي الله عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يوتر بثلاث. يقرأ في الركعة الأولى بسبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا ايها الكافرون وفي الثالثة قل هو الله احد وقل اعوذ برب الفلق وقل اعوذ برب الناس. هذا حديث صحيح على شرط الشيخين ولم يخرجاه. وقال الذهبي رواه ثقات عنه، وهو على شرط خ ـ م. (আলমুসতাদরাক ১/৩০৫)

৮. মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর পিতা আলী ইবনে আবদুল্লাহ থেকে, তিনি তাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয্যাত্যাগ করলেন, অতঃপর মিসওয়াক করলেন এবং দুই রাকাত করে ছয় রাকাত নামায আদায় করে শয্যাগ্রহণ করলেন। কিছুক্ষণ পর পুনরায় শয্যাত্যাগ করলেন, মিসওয়াক করলেন এবং দুই রাকাত করে ছয় রাকাত আদায় করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর আরো দুই রাকাত (অর্থাৎ ফজরের সুন্নত) আদায় করলেন।’_ عن محمد بن علي عن أبيه عن جده عن النبي صلى الله عليه وسلم أنه قام من الليل فاستن ثم صلى ركعتين ثم نام ثم قام فاستن ثم توضأ فصلى ركعتين حتى صلى ستا ثم أوتر بثلاث وصلى ركعتين. (সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯)

৯. ইয়াহইয়া ইবনুল জাযযার রাহ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে আট রাকাত নামায পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর পড়তেন। অতঃপর ফজরের নামাযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন।’ عن يح ي بن الجزار عن ابن عباس رضي الله عنهما قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي من الليل ثمان ركعات ويوتر بثلاث ويصلي ركعتين قبل صلاة الفجر. (সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; শরহু মাআনিল আছার তহাবী ১/১৪০)

হাদিসগুলো পড়ার পর আশা করি আপনাদের দালনা পরিস্কার হয়েছে ।

Spread the love

Leave a Comment